Advertisement
E-Paper

নীরবে নিভৃতে নহে

বিশেষত যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সোশ্যাল মিডিয়া নামক একটি দ্বিমুখী দেব-দানবকে জন্ম দিয়াছে। এই বস্তুটির এক পাশে সু-চিন্তার বলয় দিবারাত্রি গ্রথিত হইতেছে, অন্য পাশে সমানেই ফেনিল প্রবল হইয়া উঠিতেছে বিষাক্ত বিদ্বেষ। আর, কে না জানে, আলোর অপেক্ষা অন্ধকারের টান সাধারণ ভাবেই অনেক বেশি।

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১০
—ছবি এএফপি।

—ছবি এএফপি।

দশ দিক অন্ধকার করিয়া যুদ্ধ যুদ্ধ ধুম উঠিয়াছে। ধুমের রকম দেখিয়া কেহ হাল্লারাজার লম্ফঝম্পের কথা মনে করিতেছেন, কেহ লক্ষ্মণের শক্তিশেল-এর লড়াই-বাজনার কথা ভাবিতেছেন। কেহ অসুস্থ বোধ করিতেছেন— বিবমিষা হইতে অবসাদ, অনেক রকম রোগই এই সময়ে স্বাভাবিক। চারিপাশে চিরপরিচিত মানুষগুলির মধ্যে যে এই বিপুল জিঘাংসা আছে, এত দিন তাহা কেন বুঝিতে পারেন নাই বলিয়া কেহ আত্ম-অবিশ্বাসে ও হতাশায় নিমজ্জমান। এমন মানুষও আছেন, যাঁহারা বিবেচক বিচক্ষণের মতো জিঘাংসু সমাজের নিরাময়ে আত্মনিবেদন করিতেছেন, গালিগালাজ ও অযুক্তির বিরুদ্ধে ধৈর্য ও যুক্তি সাজাইতেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি কথা বলা যায়। কিছু সময় আছে যখন অস্ত্রের ঝঙ্কারের উত্তরে করজোড় শুভবুদ্ধির কোনও ভবিষ্যৎ নাই। বরং মানিয়া লওয়া ভাল যে অনেক মানুষের কাছেই জিঘাংসা একটি অতীব আকর্ষক প্রবণতা। (বাস্তব বা কল্পিত) শত্রুর বিরুদ্ধে শারীরিক বলপ্রয়োগের ভাবনাতেই তাঁহাদের জীবনের চরম সার্থকতা। ইঁহাদের ‘বুঝানো’ কোনও কালেই সম্ভব হয় নাই, এ কালেও হইবে না। যুক্তিকে ইঁহারা ষড়যন্ত্র ভাবেন, শান্তির আহ্বানকে ভাবেন দুর্বলতা। এই যুযুধান বিধ্বংসী আগ্রাসনকারী সমাজকে সুচিন্তার প্রলেপ দিয়া শান্ত করিবার আশা বাতুলতামাত্র।

বিশেষত যখন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সোশ্যাল মিডিয়া নামক একটি দ্বিমুখী দেব-দানবকে জন্ম দিয়াছে। এই বস্তুটির এক পাশে সু-চিন্তার বলয় দিবারাত্রি গ্রথিত হইতেছে, অন্য পাশে সমানেই ফেনিল প্রবল হইয়া উঠিতেছে বিষাক্ত বিদ্বেষ। আর, কে না জানে, আলোর অপেক্ষা অন্ধকারের টান সাধারণ ভাবেই অনেক বেশি। তাই ফেসবুক খুলিলেই শত্রুকে সমুদ্রে মিশাইয়া দিবার ডাক কর্ণপটহ বিদীর্ণ করিয়া দিবার উপক্রম করে। তুলনায় অনেক কম শোনা যায় যুদ্ধ পরিহার করিয়া সীমান্তের দুই পাশে অসহায় মানুষকে স্বস্তি দিবার আহ্বান। অসামরিক লক্ষ্যে বোমাবর্ষণ যে নেহাতই সামান্য, আসলে যে ভারতের কর্তব্য পাকিস্তানকে মানচিত্র হইতে মুছিয়া ফেলা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যতীত এই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দেশের দশ দিক এত দ্রুত পরিভ্রমণ করিতে পারিত না। হুহুঙ্কারপ্রিয় ‘দেশপ্রেমিক’দের এতখানি একত্রতার বোধও দিতে পারিত না।

এই প্রেক্ষাপটে বুঝিয়া লওয়া দরকার, যুদ্ধবিরোধী শান্তিকামী মানুষের কর্তব্য এখন কী। আলোর ডাকটিকে আরও প্রাঞ্জল, আরও সবল, প্রয়োজনে আরও ‘আগ্রাসী’ করিয়া তুলিতে হইবে। শান্তি চাহিবার মানুষের সংখ্যা যে কম নয়, তাঁহাদের মানসিক শক্তি যে অবজ্ঞার যোগ্য নয়, একত্রিত হইবার অভিলাষ যে পদদলিত করিবার মতো সামান্য নয়— সোশ্যাল মিডিয়া-সহ সমস্ত মাধ্যমকে ব্যবহার করিয়া এবং বহিঃসমাজে আত্মপ্রকাশ করিয়া সে কথা প্রমাণ করিতে হইবে। সত্যকারের দেশপ্রেম কাহাকে বলে, শান্তি কী ভাবে প্রতিষ্ঠা করিতে হয়, এই সব কথা আজ স্পষ্ট ও প্রবল ভাবে প্রচার করা জরুরি— যে শুভবুদ্ধির সমস্বর যুদ্ধবাদী উল্লাসের কদর্যতাকে ডুবাইয়া দিতে পারে। দুই প্রতিবেশী দেশের জনসমাজেই যুদ্ধবাদীদের দাপট অনেক দিন চলিতেছে। এখন দুই দেশেরই শান্তিবাদীদের সংগঠিত আত্মঘোষণা প্রয়োজন। প্রয়োজন ইতিবাচক আগ্রাসনের। শুভবুদ্ধির আগ্রাসন।

Pulwama Terror Attack India-Pakistan Conflict War Social Media
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy