Advertisement
E-Paper

শিক্ষার অত্যাচার

আইন এই ক্ষেত্রে আইনের পথেই চলিবে। সাজার মেয়াদ কম হইল কি না, বিস্তর আলোচনাও চলিবে। কিন্তু একটি বিষয়ে জোর দিবার সময় আসিয়াছে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিশুশিক্ষা। এই ক্ষেত্রটি এখনও এই রাজ্যে যথেষ্ট অবহেলিত, সরকারি নজরদারি অনুপস্থিত বলিলেই চলে।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০০:২৪

তিন বৎসরের একটি দামাল শিশুকে পড়াইতে হইলে ঠিক কোন ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করিতে হয়? নানা জন নানা মত হইবেন। তবে, পূজা সিংহের দর্শানো পদ্ধতিটি সম্ভবত সর্বাপেক্ষা চমকপ্রদ। পূজা পেশায় শিক্ষক। লেকটাউন থানা এলাকায় চার বৎসর পূর্বে তিনি একটি শিশুর গৃহশিক্ষিকা নিযুক্ত হন। তাহার পর কী ঘটিয়াছিল, দেশ সাক্ষী। ভাইরাল হইয়া যাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ হইতে দেখা যায়, ঘরের বন্ধ দরজার আড়ালে শিশুটিকে ‘শিক্ষা’ দিবার নামে তাহার উপর কী নির্মম অত্যাচার চালাইয়াছিলেন তিনি। সপাট আছাড়, চড়, ঘুসি, লাথি— বাদ পড়ে নাই কিছুই। শেষে শিশুটি অসুস্থ হইয়া পড়িলে তিনি পলায়ন করেন। সম্প্রতি তাঁহাকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া ছ’মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়াছে আদালত।

আইন এই ক্ষেত্রে আইনের পথেই চলিবে। সাজার মেয়াদ কম হইল কি না, বিস্তর আলোচনাও চলিবে। কিন্তু একটি বিষয়ে জোর দিবার সময় আসিয়াছে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিশুশিক্ষা। এই ক্ষেত্রটি এখনও এই রাজ্যে যথেষ্ট অবহেলিত, সরকারি নজরদারি অনুপস্থিত বলিলেই চলে। গৃহশিক্ষকের ক্ষেত্রে তবুও বাড়ির নজরদারি কিছুটা থাকে, কিন্তু যে ঢালাও প্লে স্কুলগুলি গড়িয়া উঠিতেছে, সেখানে নজরদারি চালাইবে কে? অনেক ক্ষেত্রেই বৈধ অনুমতিটুকু থাকে না, পরিকাঠামোও তথৈবচ। স্কুলগুলিতে ঢুকিলে দেখা যায়, নিতান্ত অপরিসর স্থানে কুড়ি-তিরিশটি শিশুকে এক জন শিক্ষকের দায়িত্বে রাখিয়া পাঠ চলিতেছে। অধিকাংশের বয়স দেড়-দুই বৎসর। সমস্যা আরও আছে, ‘শিক্ষা’ দিবার ভার যাঁহাদের উপরে, তাঁহারা আদৌ সেই কাজের উপযুক্ত কি না, প্রয়োজনীয় ট্রেনিং লওয়া আছে কি না, জানিবার উপায় নেই। কারণ কোনও নির্দিষ্ট মানদণ্ড নাই। শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণত স্কুলের উপর নির্ভরশীল। খোঁজ করিলে তাঁহাদের মধ্যেও একাধিক পূজা সিংহের সন্ধান মিলিতে পারে। হয়তো শারীরিক অত্যাচার হয় না, কিন্তু দুর্ব্যবহার, ভীতি প্রদর্শনের নজির মেলে বিস্তর। প্রশ্নাতীত ভাবেই শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমস্যা হইল, সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর অভিভাবকদের কাছে শিশুর মানসিক বিকাশটি যথাযথ হইল কি না, তাহা এখন তেমন গুরুত্ব পায় না। বরং দেড় বৎসর পার না হইতেই স্কুল যাতায়াতের অভ্যাসটি করাইয়া এবং বাড়িতেও পেশাদার গৃহশিক্ষকের হাতে সন্তানের ভবিষ্যৎটি সমর্পণ করিয়া তাঁহারা নিশ্চিন্ত থাকেন। সেই কারণেই মাত্র তিন বৎসর বয়সে গৃহশিক্ষক রাখিবার প্রয়োজন হয়। মা-বাবা নিজেদের সাধ্যানুযায়ী, শিক্ষাগত যোগ্যতানুযায়ী ভিত গড়িবার আনন্দটুকুও পান না। সম্প্রতি, আন্তর্জালে একটি বার্তা ঘুরিতেছে— এক বাবা জানিতে চাহিয়াছেন, তাঁহার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া ছেলের আইআইটি-র প্রস্তুতির জন্য কোন প্রতিষ্ঠানটি সেরা হইবে। উত্তর আসিয়াছে: আইআইটি-র জন্য তাঁহাদের যথেষ্ট দেরি হইয়া গিয়াছে, নার্সারি বা জুনিয়র কেজি হইলে তবু কিছু প্রতিষ্ঠান খোঁজা যাইত। অকল্পনীয় বলিয়া উড়াইয়া দিলে ভুল হইবে। বাস্তব চিত্রটি বোধ করি খুব ভিন্ন কিছু নহে। এক জন পূজা সিংহের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হইলে হয়তো শিক্ষকের নির্মম অত্যাচারের মানসিকতা কিছু কমিতে পারে। কিন্তু সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাতেই যে অমানুষিক অত্যাচার লুকাইয়া আছে, তাহা এত সহজে কমিবে না।

Education Primary Child Teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy