Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সোনামুখীর বিডিও বদলি, প্রশ্ন তৃণমূলেই

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই বিডিও-র বদলির নির্দেশের পিছনে দলেরই এক গোষ্ঠীর চক্রান্ত আছে বলে অভিযোগ করেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি। ওই বিডিও-কে রেখে দেওয়ার জন্য দলনেত্রীর কাছে সওয়ালও করেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ পেয়ে যারপরনাই রুষ্ট হন। তার জেরে আটকেও যায় বাঁকুড়ার রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাসের বদলি।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই বিডিও-র বদলির নির্দেশের পিছনে দলেরই এক গোষ্ঠীর চক্রান্ত আছে বলে অভিযোগ করেছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি। ওই বিডিও-কে রেখে দেওয়ার জন্য দলনেত্রীর কাছে সওয়ালও করেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ পেয়ে যারপরনাই রুষ্ট হন। তার জেরে আটকেও যায় বাঁকুড়ার রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাসের বদলি। কিন্তু, এ বার নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাঁকুড়ারই সোনামুখীর বিডিও বদলির ঘটনাকে ঘিরে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে জেলার প্রশাসনিক মহলে।

রাইপুরের মতো এ ক্ষেত্রেও বদলির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শাসক দলের অন্দরেই। অনেকেরই অভিযোগ, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের ‘কোপ’-এ সময়ের আগেই বিডিও পদ খোয়াতে হল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মেয়াদ না ফুরোলেও রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস ও সোনামুখীর বিডিও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের বদলির নির্দেশ একই সঙ্গে জেলায় এসেছিল। দু’জনকেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলির নির্দেশ দিয়েছিল ‘রাজ্য কর্মিবর্গ এবং প্রশাসনিক সংস্কার দফতর’ (পার্সোনাল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস ডিপার্টমেন্ট)। দীপঙ্করবাবুকে মুর্শিদাবাদ এবং বিশ্বজিৎবাবুকে বর্ধমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বাঁকুড়ার পাশাপাশি ওই দুই জেলাতেও বদলির নির্দেশিকা চিঠি পৌঁছে গিয়েছিল। এক অর্থে বিডিও থেকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া পদোন্নতিরই সামিল।

কিন্তু, গোল বাধল গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন বিকেলে পুরুলিয়ার হুড়ায় প্রশাসনিক জনসভা সেরে বাঁকুড়ার শুশুনিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কাছে দীপঙ্করবাবু বদলির ব্যাপারে তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি শান্তিনাথ মণ্ডল। বৈঠক শেষ সহসহাভপতি জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী রাইপুরের বিডিও-র বদলি আটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনা হল, এর পরেই দীপঙ্করবাবুর বদলি আটকে যায়। সোনামুখীর বিডিও বিশ্বজিৎবাবুকে অবশ্য বদলি হতেই হচ্ছে। সোমবার বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “রাইপুরের বিডিও বদলি হচ্ছেন না। সোনামুখীর বিডিও বর্ধমানের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন।”

তবে, বিডিও হিসেবে মেয়াদ শেষের আগেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে বিশ্বজিবাবুর উন্নীত হওয়াকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনিক মহলের কর্তারা জানাচ্ছেন, বিডিওদের বদলি বা পদোন্নতি হয় তাঁদের ‘ব্যাচ’ অনুসারে। সাধারণত বছরের দু’টি সময়ে (মার্চ ও অগস্টে) ব্যাচ অনুসারে বিডিও-দের বদলি হয়ে থাকে রাজ্য জুড়ে। চার থেকে পাঁচ বছর বিডিও পদে থাকার পরে এক একটি ব্যাচের বিডিও-রা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন। এই জায়গাতেই প্রশ্ন উঠছে বিশ্বজিৎবাবুর ক্ষেত্রে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বজিৎবাবু সোনামুখীতে বিডিও হিসেবে যোগ দেন। তাঁর অন্য ব্যাচমেটরা বিডিও পদেই রয়েছেন। তবে মার্চের মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মে তাঁদের অন্য জেলায় বিডিও হিসেবেই বদলি হওয়ার কথা। দীপঙ্করবাবু ও বিশ্বজিৎবাবুর ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম হল। দু’জনকেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি করা হয়েছিল। এই ঘটনাকে পদোন্নতি জানিয়ে জেলাশাসক বলেন, “সময়ের আগে প্রোমোশন যে কারওর ক্ষেত্রেই হতে পারে। এটা তেমন অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

সোনামুখীর এক তৃণমূল নেতার কিন্তু অভিযোগ, “বিশ্বজিৎবাবু সোজাসাপটা কথা বলেন। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না। আ তা করতে গিয়ে আমাদের দলেরই কিছু জনপ্রতিনিধির রোষের মুখে পড়েন তিনি। দলের ওই অংশই পরিকল্পনা করে তাঁকে সময়ের আগে বিডিও পদ থেকে সরিয়ে দিল!” উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি ঘটনায় শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছিল বিশ্বজিৎবাবুকে। যার অন্যতম গত লোকসভা ভোটের সময় সোনামুখীর বুথে ছাপ্পাভোট কাণ্ড। গত বছর ৭ মে সোনামুখীর সাহাপুর বুথে দলবল নিয়ে ঢুকে ভোটকর্মীদের মারধর করে ছাপ্পাভোট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহার বিরুদ্ধে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আলোড়ন পড়ে রাজ্য রাজনীতিতে। দীপালিদেবীর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন বিডিও বিশ্বজিৎবাবু। শাসকদলেরই একাংশের মতে, এই ঘটনার পর থেকেই দলের একটা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন বিশ্বজিৎবাবু।

এ ছাড়াও, সোনামুখীর রাধামোহনপুরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বছরে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে থানায় এফআইআর করেছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। এই রকম নানা অভিযোগের ভিত্তিতে শাসকদলের একাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।

আর জেরেই সোনামুখীর বিডিও-র এই ‘অকাল বদলি’ বলে দাবি করেছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ সরব হলে যেনতেন প্রকারে তাঁকে সরিয়ে দেওয়াই হচ্ছে তৃণমূলের নীতি। শুধু রাইপুর বা সোনামুখী কেন, রাজ্যের আরও অনেক বিডিও-কেও নিয়ম লঙ্ঘন করে বদলি করে দেওয়ার ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনার খারাপ প্রভাব প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের মধ্যেও পড়ছে।” নিজের বদলি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বিশ্বজিৎবাবু। তবে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-এর দাবি, প্রশাসনিক কাজে দলীয় ভাবে তৃণমূল কখনও হস্তক্ষেপ করে না। এ-সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE