—প্রতীকী চিত্র।
স্যানিটাইজ় করি নিয়মিত
গত ৫৮ দিন ধরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে করতে আজ আমি অনেক বেশি পরিণত এবং অভিজ্ঞ হয়েছি।
আমার ছেলে অংশু গত ডিসেম্বরে আমার কোলে এসেছে। প্রথম যখন ও দু’চোখ মেলে নিঃস্পাপ মুখে আমার দিকে চেয়েছিল, তখনও ভাবিনি যে ওকে ভবিষ্যতে এক মহামারির আবহে নিঃশ্বাস নিতে হবে। প্রত্যেক মাই চায় সন্তানের সুস্থতা। কিন্তু প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ উপভোগ করার মধ্যেই ছন্দপতন ঘটাতে এল করোনার এই ভয়ানক বিভীষিকা।
স্বামী, শাশুড়ি মা, ছেলে ও আমাকে নিয়ে চার জনের পরিবার। আমরা প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছি।
যখন আমরা করোনা সম্পর্কে প্রথম জানতে পারলাম, আমার ছেলের বয়স আড়াই মাস। ঠিক সেই মুহূর্তে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে দেয়। অগত্যা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের টিকাকরণ প্রক্রিয়াও অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
বারবার হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করা, মুখে মাস্ক লাগানো, ব্যবহৃত জামাকাপড় ডেটল জলে ধুয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে স্নান করা নিত্যকর্ম হয়ে উঠে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ করে জানতে পারলাম দেরি হলেও সব ভ্যাকসিনগুলোই আবশ্যিক। তাই আর দেরি না করে ওর সাড়ে ৪ মাস বয়সে আড়াই মাসের সব ভ্যাকসিনগুলোই নিকটবর্তী এক প্রাইভেট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে দেওয়ানো হল।
আমার ছেলের জন্মের পর থেকেই ব্যবহৃত জিনিসপত্র ডিস-ইনফেকশন করার জন্য প্রতিদিন ডিটারজেন্টে ধূয়ে, ডেটল জলে ডুবিয়ে ব্যবহার করাই। ছেলেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করাই। প্রতিদিন ওর জলে পরিমিত মাত্রার ডেটল মিশিয়ে স্নান করাই। ছেলের গায়ে যাতে কোনও রকম র্যাশ না হয়, তার জন্য বেবি পাউডার দিয়ে জামাকাপড় পড়াই। আমার ছেলের যাতে ঠান্ডা না লাগে তার জন্য প্রতিদিন ওষুধ খাওয়াই। রাতে শোওয়ার সময়ে বাচ্চাকে ডাইপার পরিয়ে শোয়াই, যাতে ওর ঠান্ডা না লাগে।
যেহেতু আমার ছেলের এখন প্রায় পাঁচ মাস বয়স চলছে, তাই ওকে ব্রেস্ট মিল্কের সঙ্গে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ানো চালিয়ে যাচ্ছি। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, সুস্থ-সবল থাকতে ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশে ব্রেস্ট মিল্ক সবচেয়ে ভাল। এ কারণে আমিও খাবারের তালিকায় শাক-আনাজ, মাছ, ডিম, মাংস, দুধ প্রভৃতি রেখেছি, যা আমার শিশুর চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজন।
আমার স্বামী একজন রাজ্য সরকারি কর্মচারী। এই লকডাউনে তিনি বেশির ভাগ সময়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কাজ করছেন। তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে অফিস যেতে হচ্ছে। তিনি যখন অফিসের কাজে বা অন্য কোনও কারণে বাড়ির বাইরে যান, তখন সারা শরীর ঢাকা পোশাক, মাস্ক, সানগ্লাস ব্যবহার করেন। কিছু সময় পর পরই স্যানিটাইজ়ারও ব্যবহার করেন। বাইরে থেকে ফেরার পর আমার স্বামী সব সময় সাবান দিয়ে, ডেটল জল দিয়ে স্নান করেন। আমি তাঁর ব্যবহৃত জিনিস ডিটারজেন্টে ধুয়ে, ডেটল জলে ডুবিয়ে দিই। এ ছাড়াও আমি বাচ্চা ও পরিবারের কথা মাথায় রেখে স্বামী বাইরে গেলে এবং বাড়ি ফিরলে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল, মানিব্যাগ এবং অন্য জিনিসপত্র স্যানিটাইজ়ার দিয়ে পরিষ্কার করি।
আমি এবং আমার শাশুড়ি মা এই পরিস্থিতিতে একদমই বাড়ি বাইরে যাচ্ছি না। নিত্য প্রয়োজনীয় আনাজ, মাছ ইত্যাদি আমরা এখন বাড়ির সামনে দিয়ে যে বিক্রেতা যান, তাঁদের থেকেই কিনছি। মোটামুটি ১০-১২ দিন পরপর আমার স্বামী দোকান-বাজার কাজ সারছেন। বাইরের জিনিসপত্র বাড়িতে আনার পর আমরা সেগুলি ভাল করে ডেটল জলে ধুয়ে-মুছে ব্যবহার করছি। ব্যবহৃত টাকাপয়সা, মোবাইল সব সময়ে স্যানিটাইজ় করছি শুধুমাত্র বাচ্চার কথা ভেবেই।
এ ছাড়াও দু’-একদিন পর পর রেফ্রিজারেটরের হাতল, দরজার হাতল, চেয়ার-টেবিল, টিভি ইত্যাদি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করছি। যেহেতু আমার বাড়িতে বাচ্চা আছে তাই প্রতিদিন ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে নিচ্ছি।
আমার শাশুড়ি মা-র বয়স ৬২ বছর। উনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তাই উনি ওঁর প্রয়োজনীয় ওষুধ যাতে ঠিক সময়ে খান, সেটাও নজর রাখছি। প্রতিদিন খাবারে আমরা ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার এবং অন্তত ১টা করে ফল খাচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে হলে আমাদের সকলকেই ঠিক ভাবে লকডাউন মেনে চলতে হবে।
সুপ্রিয়া পাল,
গোকুলপুর, কল্যাণী
আত্মবিশ্বাসী ছিলাম আমি
মাত্র ছ’দিন আগে মা হয়েছি। একজন মেয়ের গর্ভবতী হওয়ার প্রথম খবর পাওয়া যতটাই আনন্দের, ঠিক ততটাই আশা-আকাঙ্ক্ষার দোলাচল চলতে থাকে তাঁর মনে। প্রথম মা হওয়ার আস্বাদ পাওয়ার সেই প্রতিক্ষিত সময়ের দিকে এগিয়ে চলছিলাম আর অন্য সব মায়ের মতো। কিন্তু ছন্দপতন হয় যে দিন প্রথম শুনি আমাদের রাজ্যের একজন করোনা পজিটিভ! হ্যাঁ, সে দিন প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। করোনা থেকে আমার অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে কী করা উচিত, সে সময়ে কিছুই জানতাম না। তখন আমার গর্ভকালীন শেষের দিকের মাস চলছে।
আমার এই ভয়ের কথা জানাই আমার স্বামীকে। সে আমাকে সামলে রাখার পাশাপাশি বলেন, নিজেকে যেন সব সময়ে পজিটিভ রাখি। আর এই কারণেই তাঁর কথামতো নিয়মিত নিজেকে সাবধানে রাখতাম। ভোরবেলা উঠে মন শান্ত রাখতে যতটা বেশি সম্ভব ঈশ্বরচিন্তায় নিজেকে মগ্ন রাখতাম। জানতাম, দেহকে চালায় যে মন তাকে ঠিক রাখতে হবে। সঙ্গে নিয়মিত বই পড়া, গান শোনা। নিজে গান করি বলে, এই সময়ে নিজের রেওয়াজটা চালিয়ে গিয়েছি। নিজেকে সবসময়ে স্যানিটাইজ়ও করেছি। আর করোনার কারণে লকডাউনের ফলে স্বামীকে অনেকটা সময় ধরে কাছেও পেয়েছি। তাঁর কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছি— জীবনের সমস্ত পরিস্থিতিকে নিজের মতো করে তৈরি করে নাও।
আমার স্বামী একজন ব্লক অফিসের কর্মী। তাই সে সময়ে তিনি কাজের কারণে বা অন্য কারণে বাড়ির বাইরে গেলে যতটা সম্ভব পুরো শরীর কাপড়ে ঢাকা রাখতেন। উনি মাস্ক ছাড়া একমুহূর্ত থাকেন না। বাড়ি ফেরার পর আমার শাশুড়ি মা প্রথমে ওঁর হাতে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দিতেন। তার পর উনি সমস্ত জামাকাপড় সার্ফ দেওয়া গরম জলে চুবিয়ে রেখে দিতেন। যা পরের দিন কাচা হত। স্নান করে ঘরে ঢুকতেন। যাতে আমার গর্ভস্থ সন্তান বা আমি সংক্রমিত না হই। এখন সদ্যোজাত শিশুর খেয়াল রাখতে হচ্ছে, দায়িত্ব আরও অনেক বেশি। বাড়ির বাজার সপ্তাহে একদিন করা হয়।
প্রিয়াঙ্কা বেজ প্রামাণিক
বাঙ্গালঝি, চাপড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy