Advertisement
E-Paper

সতর্ক থাকুন শস্য সংরক্ষণে

আগে গোলায় ধান ভরা থাকত বড় জোর ছ’মাস। এখন তা কখনও কখনও বছর ঘুরে যায়। গোলায় সংরক্ষিত শস্যে আক্রমণ করে ক্ষতিকারক পোকা। কিন্তু একটু সাবধান হলে এবং একটু যত্ন নিলেই শস্যের এই ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। কী ভাবে? লিখছেন মুক্তেশ্বর সর্দার ডালের পোকা (পাল্‌স বিট্ল) কেবল লার্ভা (কীড়া) অবস্থায় শস্যের ক্ষতি করে। লার্ভা সাদা রঙের হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ পোকা লালচে বাদামি বর্ণের  হয়।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯ ০৫:২২
গোলা ভরা ধান। ছবি: শুভ্র মিত্র

গোলা ভরা ধান। ছবি: শুভ্র মিত্র

ফসল কেটে নেওয়ার পরে ঝাড়াই, মাড়াই করে তা গোলাজাত করা হয়। কোথাও চটের বস্তায়, কোথাও বা মাটির বাঁড়িতে। আবার কোথাও আবার প্লাস্টিকের প্যাকেটে। তবে সবচেয়ে পরিচিত ছবি উঠোনের মাঝে ছাউনি-সহ পাটাতন বা ‘মড়াই’ বানিয়ে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত শস্য মজুত করে রাখেন। কিন্তু কীট-শত্রু এখানেও শস্যের পিছু ছাড়ে না। বিভিন্ন গোলাজাত পোকা (‌স্টোরেজ পেস্ট) এবং ইঁদুরের আক্রমণে দানাশস্য, তৈলবীজ, ডালশস্য নষ্ট হয়ে যায়।

দেখা গিয়েছে, এই সমস্ত শত্রুরা প্রায় গড়ে ১০-১৫ শতাংশ গোলাজাত শস্য নষ্ট করে থাকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডালশস্য।

ডালের পোকা (পাল্‌স বিট্ল) কেবল লার্ভা (কীড়া) অবস্থায় শস্যের ক্ষতি করে। লার্ভা সাদা রঙের হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ পোকা লালচে বাদামি বর্ণের হয়। ডানায় কালো ছোট ছোট দাগ থাকে। এরা ডালের দানায় ছিদ্র করে ভিতরের অংশ খেয়ে নেয়। পূর্ণাঙ্গ পোকার ডানা থাকে। তাই একটি শস্যভাণ্ডার সংক্রমিত হলে, এই পোকা আশপাশের শস্যের গুদামে পৌঁছে যেতে পারে এব‌ং সেখানেও শস্যের ক্ষতি করে।

অন্য কীট-শত্রুর মধ্যে ধানের পুঁতি পোকা (রাইস মথ), চালের কেড়ি পোকা (রাইস উইভিল), গমের দানাছিদ্রকারী পোকা (‌লেসার গ্রেস বোরার), ময়দার পোকা (ফ্লাওয়ার বিট্‌ল) উল্লেখযোগ্য।

ধানের পুঁতি পোকার পরিণত মথের ডানা সাদাটে-বাদামি বর্ণের। এরা যে কোনও বদ্ধ, উষ্ণ শস্য ভাণ্ডারে এক বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণত ধান বা চালের ক্ষতি করলেও শুকনো ফল, ময়দা, ডাল ইত্যাদিরও ক্ষতি করেছে, এমনও দেখা যায়। পোকার লার্ভা বা কীট হালকা হলুদ বা সাদা রঙের হয়। মাথা বাদামি।

এই পোকা অনেক শস্যদানা পাকিয়ে মণ্ড তৈরি করে।

গমের দানাছিদ্রকারী পোকা পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় শস্যদানার বাইরে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লার্ভা বেরোলে তা দানার মধ্যে গর্ত করে ঢুকে যায় এবং ভিতরের অংশ খেয়ে নেয়। এই পোকাও বদ্ধ, উষ্ণ পরিবেশে দ্রুত বংশ বিস্তার করে। এই পোকার সংক্রমণ হলে হলে তা আরও অনেক পোকারও আক্রমণ ত্বরাণ্বিত করে।

চালের কেড়ি পোকাও বাদামি রঙের। মূলত চালে দেখা গেলেও গম, ভুট্টা, আটা, ডাল ইত্যাদি শস্যও এরা নষ্ট করে। শস্য ভাণ্ডারে দু’বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এই পোকা। পরিণত পোকা ধানে গর্ত করে তাতে ডিম পাড়ে। লার্ভা তা খেয়েই বড় হয়।

এই সমস্ত পোকা গোলাজাত শস্য দানা ফুটো করে খেয়ে নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া, ইঁদুরের উপদ্রব তো রয়েছেই।

এই শস্যহানি অনেকাংশে কমানো যাওয়া সম্ভব, যদি কয়েকটি সাধারণ বিষয়ে নজর দেওয়া যায়। যেমন, প্রথমেই উচিত শস্য ভাল ভাবে শুকিয়ে গোলাজাত করা। শস্যে জল বা আর্দ্রতা থেকে গেলে তা পচন ঘটায়। আর্দ্রতা শস্য তো নষ্ট করবেই, ক্ষতিকারক পোকারও জন্ম দিতে সাহায্যকারী পরিবেশ তৈরি করবে। শস্য সংগ্রহকারী বস্তা বা গোলা সরাসরি মাটির উপরে না রেখে একটু উঁচু পাটাতন বা কংক্রিটের মেঝে বানিয়ে দেওয়াল থেকে একটু দূরত্ব রেখে তার মধ্যে শস্য রাখলে ভাল হয়। চটের বস্তা বা খড়ের মড়াইয়ের চেয়ে পলিথিন বা ধাতব পাত্রে (‘সি়ড বিন’) শস্য রাখা উচিত। পুরনো গোলায় ফের শস্য রাখার আগে তা ভাল করে সংস্কার করে নেওয়া প্রয়োজন। আগে থেকে তাতে কোনও পোকা বা কীট থেকে গেলে তা নতুন শস্যেরও ক্ষতি করবে।

ইঁদুর প্রতিরোধের জন্য খাঁচার ব্যবহার সবচেয়ে পুরনো পদ্ধতি। বর্তমানে ‘স্টিকার বোর্ড’ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া, বাড়িতে বেড়ালের মতো প্রাকৃতিক ভাবে ইঁদুরের শত্রু এমন কোনও পোষ্য রাখলেও ইঁদুরের উপদ্রব কমে।

ইঁদুর ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিকও ব্যবহার করা যেতে পারে। গোলাজাত শস্য সংরক্ষণেও এমন কিছু কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। ডেল্টামেথ্রিন ২৫ শতাংশ ডব্লুপি নামক কীটনাশক ৪০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে তা শস্যের গোলা, বস্তা, ঘরের মেঝে, দেওয়ালে স্প্রে করতে হবে। তিন লিটার দ্রবণে ১০০ বর্গমিটার এলাকায় স্প্রে করা যাবে।এ ছাড়া, পিরিমিফস মিথাইল ৫০ শতাংশ ইসি, ম্যালাথিয়ন ৫০ শতাংশ ইসি প্রতি লিটার জলে ৮-১০ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

এ ছাড়াও কিছু ধূমায়িত তরল কীটনাশক বাজারে পাওয়া যায়। বায়ুর সংস্পর্শে এই কীটনাশক বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। বায়ুনিরুদ্ধ রেখে এটি প্রয়োগ করতে হয়। তিন মিলিলিটার একটি ‘অ্যাম্পুল’ এক কুইন্টাল শস্য ধূমায়িত করতে যথেষ্ট।

তবে গোলাজাত শস্য সংরক্ষণের জন্য যে কীটনাশকই ব্যবহার করা হোক না কেন, তা সরাসরি শস্যের সংস্পর্শে না রাখাই ভাল। কিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক রয়েছে, যাদের ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয়। সে দিকটাও খেয়াল রাখা দরকার।

এ ছাড়া, শস্য ছোট ছোট প্যাকেটে বা বস্তায় প্রথমে ভর্তি করে তার পরে ছোট থলিগুলিকে একটি বড় থলিতে ভরে রাখলে ধানের পুঁতি পোকা, চালের কেড়ি পোকার আক্রমণ খানিক আটকানো যায়।

লেখক রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সহকারী কৃষি আধিকারিক

Grain Storage Insecticides
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy