Advertisement
১৮ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

অমিতবাক্

এহ বাহ্য, আগে কহ আর। কাহাকে কোন প্রসঙ্গে কী বলিলে তাঁহার অসম্মান হয়, এই বোধ বিজেপি সভাপতির আছে, এমনটাই বা কে বলিল?

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৭ ০০:০২
Share: Save:

অমিত শাহের দোষ নাই। তাঁহার দল ভারত শাসন করিতেছে। তদুপরি, জনশ্রুতি, তিনি প্রধানমন্ত্রীর এক নম্বর উপদেষ্টা। তাঁহার প্রজ্ঞার ভাণ্ডার কানায় কানায় পূর্ণ হইবে না তো কাহার হইবে? দিল্লির দরবারে তিন বছর কাটিয়াছে, এ বার সেই অমিত প্রজ্ঞা তাহার ঘট হইতে উপচাইয়া ইতস্তত প্রবাহিত হইবে, দেশবাসী সেই জ্ঞানামৃত পান করিয়া ধন্য হইবেন, স্বাভাবিক। জ্ঞান ফলাইবার জন্য তিনি গাঁধীজিকে বাছিয়া লইলেন কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও অতি সহজ। কংগ্রেসকে যদি ব্যঙ্গবিদ্রুপ করিতে হয়, তবে নিশানা হিসাবে গাঁধীই ভাল, আর গাঁধীই যদি নিশানা, তবে রাহুল বা সনিয়ায় সন্তুষ্ট না হইয়া মোহনদাস কর্মচন্দই মোক্ষম। মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভাণ্ডার। বিজেপি সভাপতি ‘চতুর বানিয়া’ আখ্যা দিয়া গাঁধীজির অসম্মান করিয়াছেন বলিয়া যাঁহারা নিন্দায় মুখর, তাঁহারা শাহজির প্রতি অবিচার করিতেছেন।

এহ বাহ্য, আগে কহ আর। কাহাকে কোন প্রসঙ্গে কী বলিলে তাঁহার অসম্মান হয়, এই বোধ বিজেপি সভাপতির আছে, এমনটাই বা কে বলিল? মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী কে, তাঁহার জীবন এবং কর্মকাণ্ডের তাৎপর্য কী, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তথা জাতীয়তার ধারণা নির্মাণে তাঁহার ভূমিকা ও গুরুত্বই বা কেমন, সে-সকল বিষয়ে সম্যক ধারণা কি অমিত শাহের আছে? কেনই বা থাকিবে? ধারণা আকাশ হইতে পড়ে না। সঙ্ঘ পরিবারের পাঠশালায় এই সকল বিষয়ে যথাযথ চর্চার ধারা কোনও কালেই নাই, অমিত শাহের প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তাতেও কখনওই তেমন চর্চার লক্ষণ মিলে নাই। তাঁহারা এক ধরনের জাতীয়তা জানেন বটে, তবে তাহা জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, রানা প্রতাপ ও ছত্রপতি শিবজির গুণাবলি এবং বাবর ও আওরঙ্গজেবের দোষরাশির তুলনামূলক বিচার, সর্দার পটেলের মূর্তির উচ্চতা, গোমাতা ও তাঁহার মলমূত্রের ঔষধিগুণ ইত্যাদি কথা ও কাহিনিতে সমৃদ্ধ। তাঁহাদের সেই পঞ্চগব্যময় ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতিবিশিষ্ট জাতীয়তাবাদে গাঁধীজির স্থান কোথায়? বরং অধুনা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রতীক নির্মাণে নরেন্দ্র মোদী তাঁহার চশমাটিকে স্থান দিয়াছেন, ইহাতেই তো পোরবন্দরের সন্তানের ধন্য হওয়া উচিত। তাহার উপর আবার এখন অমিত শাহ তাঁহাকে— না-হয় ব্যঙ্গের ছলেই— স্মরণ করিলেন, ইহার পরে তাঁহার আর কী চাহিবার থাকিতে পারে?

বস্তুত, অমিত শাহ একটি কাজের কাজ করিয়াছেন। তাঁহার কথায় একটি প্রাচীন প্রবচনের সত্যতা নির্ভুল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। সেই প্রবচনটি হইল: আপ্ত মন জগৎ দেখে। গাঁধীজিকে লইয়া দেশে ও দুনিয়ায় বহু চর্চা হইয়াছে, আরও বহু চর্চা হইবে। গাঁধীজিকে জানিবার জন্য অমিত শাহের প্রয়োজন নাই, কিন্তু তাঁহার কথামৃত তাঁহাকে চিনিয়া লইবার জন্য মূল্যবান। প্রতিবাদীরা মস্ত ভুল করিতেছেন— অমিত শাহের মন্তব্যে গাঁধীজির কিছুমাত্র অপমান হয় নাই, অপমানের প্রশ্নও ওঠে না, যিনি এই মন্তব্য করিতেছেন তাঁহার মানসিকতা, শিক্ষাদীক্ষা এবং বোধবুদ্ধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সেই ধারণার মূল্য অপরিসীম। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দেশ চালাইবার ভার কাহাদের হাতে পড়িয়াছে, কাহারা এই মহান ভারতের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হইয়াছেন, তাহা পরিষ্কার বুঝিয়া লওয়া আবশ্যক বইকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahatma Gandhi Amit Shah অমিত শাহ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE