তিন দিন হয়ে গেল। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না ঢাকায় এ রকম একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে— যে শহরে কিনা আমি জন্মেছি, পড়াশোনা করেছি, মা মেয়ে স্ত্রী বোন নাতনি বন্ধু সহকর্মী সংগঠক, নানা ভূমিকায় জীবনের প্রতিটি দায়িত্ব পালন করেছি! আমার সারাটা জীবন এই শহরের আনাচেকানাচে জড়িয়ে আছে। হ্যাঁ, বেশি রাতে শুনশান এলাকা দিয়ে হাঁটতে আমারও ভয় করেছে, নিরাপদ মনে হয়নি। ভাঙাচোরা রাস্তা, অবিশ্রান্ত যানজট, জনপরিবহণের অভাব আর অবিরত ইভ টিজিং-এর উৎপাত আমাকে রাগিয়েও দিয়েছে। কিন্তু তবু আমার শহরটাকে আমি খুব ভালবাসি।
আর সেই শহরেই কিনা কুড়ি জন বিদেশি অতিথিকে সন্ত্রাসবাদীরা খুন করল। ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশের অতিথি-আপ্যায়নে বেশ নামডাক আছে। সবাই বলে আমরা নিজেরা না খেয়েও অতিথিকে তুষ্ট রাখি। আর সেখানে আমার ধর্মের লোকেরাই ধর্মের দোহাই দিয়ে অতিথিদের খুন করল। আমি দিনে পাঁচ বার নমাজ পড়ি, আমেরিকাতে থাকলেও সতেরো ঘন্টা উপোস করি। আমি কোথাও দেখিনি, আমার ধর্মে গৃহস্বামী অতিথিকে খুন করতে পারে, এমন কোনও বিধান আছে। যখন দেখেছি আমার মেয়ের বয়সি একটি মেয়েকে গুলি করে মারা হয়েছে, আমার হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছে। বেচারি মা-বাবার সঙ্গে ঈদের সময় দেশে এসেছিল। মনে পড়ে, বাংলাদেশে থাকাকালীন আমার মেয়েরা যখন আমেরিকা থেকে আমার কাছে আসত, তখন কত সময় ওরা বন্ধুদের সঙ্গে রাত্রে খেতে বেরোত, হয়তো কোনও সময় এই রেস্তোরাঁতেও গিয়েছে, কে জানে! যখনই চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড ভাবার চেষ্টা করছি আমার এমনটা হলে কী করতাম, ভয়ে ভেতরটা কেঁপে উঠছে। ওই নিষ্পাপ ছেলেটি বা ওই সুন্দরী মেয়েটি, দু’জনেই বাংলাদেশি, তাদের কী দোষ ছিল যে তারা এই সন্ত্রাসের শিকার হল?
এই দেশ বাংলাদেশ নয়। এই সন্ত্রাসবাদীরা বাংলাদেশি নয়। দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। এই জঙ্গিরা কেবল জন্মসূত্রেই বাংলাদেশি, স্বভাবে নয়। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য লড়াই করেছি। আমরা বাঙালি ঐতিহ্য, ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখব বলে ত্রিশ লক্ষ প্রাণ বলিদান দিয়েছি। আমরা সাম্প্রদায়িক নই। দয়া করে আমাদের ভুল বুঝবেন না।
দক্ষিণ এশিয়ার নারী সাংবাদিক সংগঠন এসএডব্লিউএম-বাংলাদেশ-এর জেনারাল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy