Advertisement
E-Paper

শুভমুক্তি আসন্ন

এক্ষণে একটি অনিবার্য আপত্তি উঠিবে— যাহাদের আপত্তিতে এত দিন সিনেমা হলগুলি বন্ধ ছিল, এখন তাহারা কি ফের অশান্তি করিবে না? কাশ্মীরে কি সমস্যার অভাব যে আর একটি বাড়তি হুজ্জত ডাকিয়া আনিতে হইবে? বিশেষত, সিনেমার ন্যায় একটি অকিঞ্চিৎকর বিষয়ে এই অতিরিক্ত সংঘর্ষ কি দরকার ছিল?

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৩

সলমন আর সলমনের ব্যবসা হয়তো শেষ অবধি লাটেই উঠিতে চলিয়াছে। এই হতভাগ্য সমনামী দুই জন কে, সেই সন্ধান মিলিবে বিশাল ভরদ্বাজের ‘হায়দর’ ছবিতে— এই দুই চরিত্র ভিডিয়ো ক্যাসেট ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করিতেন। ১৯৯০-উত্তর কাশ্মীর উপত্যকায় ব্যবসাটির তাৎপর্য বিপুল। কারণ, বলিউডের রোমাঞ্চের ছোঁয়া পাইতে হইলে গত তিন দশক ধরিয়া গোপনে ক্যাসেট বা সিডি ভাড়া করিয়া আনাই একমাত্র পন্থা ছিল। পাকিস্তান-ঘেঁষা উগ্র ইসলামি মৌলবাদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি বস্তু অন্তর্হিত হইয়া যায়। শান্তি যেমন, সিনেমা হলও তেমন। সিনেমা ইসলাম-বিরোধী, এ হেন ধুয়া তুলিয়া জঙ্গিরা ১৯৮০-র দশক হইতেই সিনেমা হলগুলি বন্ধ করিবার জুলুম করিতে থাকে। বিউটি পার্লার, পানশালা ইত্যাদিও তাহাদের কোপে পড়ে। সেই ধাক্কায় তিনটি দশক কাশ্মীর সিনেমা হল-হীন থাকিয়াছে। প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে কিন্তু সিনেমা বন্ধ হয় নাই, এমনকি বলিউডের ছবিও ‘সগৌরব’ চলে। এত দিনে কাশ্মীরে ফের সিনেমা হল খুলিবার উদ্যোগ দেখা যাইতেছে। খুলিলে, আর কেহ সলমনদের দ্বারস্থ হইবেন বলিয়া মনে হয় না।

এক্ষণে একটি অনিবার্য আপত্তি উঠিবে— যাহাদের আপত্তিতে এত দিন সিনেমা হলগুলি বন্ধ ছিল, এখন তাহারা কি ফের অশান্তি করিবে না? কাশ্মীরে কি সমস্যার অভাব যে আর একটি বাড়তি হুজ্জত ডাকিয়া আনিতে হইবে? বিশেষত, সিনেমার ন্যায় একটি অকিঞ্চিৎকর বিষয়ে এই অতিরিক্ত সংঘর্ষ কি দরকার ছিল? ঠিকই, ভারতের সর্বত্র সাধারণ মানুষ ইচ্ছা হইলেই সিনেমা দেখিতে পারেন। কাশ্মীরিরা সেই অধিকার হইতে বঞ্চিত। কিন্তু, সিনেমা দেখিবার অধিকার কী এমন গুরুত্বপূর্ণ বস্তু, যাহার জন্য আরও এক দফা বাড়তি অশান্তি টানিয়া আনিতে হইবে?

উত্তরটি দ্ব্যর্থহীন। যাহা চলিতেছিল, তাহা চলিতে দেওয়া যায় না। সিনেমা দেখা আদৌ কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ কি না, সেই প্রশ্নটি অবান্তর। যত অকিঞ্চিৎকর কাজই হউক, তাহা করিবার পূর্ণ স্বাধীনতা দেশের প্রতিটি মানুষের সমান ভাবে থাকা বিধেয়। কন্যাকুমারীর কোনও বাসিন্দার সিনেমা দেখিতে যাওয়ার অধিকার যতখানি, কাশ্মীরের নাগরিকেরও ঠিক ততটাই। কাহারও আপত্তিতেই সেই অধিকার খর্ব করা চলে না। কেহ সিনেমা দেখিলে যাহাদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে, তাহারা নিরালায় বসিয়া নিজেদের আহত আবেগের শুশ্রূষা করুক। কিন্তু, কোনও উদারবাদী সমাজে নিজের আপত্তি অন্যের ঘাড়ে চাপাইয়া দেওয়ার, অন্যের অধিকার খর্ব করিবার অনুমতি দেওয়া চলে না। সেই অধিকার কাহারও থাকিতে পারে না। গোরক্ষকদেরও যেমন অন্য মানুষের খাদ্যরুচি নিয়ন্ত্রণের অধিকার নাই, খাপ পঞ্চায়েতের জেঠামহাশয়দের যেমন অন্যের পরিধেয় স্থির করিবার অধিকার নাই, তেমনই ইসলামি মৌলবাদীদেরও অধিকার নাই অন্যকে সিনেমা দেখিতে বাধা দেওয়ার। তাহারা নিজেদের আপত্তি প্রকাশ করিতে পারে, নিজেদের মতের পক্ষে সওয়াল করিতে পারে— কিন্তু কেহ তাহাদের মত মান্য করিবেন কি না, গায়ের জোরে স্থির করিবার অনুমতি তাহাদের নাই। মানুষের চয়নের অধিকার যাহাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, তাহা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কাশ্মীরেও। উত্তরপ্রদেশেও।

Cinema Halls Kashmir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy