আজ ক্লাস টু-র ছোট্ট মেয়েটাও জানে সেলফির মানে। মোবাইলকে কোন পজিশনে ধরে কী ভাবে দাঁড়িয়ে কোন অপশনে ক্লিক করলে, তার ছবি ভাল হতে পারে সে সবও অজানা নয় তার।
মানব জীবনের হেঁশেল থেকে শোওয়ার ঘর সর্বত্র এখন ফটোগ্রাফির অবাধ বিচরণ। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে অজান্তেই জড়িয়ে যাচ্ছে ফটোগ্রাফি। মেসেঞ্জার, হোয়াটসআপের মেসেজে প্রশ্নের উত্তরে, লেখার জায়গায় আসছে ছবি। ছবি দেখে প্রশ্নকর্তা বুঝে নিচ্ছেন উত্তরদাতা কোথায় আছেন? কী করছেন? কী পড়েছেন আজ? সবার হাতে উন্নত ক্যামেরা দেওয়া মোবাইলই মনে হয় এই ফটোগ্রাফি নির্ভর জীবনযাত্রার একটা প্রধান কারণ। আর একটা বড় কারণ মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া। ছবি তুলেই সঙ্গে সঙ্গে আপলোড। তৎক্ষণাৎ বহু মানুষের মতামত, লাইক, কমেন্ট পাওয়ার নেশাও আজ আট থেকে আশি সব মানুষকে করে তুলছে ফটোগ্রাফার। একটা সময়ে যে ফটোগ্রাফির শখ ছিল বড়লোকের বিলাসিতা, আজ তা সকলের অভ্যেস। শিল্পীর কাছে তাঁর সৃষ্টি সন্তানতুল্য। অনেক প্রবীণ ফটোগ্রাফারই মনে করেন, সেই সন্তান জন্মের আনন্দ ছিল ফ্লিম ক্যামেরায়। যত ক্ষণ না নেগেটিভ ডেভলপ হচ্ছে, তত ক্ষণ কৌতূহল, কী তুললাম? আর কী দাঁড়াল সেটা জানার। একটা ফ্লিমে ৩৫টা ছবি হত। তাই সাধারণ ঘরের শখের ফটোগ্রাফারদের অত্যন্ত বুঝে মেপে ছবি তুলতে হত খরচ বাঁচানোর জন্য। এই কষ্টের ফটোগ্রাফি সাধনাই হয়তো আরও গভীর ভাবে ফটোগ্রাফিকে ভালবাসতে শেখাত তখন। যেখানে কষ্ট আছে সেখানেই তো প্রাপ্তির আনন্দ। ভালবাসতে গেলে তো প্রথমে তাকে ভাল করে জানতে হবে, বুঝতে হবে।
আর আজ ডিজিটাল যুগে একেবারেই তোলা যাচ্ছে হাজার হাজার ছবি। সঙ্গে সঙ্গে দেখে নেওয়া যায় কী উঠল। পছন্দ না হলে মুছে দিয়ে নতুন ছবি। ক্যামেরা বা মোবাইল কেনার প্রাথমিক খরচ বাদে ছবি তোলার খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। ডিজিটাল ক্যামেরার হাত ধরে আজ ফটোগ্রাফি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। মোবাইলে ক্যামেরা আসার পর তা এখন সবার নাগালের মধ্যে। আগের মতো সেই নেগেটিভ ডেভলপ না হওয়া পর্যন্ত দেখতে না পাওয়ায় কৌতূহল, উত্তেজনা আর অপেক্ষা— সবটাই হারিয়ে গিয়েছে ডিজিটাল যুগে। ডার্ক রুম আজ কম্পিউটারের সিপিইউ-এ বন্দি। প্রেস ফটোগ্রাফি থেকে পিকটোরিয়াল সবেতেই থাবা বসাচ্ছে মোবাইল। কোনও ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে সেই জায়গা ঘিরে ফেলছে মোবাইল ক্যামেরা। তেমনই আবার সুন্দর কিছু চোখে পড়লে ধরে রাখার চেষ্টাও সেই মোবাইলেই। তাই প্রশ্নটা এখানেই— সহজে চটজলদি হাতের নাগালে আসা এ কালের ফটোগ্রাফির জন্য কি ‘ফটোগ্রাফি’ শব্দটা ধীরে ধীরে সস্তা হয়ে যাচ্ছে? না কি তার সম্মান বাড়ছে দিনে দিনে?