এ যেন ভাবের ঘোরে চুরি! করোনা নিয়ে মানুষ যখন নিজেদের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে ব্যস্ত, দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন, সেই সুযোগে দেশের ১৬টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি চুরি করে রেলপথ, জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। ওই সব জঙ্গলের বুক চিড়ে যাবে নতুন রেলপথ ও সড়ক। জঙ্গলের লাগোয়া জমিতে গড়ে উঠবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ওই ১৬টি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে যেমন একাধিক ব্যাঘ্র প্রকল্প রয়েছে, তেমনই রয়েছে দুটি জাতীয় উদ্যানও।
লকডাউনে আমাদের দেশের মতো পৃথিবীর সর্বত্র দূষণ গিয়েছে কমে। জঙ্গলের পশুপাখিরা নিশ্চিন্তে শুধু দিন কাটাচ্ছে তাই নয়, পর্যটকদের মতো লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে জঙ্গলের কোনও কোনও বাসিন্দাকে। শিলিগুড়ি শহর পরিদর্শন করে গিয়েছে ধনেশ পাখিরা, নয়ডা শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নীলগাই, দিল্লির রাস্তায় নাচছে ময়ূর, কলকাতা শহরে দেখা মিলছে বসন্ত বাউরির। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। আর সেই সময়েই দেশের ১৬টি অভয়ারণ্যের মধ্যে ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পকে ছাড়পত্র দিতে বৈঠকে বসেছিল জাতীয় বন উপদেষ্টা পর্ষদের স্ট্যান্ডিং কমিটি। আর সেখানেই কারও কোনও আপত্তি ছাড়াই সিদ্ধান্ত গেল পশুপাখিদের বিরুদ্ধে।
বন মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ৭ এপ্রিল জাতীয় বন উপদেষ্টা পর্ষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকটি হয় ভিডিয়ো কনফারেন্সে। পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভডেকর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মোট ৩১ টি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আনা হয়েছিল। তার মধ্যে ১৬টি প্রস্তাব ছিল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করতে পারে এমন উন্নয়নমূলক কাজের অনুমোদন সংক্রান্ত। তেলঙ্গানার একটি ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্য দিয়ে রেল লাইন পাতা, গোয়ার একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ আর উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রী জাতীয় উদ্যানের জমি নিয়ে সেখানে সেনাবাহিনীর জন্য হেলিপ্যাড তৈরি করা, উত্তরাখণ্ডের আর একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির মতো প্রস্তাব ছিল। ৭ এপ্রিলের বৈঠকে সেগুলি সব অনুমোদিত হয়েছে।