Advertisement
০১ মে ২০২৪
Smriti Mandhana

নামভূমিকায়: ফেব্রুয়ারি ২০২৩

তিনি বলেছিলেন, মেয়েদের আইপিএল শুরু হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁর কথা সত্যি হল, এবং প্রতিযোগিতার সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হলেন স্মৃতি মন্ধানা।

A Photograph of Smriti Mandhana

স্মৃতি মন্ধানা। ফাইল ছবি।

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৮
Share: Save:

আমার নিজের স্মৃতি বেশ দুর্বল। সুদূর ভবিষ্যতে কী হবে, তাও আমি খুব আগে থেকে ভাবতে পারি না।” ক’দিন আগেই বললেন স্মৃতি মন্ধানা— দেশে শুরু হতে চলা মেয়েদের ক্রিকেট আইপিএলের সবচেয়ে দামি অর্থাৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।

স্মৃতির স্মৃতি দুর্বল হতে পারে, সবার তো নয়। অনেকেরই স্পষ্ট মনে আছে, বছর তিনেক আগে বিবিসির পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ভারতে মেয়েদের ক্রিকেটের আইপিএল হওয়া সময়ের অপেক্ষা, বড় জোর বছর দুয়েক।

ভারতের মেয়েরাও যে ক্রিকেট খেলে, বিশ্ব তথা ভারতের আমজনতাকে সেই বুঝিয়ে দেওয়ার শুরুটা অবশ্য হয়েছিল বছর ছয়েক আগে। সে বছর সবাইকে চমকে দিয়ে ইংল্যান্ডে মেয়েদের এক দিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে যায় মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামীদের ভারত। সেই দলের কয়েক জনের ছাড়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে অধিকাংশের নামই বেশির ভাগ মানুষ জানতেন না।

বিশ্বকাপের পরে সেই মহিলা ক্রিকেটারদের নিয়েই শুরু হয় গণ পরিসরে চর্চা। নজরকাড়া পারফর্ম্যান্সের জেরে জনপ্রিয়তা এমনই বাড়ে, বিক্রি হতে থাকে স্মৃতি, হরমনপ্রীতদের ছবি, জার্সি! তার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে বিজ্ঞাপনী বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে তাঁদের পিছনে দৌড়তে শুরু করে নানা ব্র্যান্ড। সেই দৌড়েরই একটা মাইলফলক এ বার প্রথম হতে চলা মেয়েদের আইপিএলে স্মৃতি মন্ধানাকে বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর-এর ৩.৪ কোটি টাকায় কিনে নেওয়া। বৃহস্পতিবার যাদের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, সেই অস্ট্রেলিয়ার এলিসা পেরি, অ্যাশলে গার্ডনারদেরও নিলামের অঙ্কে হারিয়ে দিয়েছেন স্মৃতি।

হারিয়েছেন তো সমাজের ছকে বেঁধে দেওয়া কত নিয়মকেও! মহারাষ্ট্রের ছোট্ট জনপদ সাংলি থেকে উঠে এসে যে কোনও মেয়ে দেশের জন্য ক্রিকেট খেলবে, তা ওই এলাকার কেউ, এমনকি স্মৃতির অনেক আত্মীয়স্বজনও ভাবেননি। তবে ভেবেছিলেন স্মৃতির বাবা শ্রীনিবাস। তাই তাঁর ছেলে, মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব উনিশ স্তরে খেলা শ্রবণকে দেখে যখন বোন স্মৃতি ক্রিকেটকে বেছে নিল, তখন থেকেই টানা উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন শ্রীনিবাস। দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের পরীক্ষা না দিয়ে যখন ক্রিকেটকেই বেছে নেন স্মৃতি, তখন আত্মীয়স্বজনেরাও অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু স্মৃতির লক্ষ্য ছিল স্থির। সেই লক্ষ্যে স্থির থেকেই নিজের সঙ্গে সাংলির নাম বিশ্বমঞ্চে পরিচিত করে দিয়েছেন স্মৃতি। বিজয় হজারের জন্মস্থান হলেও যে সাংলি এখন স্মৃতির বেড়ে ওঠার শহর হিসেবেই পরিচিত।

