অনুপ চেটিয়ার প্রত্যর্পণে ভারতের তাৎক্ষণিক লাভ যতখানি, দীর্ঘমেয়াদি লাভ তাহার তুলনায় অধিকতর। চেটিয়া প্রায় দুই দশক বাংলাদেশে কারাবন্দি ছিলেন। সাত বৎসর শাস্তির মেয়াদ, এবং তাহার পর বাংলাদেশে তাঁহার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনার আবেদন অমীমাংসিত থাকায় নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে কারাগারই তাঁহার ঠিকানা ছিল। কিন্তু, দীর্ঘ দিনের চেষ্টাতেও ভারত তাঁহাকে ফিরত আনিতে না পারায় বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠনের মনে এই বিশ্বাসটি ছিল যে বাংলাদেশে তাঁহাদের নিরাপদ আশ্রয়খানি অক্ষুণ্ণ রহিয়াছে। ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ এবং অতি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তৎপরতায় সাড়া দিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেই বিশ্বাসটির মূলে কুঠারাঘাত করিয়াছেন। দুই দেশের মধ্যে যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হইয়াছিল, তাহা কার্যকর হওয়া আঞ্চলিক সহযোগিতার পথে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও ভারত এবং বাংলাদেশ, উভয় পক্ষই দাবি করিয়াছে যে অনুপ চেটিয়ার প্রত্যর্পণ বিনা শর্তেই হইয়াছে, তবুও কার্যত একই সঙ্গে ভারত হইতে বাংলাদেশের দাগি আসামি নুর হোসেনের প্রত্যর্পণ অন্য সম্ভাবনাটিকেও চিহ্নিত করে। তাহাতে অন্যায় কিছু নাই। বরং, এই ভাবেই দক্ষিণ এশিয়ায় চরমপন্থী উগ্রবাদী রাজনীতির মূলে আঘাত হানিতে হইবে। শেখ হাসিনার আমলে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে ভাবে ইতিবাচক মাত্রা পাইতেছে, তাহা বজায় রাখাই এখন কর্তব্য। এক দিকে কূটনৈতিক আলোচনা চলুক, নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় থাকুক, আর অন্য দিকে ভারত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করুক। বাণিজ্যের প্রসার ঘটুক। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত অর্থনৈতিক নির্ভরতার সম্পর্ক গড়িয়া তুলিতে পারাই দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা নিশ্চিত করিবার পথ।
আলফা-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অনুপ চেটিয়াকে হাতে পাওয়ায়, আশা করা যায়, শান্তি প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হইবে। অরবিন্দ রাজখোয়া, প্রদীপ গগৈ-রা ইতিমধ্যেই সেই শান্তিপ্রক্রিয়ার অঙ্গ। তাৎপর্যপূর্ণ নেতাদের মধ্যে এখনও শান্তিপ্রক্রিয়ায় যোগ দেন নাই শুধু পরেশ বরুয়া। সরকারের আশা, চেটিয়া েস্বচ্ছায় শান্তিপ্রক্রিয়ায় শরিক হইবেন এবং তাহা পরেশ বরুয়ার উপর চাপ তৈরি করিবে। উল্লেখ্য, আলফা নেতাদের সহিত দ্বিতীয় দফার আলোচনা এই মাসেই। কাজেই, চেটিয়ার প্রত্যর্পণ তাৎপর্যপূর্ণ বটে। একদা উগ্রপন্থীদের কী ভাবে আলোচনার পথে ফিরাইয়া আনা যায়, তাহা গোটা দুনিয়ারই প্রশ্ন। আলফা নেতাদের সহিত বৈঠক সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হইতে পারে। সরকারকে প্রমাণ করিতে হইবে যে হিংসা যেমন বরদাস্ত করা হইবে না, তেমনই কেহ হিংসার পথ ছাড়িলে রাষ্ট্র দুই কদম আগাইয়া তাঁহাকে মূলধারায় ফিরাইতে উদ্যোগী হইবে। তাঁহাদের দাবিগুলির যাথার্থ্য বিচার করা হইবে, আলোচনার মাধ্যমে মধ্যপন্থা অথবা সম্পূর্ণ নূতন কোনও দিশা সন্ধান করা হইবে। শুধু আলফা নহে, অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্ষেত্রেও এই একই নীতি গ্রহণীয়। ভারতীয় রাষ্ট্র অনুপ চেটিয়াকে কী ভাবে ব্যবহার করে, তাঁহার প্রায়-অস্তমিত রাজনৈতিক তাৎপর্যকে কতখানি বিচক্ষণতার সহিত কাজে লাগাইতে পারে, তাহার উপর ভবিষ্যতের শান্তিপ্রক্রিয়াগুলির চলন অনেকাংশে নির্ভরশীল। অতএব, বিচক্ষণ কূটনীতি যে সুযোগ আনিয়া দিয়াছে, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার মাধ্যমে তাহার সদ্ব্যবহারই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy