শ্রীজাত। ছবি: ফেসবুক
স্বাধীনতা তাঁরই প্রাপ্য, যিনি স্বাধীনতার সীমাটাও জানেন। এ কথা প্রথম বার বলছি তা নয়, আগেও বলতে বা লিখতে হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু আবারও এর উচ্চারণ জরুরি হয়ে পড়ল। একটি কবিতা, সে কবিতার বিরোধিতা, ফৌজদারি মামলা, আকথা-কুকথার ঝড়, শব্দ চয়নের দৈন্য এবং সব মিলিয়ে নিদারুণ অসংবেদনশীলতা— যা কিছু ঘটল বা এখনও ঘটছে, তাতে স্বাধীনতা এবং শালীনতার সীমা সম্পর্কে আমাদের বোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
শ্রীজাত কবিতা লিখলেন। সে কবিতা ধর্মীয় ভাবাবেগে প্রবল আঘাত বলে কারও কারও মনে হল। জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ দায়ের হল তাঁর বিরুদ্ধে। থানা-পুলিশ বা মামলা-মোকদ্দমা করার অধিকার সব নাগরিকের রয়েছে, তাই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, পছন্দে বা অপছন্দে, খেয়ালে বা বেখেয়ালে মামলা করে দিতেই পারি যখন-তখন। ভাবখানা খানিক সে রকমই দাঁড়াল না কি?
তসলিমা নাসরিনের দৃষ্টান্ত নিয়ে খুব চর্চা হয় এ বঙ্গে। প্রথমে দেশ থেকে বিতাড়িত হলেন তিনি। বাংলার টানে পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় খুঁজে নিলেন। সেখান থেকেও উৎখাত করা হল তাঁকে। আজ শ্রীজাতর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সে দিন তসলিমার বিরুদ্ধেও সেই অভিযোগই এনেছিলেন ধর্মোন্মাদরা।
তসলিমা-বিতাড়নের বিরোধিতাও হয়েছিল এ বাংলায়, কলমের স্বাধীনতার পক্ষে জোর সওয়াল হয়েছিল। ফিরিয়ে দাও তসলিমাকে— অনেকেই সরব হন আজও। কিন্তু তাঁদেরই অনেককে যখন আজ শ্রীজাতর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হতে দেখা যাচ্ছে, তখন হিসেবটা খুব খটমট লাগছে, অনেক কিছুই মেলানো যাচ্ছে না।
শ্রীজাত তথা তাঁর ‘ভাবাবেগঘাতী’ কবিতাকে ঘিরে যা কিছু ঘটল এ যাবৎ, তার অধিকাংশটাই সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গেও আসতে হচ্ছে। কেউ তীব্র আক্রমণ করলেন ফেসবুকে, টুইটারে। কেউ কবির সমর্থনে কোমর বেঁধে নামলেন। কিন্তু দু’পক্ষেই এমন অনেককে পাওয়া গেল, যাঁরা শালীনতার সীমাটা জানেন না, যুক্তির ধারপাশ মাড়ান না। কেউ কেউ ‘কবিতা’য় প্রত্যাঘাতের চেষ্টা করলেন কবিকে, কেউ আবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং কলমের সক্ষমতার প্রহরী হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেন এবং স্বাধীনতা, অসংবেদনশীলতা এবং অশ্লীলতার সংজ্ঞাগুলোকে গুলিয়ে দিয়ে সত্যিই ভাবাবেগঘাতী হয়ে উঠলেন।
অদ্ভুত অন্ধকার সময় এক! এক দল বলছে— আমরা কবির পক্ষে। অন্য দল বলছে— আমরা ধর্মের পক্ষে। কবি আর ধর্মের মধ্যে কোনও বিরোধ কি সত্যিই রয়েছে? প্রশ্ন করছেন না কেউ। কবিকে চেনেই না তাঁর সমর্থককুলের সিংহভাগ। ধর্ম কী? জানা নেই ‘ধার্মিক’দের। অন্ধকারে কেউ কিছুই ঠাহর করতে পারছেন না যেন, তার মধ্যেই হাতড়ে হাতড়ে হানাহানিটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কার বর্শায় ছিঁড়ে যাচ্ছে কবির কলিজা? ‘সমর্থক’ না ‘বিরোধী’? কার তোপ থেকে ছিটকে আসা গোলা ধসিয়ে দিচ্ছে ধর্মের অভ্রভেদী সৌধ? ‘ধার্মিক’ না ‘অধার্মিক’? ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না কিছুই। তবু অন্ধের মতো হানাহানিতে মত্ত আমরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy