Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

খেলা যখন

স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি সর্বার্থেই সরকারের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি, মন্তব্য করিলেন যে রবিবারের ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে ভারতের জয়লাভ গত ফেব্রুয়ারির বালাকোট বিমানহানার সহিত তুলনীয়!

ছবি এএফপি

ছবি এএফপি

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০০:৫০
Share: Save:

খেলা যে ক্ষেত্রবিশেষে কেবল খেলা-খেলা নহে, তাহার অধিক, ভারত ও ভারতীয়রা তাহা বিলক্ষণ জানে। পাকিস্তান-ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ তাই কখনও কেবল ‘খেলা’র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, রাজনৈতিক কুরুক্ষেত্রীয় দ্বন্দ্বের একটি ছায়া-পরিসর হইয়া দাঁড়ায়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের একটি খেলার অর্থ অনেক সময় এই দেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের একটি বার্তা দিবার প্রশ্নে দাঁড়াইয়া যায়। ধরিয়া লওয়া হয়, মুসলিম মানেই তাহার দেশীয় পরিচিতিটি প্রতিবেশী দেশের সহিত যুক্ত হওয়া উচিত, অর্থাৎ ভারতে থাকিতে হইলে তাহাদের আলাদা কিছু অর্জন লাগিবে। এমন কথা শুনিয়া শুনিয়াই এই প্রজন্মের একাংশের ভারতীয়রা বড় হইয়াছে, এবং প্রস্তাবটিকে আরও খানিকটা বাড়াইবার জন্য তাহারা এ বার তাহাদের প্রতিবেশী দেশে চলিয়া যাইবার পরামর্শ দিতে শুরু করিয়াছে। কেবল ভারতে নহে। একই কু-অভ্যাস পাকিস্তানেও চালু, একই তীব্রতায় চালু। নানা মাপকাঠিতে ভারত হইতে পিছাইয়া থাকিবার শোধ এই খেলার মাঠেই লইতে হইবে, এমন ভাবনা সে দেশের ক্রীড়াদর্শকদের মধ্যেও প্রকট। উপমহাদেশের ক্রীড়াভাগ্য বড় বিচিত্র। ভারত-পাকিস্তান খেলার দ্বৈরথ তাহাদের রাজনৈতিক অশান্তির পূর্ণ চারণভূমি।

এ হেন ঐতিহ্যের প্রেক্ষিতেও বলিতে হইবে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করিল। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি সর্বার্থেই সরকারের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি, মন্তব্য করিলেন যে রবিবারের ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে ভারতের জয়লাভ গত ফেব্রুয়ারির বালাকোট বিমানহানার সহিত তুলনীয়! অমিত শাহ ঠিক সাধারণ জনতার সহিত তুলনীয় নহেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন লঘু ও বিপজ্জনক তুলনা টানিতেই পারেন না। কেহ তর্ক করিতে পারেন, অমিত শাহ তো মন্ত্রী হিসাবে এই মন্তব্য করেন নাই, এ তাঁহার ব্যক্তিগত টুইটার আলাপচারিতা। কিন্তু এত বড় একটি আসনের পদাধিকারী জানেন যে, তাঁহার অবস্থানের গুরুত্বে কোনও ব্যক্তিগতই আর ব্যক্তিগত থাকিতে পারে না। নিজের সমস্ত আচরণে পদের যোগ্য মর্যাদাটি তাঁহার রাখিবার কথা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র সেই জন্য সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা টুইটারে প্রতিবাদ জানাইয়াছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ও মুখ্য উপদেষ্টা নিজের গুরুত্ব ভাল ভাবে জানিয়া বুঝিয়াই এই মন্তব্য করিয়াছেন, কেননা তিনি ঠিক অনুমান করিয়াছেন যে, তাঁহার এই মন্তব্যে দেশব্যাপী বিজেপি সমর্থক সমাজ অতিশয় আহ্লাদিত হইবে। যে কোনও সূত্রে পাকিস্তানকে ‘এক হাত লওয়া’ এই দলের অস্তিত্বের সহিত ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। এই সরকারের সঙ্গেও।

দলীয় প্রধান হিসাবে অমিত শাহ কী করিবেন, তাহা তাঁহার নিজের এবং তাঁহার দলের বিবেচ্য— বাহির হইতে ভালমন্দের বিচার চলিতে পারে, চলিয়াছেও। কিন্তু একটি সুবিশাল গণতান্ত্রিক দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করিবেন ও বলিবেন, তাহা নাগরিক সমাজের নিকট অনেক বেশি গুরুতর, তাহা এ দেশের সরকারের মনোভাব, নীতি ও আদর্শের প্রতিফলন, সেখানে ভালমন্দের বিচারের সহিত উচিত-অনুচিতের বিচারটিও থাকে। সেই নৈতিকতার মানদণ্ডে অমিত শাহ দ্বিতীয় দফার বিজেপি সরকারের ভাণ্ডারে একটি অন্যায় জমাইলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE