Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Plastic

শাসন ও সোহাগ

অর্থনীতির একটি ধারা রহিয়াছে, যাহা ব্যক্তি ও সমষ্টির অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির পর্যালোচনা করিয়া থাকে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০৬:০৬
Share: Save:

কর্তৃপক্ষ বারণ করিলেই নাগরিক তাহা শুনেন না, প্রমাণ করিয়া দিয়াছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের কেনাবেচা আটকাইতে পুর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়াছে, পুরকর্তারা প্রচার ও ধরপাকড় অভিযানও করিয়াছেন, সাময়িক লাভ হইয়াছে মাত্র। অথচ এক বার ব্যবহার্য ও দূষণকারী অন্যান্য প্লাস্টিক জমা দিন, পরিবর্তে কিছু উপহার বাড়ি লইয়া যান— ঘোষণায় কাজ হইয়াছে। উপহার যৎসামান্য বা নগণ্য হইলেও দেখা গিয়াছে, নাগরিকেরা রাশি রাশি প্লাস্টিক জমা দিতে উপস্থিত। হয়তো তাঁহারা ইহার পর আর প্লাস্টিক আঁস্তাকুড়ে ফেলিবেন না, উপহারের আশায় জমা দিয়া যাইবেন।

অর্থনীতির একটি ধারা রহিয়াছে, যাহা ব্যক্তি ও সমষ্টির অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির পর্যালোচনা করিয়া থাকে। তাহার একটি তত্ত্ব বলে, ব্যক্তি বা সমষ্টির বিশেষ আচরণকে কখনও কখনও একটি বিশেষ অভিমুখে কিঞ্চিৎ ঠেলিয়া দিতে হয়। কিন্তু তাহা এমন উপায়ে, যাহাতে বাজারে প্রচলিত ও ক্রেতার বহুল ব্যবহৃত পণ্যের উপরে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিবার, বা উপভোক্তার পছন্দ-অপছন্দ রাতারাতি পাল্টাইয়া দিবার দরকার পড়ে না। কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ করিবে বটে, তবে তর্জন-গর্জন করিয়া নহে, প্রায় চোখেই পড়িবে না এমন সহজ উপায়ে। ‘ফাস্ট ফুড’ স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ বলিয়া উহা নিষিদ্ধ করিলেই তাহার ক্রয়বিক্রয় বন্ধ হইবে না, বরং চোখের সামনে নিয়ত ফলমূল রাখিলে হয়তো কাজ হইতেও পারে। প্লাস্টিকের ব্যাপারেও প্রশাসনের এই নীতি অবলম্বন জরুরি। প্লাস্টিক জমা দিলে বিনিময়ে উপহার বা পরিষেবায় ছাড় মিলিবে, কর্তৃপক্ষের এই অবস্থানে যে ফল হইতেছে তাহাই প্রমাণ করে, নাগরিকের অর্থনৈতিক বা সামাজিক আচরণকে পরিস্থিতি বিশেষে প্রশাসনের অভীষ্ট পথে একটু ঠেলিয়া আগাইয়া দিতে হয়। প্লাস্টিক যে হেতু শুধু স্থানিক নহে, বৈশ্বিক সমস্যাও, তাহাকে রুখিতে কঠোর নীতি আবশ্যক। প্লাস্টিকের ব্যাগ বিনামূল্যে না দেওয়া, তাহার উপর কর আরোপ সেই নীতি-অনুসারী। সঙ্গে ইহাও বুঝিতে হইবে, প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যগুলির দর অত্যধিক বলিয়াই হয়তো তিনি তাহা কিনিতেছেন না। তাই অনমনীয় নীতি আঁকড়াইয়া না থাকিয়া এমন পথে নাগরিককে লইয়া যাওয়া ভাল, যাহাতে তিনি আপনা হইতেই প্লাস্টিকের ব্যবহারে রাশ টানিবেন।

নীতির পাশাপাশি তাই বাজারকে সুকৌশলে চালনা করিয়া স্বপথে ও সুপথে লইয়া আসাও প্রশাসকের দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষ চাহিলে উপহার বা পরিষেবায় ছাড় দিতে পারেন; প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের ব্যবসায় উদ্যোগী দোকানি বা ব্যবসায়ীদের পুরস্কার বা সম্মাননা প্রদান করিতে পারেন। তাহাতে হয়তো সরকারের কিছু অর্থব্যয় হইবে, কিন্তু লাভ হইবে সুদূরপ্রসারী। পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবসায় বিক্রেতার উৎসাহ বাড়িবে, পাশাপাশি বাড়িবে ক্রেতার সচেতনতাও। জিনিস কিনিলেই যখন আর বিনামূল্যে প্লাস্টিক মিলিবে না, তিনিও তাহার ব্যবহার হইতে স্বাভাবিক ভাবেই পিছাইয়া আসিবেন। পুর কর্তৃপক্ষকে তাই বুঝিতে হইবে, নাগরিককে স্ববশে আনিতে কেবল রুদ্ররূপ নহে, হাস্যমুখটিও দেখানো প্রয়োজন। শাসন ও সোহাগ দুই-ই জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE