Advertisement
E-Paper

শিশু ও পশু

দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রমশ তরুণ দম্পতিদের মধ্যে সন্তান উৎপাদনের বদলে পোষ্য পালনের ঝোঁক বাড়িতেছে। অনেকেরই ইচ্ছা, সন্তান হয়, কিন্তু সম্ভাব্য খরচের কথা ভাবিয়া তাঁহারা পিছাইয়া যাইতেছেন। ওই দেশে শিক্ষার খরচ গগনচুম্বী, আবাসনের খরচও আত্যন্তিক, একটি সন্তানের জন্মদান মানে তাহাকে পালন করিতে প্রবল ব্যয়ের সম্মুখীন হওয়া, যাহার সাধ্য অনেকেরই নাই।

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রমশ তরুণ দম্পতিদের মধ্যে সন্তান উৎপাদনের বদলে পোষ্য পালনের ঝোঁক বাড়িতেছে। অনেকেরই ইচ্ছা, সন্তান হয়, কিন্তু সম্ভাব্য খরচের কথা ভাবিয়া তাঁহারা পিছাইয়া যাইতেছেন। ওই দেশে শিক্ষার খরচ গগনচুম্বী, আবাসনের খরচও আত্যন্তিক, একটি সন্তানের জন্মদান মানে তাহাকে পালন করিতে প্রবল ব্যয়ের সম্মুখীন হওয়া, যাহার সাধ্য অনেকেরই নাই। তাহা ব্যতীত, অফিসে এক গড় দক্ষিণ কোরীয়কে বহু সময় কাটাইতে হয়, পরিবারকে সময় দিবার অবকাশ খুবই কম। সব মিলাইয়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় শিশুদের জন্মহার এই মুহূর্তে বিশ্বে ন্যূনতম। এবং ওই দেশের পোষ্যপালনের শিল্প ফাঁপিয়া উঠিতেছে। পোষ্যের সাজসজ্জা, খেলাধূলার উপকরণ, এমনকি তাহাদের অন্ত্যেষ্টির শিল্পের এখন রমরমা। এই সকল আমাদের দেশে তেমন জাঁকিয়া বসে নাই ঠিকই, কিন্তু সমস্যাটি অপরিচিত নহে। বঙ্গদেশে যে কোনও বাড়িতে সন্তান হইলে প্রবল আনন্দের বন্যা বহিয়া যায় বটে, কিন্তু দুই-তিন বৎসরের মধ্যে তাহাকে কোন মন্টেসরিতে পাঠানো হইবে এবং তাহার পর কোন নামজাদা বিদ্যালয়ে সে প্রবেশ করিতে পারিবে, তাহা লইয়া উদ্বেগের প্লাবন ডাকে। সমগ্র পরিবার যেন কেবল সেই শিশুটির ভালমন্দেই কেন্দ্রীভূত হইয়া যায়, যেন বিশ্বে আর কোনও সমস্যা নাই এবং থাকিতে পারে না, শিশুটি পাঁচ বৎসর বয়সে কোন ক্লাস টেস্টে কত নম্বর পাইল তাহা দ্বারা পরিবারের সর্বাঙ্গীণ মেজাজ নির্ণীত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে (ও ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে) অবিশ্বাস্য প্রতিযোগিতা এবং প্রত্যেকের প্রকাণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষা মিলিয়া এই অবস্থা তৈয়ারি হইয়াছে, অনেকের মতে যৌথ পরিবার ভাঙিয়া গিয়া ক্ষুদ্র পরিবারে একটিমাত্র সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগও ইহার জন্য দায়ী। কিন্তু এই কথা নিশ্চয় কোনও অভিভাবকের মানসপটে ঝিলিক দিয়া যায়, সন্তান থাকিলে বাৎসল্য উদযাপিত হয়, তবে না থাকিলে বহুল পরিমাণ আর্থিক ও দৈনন্দিন স্বাচ্ছন্দ্যও ঘটে। এই কথা বাহিরে প্রকাশ করিলে অমানবিক প্রতিপন্ন হইবার ভয় আছে, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে তরুণ-তরুণীরা, লোকলজ্জা ও ভীতির তুলনায় আত্মপ্রীতিকে অধিক মূল্য দেন। জোর গলায় বলেন, নিজের সাধ্যে আরামে বাঁচিতে চাই, সন্তান না হইলে জীবন অসার্থক মনে করি না। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই মানসিকতা অধিক তীব্র হইয়া উঠিয়াছে জীবনযাপনের খরচ প্রবল বাড়িয়া যাওয়ায়। মানুষের জীবনের অর্থ-সন্ধানও অর্থের দাস।

অবশ্য তাহার অর্থ এই নয় যে দক্ষিণ কোরীয়দের জীবনে বাৎসল্যের অভাব ঘটিতেছে। বাড়িতে একটি সারমেয় বা মার্জার ঘুরিয়া বেড়াইলে লোকে তাহাদের বাড়ির শিশুর ন্যায়ই দেখে, নিজেদের তাহার ‘বাবা’, ‘মা’ বলিয়াই পরিচয়ও দেয়। পোষ্য অসুস্থ হইলে সমান উদ্বেগ ও পোষ্য খেলিয়া বেড়াইলে সমান আহ্লাদে মথিত হয়, যেমন সন্তানের ক্ষেত্রে হইত। কিন্তু শিশুর তুলনায় পশুর সুবিধা হইল, তাহাকে স্কুলে ভর্তি করিতে হইবে না, সপ্তাহে দুইটি শিক্ষক ঠিক করিতে হইবে না, বিদ্যালয়ের গ্রাম্ভারি কর্তৃপক্ষের নিকট দেখা করিতে গিয়া ‘মানুষ করিতে পারেন না’ মর্মে বকুনি খাইয়া আসিতে হইবে না, ঘড়ি-ঘড়ি শিশুর বায়না মিটাইতে অসংখ্য খেলনা কিনিয়া দিতে হইবে না, তাহার সহপাঠীদের জন্মদিনে যাইয়া ক্লান্ত ও উত্ত্যক্ত হইতে হইবে না। তাহার অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কুকুর-বিড়াল বড় হইলে বখিয়া যায় না। সন্তান কোন সঙ্গ করিতেছে, কখন বিড়ি খাইতে শিখিল, ফোনে লুকাইয়া কোন সাইট দেখিতেছে, শেষমেশ মাদকাসক্ত হইয়া পড়িল কি না, এই সকল ভাবিয়া আধুনিক মা-বাবার ঘুম উড়িয়া যায়। রাতে সন্তানের ফিরিতে দেরি হইলে পিতামাতা ভাবিতে থাকেন, নির্ঘাত দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে বা নিগ্রহের মুখে পড়িয়াছে। এত উদ্বেগ লইয়া বাঁচিবার বড় জ্বালা। পোষ্যকে দিনে দুই কি এক বার চেন বাঁধিয়া বেড়াইতে লইয়া যাইতে হয়, কিন্তু সে বন্ধুর বাড়িও যায় না, মোবাইলও দেখে না, ড্রাগ খাইবার তো প্রশ্নই নাই। সে এমনকি বিবাহও করে না। তাহার চাকুরি বা ব্যবসা করিতে যাইয়া ব্যর্থ হইবার সম্ভাবনা নাই, তাই তাহাকে টাকা ধার দিবার বা দুর্দশায় হাল ধরিবারও প্রশ্ন নাই। সত্য বলিতে কী, যদি সম্পর্কের মাধুর্য পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু দায় কমিয়া যায়, তাহা কি সব অর্থেই শ্রেয় সম্পর্ক নহে? সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল, পোষ্যের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করিলেও সে কোনও দিন তর্জনী উঁচাইয়া তিরস্কার করিবে না। তর্জনী উঁচাইতে জানে না, এমন প্রাণী সহাবস্থানের পক্ষে আদর্শ!

যৎকিঞ্চৎ

শীত এসেছে, জলসার সীমা নেই। গানটান তো হচ্ছেই, এমনকি সাহিত্য উৎসবও কলকাতা শহরে গুচ্ছের। লেখকরা সাধারণত ফিল্মস্টারদের সঙ্গে একই মঞ্চে ঘেঁষাঘেঁষির সুযোগ পান না, কিন্তু এখন গাদা গাদা আলোচনা বিতর্ক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা গায়ক সরোদিয়া ও কবি একই মূল্য পাচ্ছেন, ছোঁয়াচ লেগে কিছু গ্ল্যামারও, মাঝেমধ্যে ধনীর বাড়ির ছাদে নৈশ পার্টিতে আমন্ত্রণ! জীবনের কাব্য কিছুই যাবে না ফেলা, যত চ্যানেল ও উৎসব বাড়বে, জায়গা ভরাতে বাড়বে সব্বার স্বীকৃতির কোটা!

Child Birth South Korea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy