Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

সংখ্যার গৌরব অন্তর্হিত

সংখ্যার গৌরবে রাজনৈতিক দলকে আত্মহারা হতে আগেও আমরা দেখেছি। ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০, আমাদের আটকাবে কে’— এমন বয়ান শোনা গিয়েছিল এই বাংলারই কোনও রাজনীতিকের মুখে। ফল কী হয়েছে, ইতিহাস তার সাক্ষী।

এ বার শিবসেনার দরজায় দৌড়নোর কর্মসূচি অমিতের। ফাইল চিত্র

এ বার শিবসেনার দরজায় দৌড়নোর কর্মসূচি অমিতের। ফাইল চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

সংখ্যার গৌরব গণতন্ত্রে বড় বিপজ্জনক। গণতন্ত্রে সংখ্যার কোনও স্থায়িত্ব নেই, সংখ্যা সতত পরিবর্তনশীল। নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পাওয়া রাজনৈতিক দলগুলি সম্ভবত ভুলে যায় সে কথা। কিন্তু ভুলে গিয়ে পার পাওয়ার উপায় নেই, গণতন্ত্র ঠিক সময় মতো মনে করিয়ে দেয় সার কথাটা।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২৭২-এর বেশি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছিল বিজেপি। অভাবনীয় সাফল্যের নজির গড়ে ২৮২ আসনে জয়লাভ করে নরেন্দ্র মোদীদের দল। জনতার এই রায়ে বিজেপির উচ্ছ্বাসের যথেষ্ট কারণ ছিল। অতএব উচ্ছ্বাস স্বাগত, কিন্তু অহঙ্কার নয়।

বিজেপির আচরণে যে অহঙ্কারের প্রকাশ দেখা যাচ্ছিল, সে কথা বিজেপির সহযোগী দলগুলিই বলতে শুরু করেছিল। মরাঠা প্রান্তর থেকে তীব্র সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। দেশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে পঞ্চনদের ভূমিতে অকালি দলের সঙ্গেও সম্পর্ক নাকি ভাল যাচ্ছিল না সম্প্রতি। দাক্ষিণাত্যে আরও বিরূপ অবস্থানে চন্দ্রবাবু নায়ডু, তিনি জোট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। শরিকি কটাক্ষের সুর শোনা যেতে শুরু করেছিল মগধ-মিথিলার প্রান্তর থেকেও। কখনও নীতীশের দল, কখনও পাসোয়ান, কখনও কুশওয়াহা— অসন্তোষের সুর শোনাচ্ছিল সে প্রান্তের প্রত্যেক শরিক। টনক নড়ছিল না তাতেও। এমতাবস্থায় হাজির হল দেশজোড়া এক উপনির্বাচন। সে উপনির্বাচনে ১৫-য় ২ পেল বিজেপি। এক ধাক্কায় মুছে গেল গৌরব। বিরূপ শরিকদের দরজায় দরজায় দৌড়নোর কর্মসূচি স্থির করে ফেললেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিজেপির সবচেয়ে পুরনো শরিক শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির তীব্র টানাপড়েনের কথা এখন গোটা দেশে প্রায় কারওরই অজানা নয়। উপনির্বাচনে খারাপ ফল করার পরে অমিত শাহ সর্বাগ্রে পৌঁছচ্ছেন সেই শিবসেনা প্রধানের দরবারেই। তার পরে পঞ্জাবে শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গে বৈঠক ‘অমিত শক্তিধর’ বিজেপি সভাপতির। ক্রমে অন্য শরিকদের মুখোমুখিও হবেন অমিত শাহ, ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। জোট রাজনীতিতে এই ধরনের বৈঠক কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু গত চার বছরে সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই অস্বাভাবিক ঠেকতে শুরু করেছিল। গণতন্ত্রের দরবারে ধাক্কা খেয়েই আবার স্বাভাবিকতায় ফেরার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে বিজেপিতে।

আরও পড়ুন: চিড় মেরামতে আজ বৈঠকে অমিত-উদ্ধব

সংখ্যার গৌরবে রাজনৈতিক দলকে আত্মহারা হতে আগেও আমরা দেখেছি। ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০, আমাদের আটকাবে কে’— এমন বয়ান শোনা গিয়েছিল এই বাংলারই কোনও রাজনীতিকের মুখে। ফল কী হয়েছে, ইতিহাস তার সাক্ষী। অমিত শাহদের জন্যও তেমনই কোনও পরিণতি অপেক্ষায় রয়েছে কি? উত্তর খোঁজা শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা ভারতে।

বোধোদয় হয়েছে বিজেপির, গণতন্ত্রের পক্ষে এ এক সুলক্ষণ। তবে এ বোধোদয় বেশ বিলম্বিত। তাই অমিত শাহদের আসন্ন যাত্রাপথ খুব মসৃণ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE