মাওবাদী সক্রিয়তায় জঙ্গলমহল তখন উত্তপ্ত। পশ্চিম মেদিনীপুরের আমলাশোলের অনাহার-মৃত্যু সেই সময় সংবাদ শিরোনামে। তখনই বঙ্গদেশে প্রকাশ্যে এল একটি শব্দ— ‘কুরকুট’। এই ‘কুরকুট’ হল এক ধরনের পিঁপড়ের ডিম। তা খেয়েই নাকি জীবনযাপন করেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর তথা জঙ্গলমহলের মানুষ! সত্যিই কি তাই? নাকি অনাহার, অর্ধাহারের এক আরোপিত ছবি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ‘কুরকুট’ শব্দের গায়ে!
কী এই ‘কুরকুট’? এই ধরনের পিঁপড়ের বৈজ্ঞানিক নাম Oecophylla sp। সাঁওতাল ভাষায় এই পিঁপড়েকে ‘হাও’ বা ‘হাউ’ বলে। দুমকা এলাকায় বলা হয় ‘হাঁও’। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, অবিভক্ত মেদিনীপুর এবং পুরো ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার জঙ্গলে এই হালকা কমলা রঙের পিঁপড়ের দেখা যায়। এরা স্বভাবে খুব দ্রুত এবং সতর্ক। কেউ বিরক্ত করলে আক্রমণকারীকে পাল্টা ধাওয়া করতে জানে। মূলত বড় বড় গাছে বসবাস করে। অতি ক্ষিপ্ততার সঙ্গে গাছে গাছে যাওয়া-আসা করতে পারে। মুহূর্তে উঠে যেতে পারে গাছের মগডালে। সাধারণত, গাছের মগডালের কয়েকটি পাতা সেলাই করে তৈরি করে বাসা। সেখানেই পাড়ে ডিম অর্থাৎ ‘কুরকুট’।
এই প্রজাতির পিঁপড়েদের ‘উইভার অ্যান্ট’ও বলা হয়। উঁচু গাছের মগডালে পিঁপড়ের লার্ভা-নিঃসৃত এক প্রকার ‘সিল্ক’ (রেশম) দিয়ে তিন-চারটে পাতাকে মুড়ে, সেলাই করে একটা থলির মতো বানিয়ে নেয় এরা। এই থলি যেমন মজবুত, তেমন দেখতেও সুন্দর। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এই বাসার মধ্যেই রেখে দেয় পিঁপড়ের দল। পাকা ফলও এদের খাবার। এ ছাড়া, উইপোকা এবং অন্য কীটপতঙ্গ থেকেও খাবার হিসেবে রস সংগ্রহ করে ‘ইকোফাইলা’রা। এদের দলে রয়েছে শ্রমবিভাজন। বাসা তৈরি করা, খাদ্য সংগ্রহ করা, লার্ভা এবং রানির দেখাশোনা করা ইত্যাদি কাজ করে শ্রমিক ‘ইকোফাইলা’রা। তেমনই আক্রমণে সিদ্ধহস্ত সৈনিক ‘ইকোফাইলা’। এরাও খাদ্য সংগ্রহ এবং বাসা বিস্তারের কাজ করে থাকে। শ্রমিক এবং সৈনিক পিঁপড়েরা কমলা রঙের হয়। সৈনিকেরা আকারে একটু বড়। রানি পিঁপড়ে সাধারণত বাসার মধ্যেই থাকে। দেখতে সবজে-বাদামি।