২০১৭-র ফাইনাল দেশে পরিচিতি দিয়েছিল মেয়েদের ক্রিকেটকে। সেই পরিচিতির সিঁড়ির ধাপ বেয়েই মেয়েদের ক্রিকেটে ঢোকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। ওই বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে তখনকার তারকা মিতালির খানছয়েক স্পনসর ছিল। বিশ্বকাপের পরে তা পঁচিশ ছাড়িয়ে যায়। মিতালি রাজের বায়োপিকে তাপসী পান্নু, ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিকে অনুষ্কা শর্মার মতো তারকাদের অভিনয় মেয়েদের ক্রিকেটের সেই অর্থনৈতিক সম্ভাবনারই প্রকাশ। স্মৃতির নিজের সত্তাও তো পুঁজি হয়েছিল অর্থনীতির। চশমা চোখে খেলা শুরু করা স্মৃতি যখন চশমা ছেড়ে দিলেন, তখন সেই ‘আত্মবিশ্বাস’কে পুঁজি করেই বিজ্ঞাপন বানায় এক কন্ট্যাক্ট লেন্স কোম্পানি।

২০১৭-র ওই দলে এখনকার অধিনায়ক হরমনপ্রীত কউর, সহ-অধিনায়ক স্মৃতি মন্ধানারা ছিলেন একেবারে তরুণ। বছর কুড়ির তরুণী স্মৃতি ছ’বছর আগে কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন বিসিসিআই বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের জন্য যা ম্যাচ ফি দেয়, তাঁদের তা দেওয়া হবে? এখন যখন স্মৃতি, হরমনপ্রীতরা মধ্যগগনে, তখন গত বছর অক্টোবরের ওই ঘোষণা ছিল মেয়েদের আইপিএলের মতোই আর একটি ঐতিহাসিক ধাপ। ওই ঘোষণার পরে স্মৃতি বলেছেন, “যে সব বাবা-মায়েরা মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে দিতে দ্বিধা করতেন, এই ঘোষণা তাঁদের সেই দ্বিধা দূর করবে।”

স্মৃতির নিজের চরিত্রেও দ্বিধা ব্যাপারটা নেই বলেই মনে হয় তাঁর নানা বক্তব্য থেকে। সেগুলো বরাবরই তাঁর বাঁ-হাতি কভার ড্রাইভের মতোই স্বচ্ছ, স্পষ্ট, সাবলীল। তিনি ব্যক্তিগত কৃতিত্ব বা দেশের কৃতিত্বকে খেলা এবং সেই খেলায় মেয়েদের ভূমিকার মধ্যে প্রতিস্থাপিত করেছেন। টি২০ বিশ্বকাপের আগেও এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “আমরা আরও কয়েকটা ট্রফি জিততে চাই, যাতে আরও অনেক মেয়ে ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত হয়।” এ ভাবে সাফল্যকে গণ্ডির বাইরে বার করে তার সর্বজনীন রূপ দেওয়ার জন্যও স্মৃতিকে মনে রাখবে ইতিহাস।

সেই গণ্ডি শুধু দেশের সীমানাতেই আবদ্ধ থাকেনি। গত বছর মেয়েদের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পরে ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ পড়শি দেশের অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের কন্যাসন্তানের সঙ্গে ছবি দিয়ে স্মৃতি সমাজমাধ্যমে বিসমাহ-র অকুণ্ঠ তারিফ করে লিখেছিলেন, “মা হওয়ার ছ’মাসের মধ্যে মাঠে ফিরে আসা সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়। বিসমাহ গোটা বিশ্বের মহিলা খেলোয়াড়দের জন্য একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।” নিজের অনুভূতিকে এ ভাবে গণ্ডির বাইরে বার করে আনার জন্য, আরও অনেককে প্রেরণা দেওয়ার জন্যই স্মৃতির এই সত্তাকে প্রয়োজন বর্তমানের, ভবিষ্যতের। অনেক দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Smriti Mandhana Indian Women Cricket team WPL 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE