Advertisement
১১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয়

রৌপ্যমুদ্রা

বিদ্যা বালন বলিলেন, বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি বৈশিষ্ট্য তিনি যদি পরিবর্তন করিতে পারিতেন, তবে তাহা হইত, পুরুষ ও নারী অভিনেতাগণের পারিশ্রমিকের পার্থক্য। নায়কদের তুলনায় নায়িকারা অতি নগণ্য টাকা পান। এবং ইহা কেবল এই দেশের সিনেমাশিল্পের অভ্যাস নহে।

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

বিদ্যা বালন বলিলেন, বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি বৈশিষ্ট্য তিনি যদি পরিবর্তন করিতে পারিতেন, তবে তাহা হইত, পুরুষ ও নারী অভিনেতাগণের পারিশ্রমিকের পার্থক্য। নায়কদের তুলনায় নায়িকারা অতি নগণ্য টাকা পান। এবং ইহা কেবল এই দেশের সিনেমাশিল্পের অভ্যাস নহে। সম্প্রতি হলিউডের অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স একই অভিযোগ মার্কিন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তুলিয়াছিলেন। তাঁহার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটির অতি শুভ সমাধান হইয়াছে, পরের ছবিতে তিনি নায়কের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পারিশ্রমিক পাইতেছেন। কিন্তু জেনিফার এই মূহূর্তে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা, তাই তাঁহাকে প্রচুর পরিমাণ পয়সা দিতে রাজি থাকিলেই যে প্রযোজকরা নারী-পুরুষ পারশ্রমিকের ব্যবধান কমাইয়া আনিবেন তাহা ভাবিবার কারণ নাই। সিনেমা কেন, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এই গোত্রের বৈষম্য রহিয়াছে, কেহ বলেন অফিসে কাজ করিবার ক্ষেত্রেও একটি ‘স্বচ্ছ সীমানা’ রহিয়াছে, যাহা সাধারণ মহিলা কর্মীরা কখনওই অতিক্রম করিতে পারিবেন না। কেহ মহিলাদের টেনিসের ক্ষেত্রেও পুরস্কারমূল্যের পার্থক্যের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেন। বিদ্যা বালন এই প্রকারের বিবৃতি দিলে অনেকেরই নড়িয়াচড়িয়া বসিবার কথা। কিন্তু একটি বাক্য লইয়া আলোচনা বা বাহবা বিতরণ এক, আর তাহা প্রয়োগ করিয়া বহু দিনের ধারণা বদলাইয়া ফেলা ও সহসা অবহেলিতকে সম্মান জানাইতে শুরু করা আর এক। বলিউডি নায়িকারা বারংবার এই নালিশও করিয়াছেন যে অধিকাংশ ছবিই নায়ক-কেন্দ্রিক, নায়কেরই সুখ-দুঃখ-কীর্তি-ব্যর্থতা লইয়া চিত্রনাট্য ব্যস্ত থাকে, সঙ্গিনী রূপে নায়িকা থাকিলেও, তাঁহাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সম্ভবত প্রযোজকদেরও যুক্তি: যদি নায়ককেই ছবির কেন্দ্র মনে করা হয়, নায়িকারা থাকেন কেবল শোভা বাড়াইতে ও নাচিতে গাহিতে, তবে কেন পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে তাঁহাদের সাম্য থাকিবে? অবদান অনুযায়ীই তো সাম্য নির্ধারিত হইবে।

বিদ্যা অবশ্য ‘ডার্টি পিকচার’, ‘কুইন’, ‘নো ওয়ান কিল্‌ড জেসিকা’ ছবিগুলির উল্লেখ করিয়া বলিয়াছেন, এইগুলির মাধ্যমে হিন্দি ছবির মূল স্রোতে পরিবর্তনের স্পষ্ট আভাস লক্ষ করা যাইতেছে। ইদানীং কোনও বলিউডি নায়িকা যদি মনে করেন, নিজেকে ভোগ্যবস্তু হিসাবে পরদায় উপস্থাপিত হইতে দিবেন না, তিনিও ইন্ডাস্ট্রিতে নানা সমান্তরাল ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে টিকিয়া থাকিতে পারিবেন। নানা ধরনের ছবি নানা ধরনের নারীকে ঘিরিয়া গড়িয়া উঠিতেছে। কারণ সমাজে নারীরা এখন নিজের মতানুযায়ী বাঁচিবার পরিসর তৈয়ারি করিয়াছেন, এবং সমাজই তো সিনে-পরদায় প্রতিফলিত হয়। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়িয়া যাইতে পারে— এক বিদেশি পরিচালক ভারতে আসিয়া রাজ কপূরের ছবি দেখিয়া মহোৎসাহে তাঁহার পর্যবেক্ষণশক্তির গুণকীর্তন করিয়া বলিয়াছিলেন, রাজ ছবিতে তাঁহার প্যান্টটি গুটাইয়া পরিয়াছেন, আর পথে বাহির হইয়া বিদেশি পরিচালক দেখিয়াছেন, লক্ষ লক্ষ যুবা ঠিক অমনই প্যান্ট গুটাইয়া হাঁটিতেছেন। এক ভারতীয় পরিচালক শুনিয়া হাসিয়া বলিয়াছিলেন, কার্য-কারণটি উলটা। রাজ ওই ফ্যাশন চালু করিয়াছেন বলিয়া, দেশের অধিকাংশ যুবক তাহা নকল করিতেছে। তাই এই সমাজে, ছবি বাস্তবকে অনুসরণ করে না বাস্তব ছবিকে, তাহা বলা শক্ত। সমাজে নারীগণ নিজ শর্তে বাঁচিবার জীবন খুঁজিয়া নিলে, ভারতীয় ছবিও তাহা দেখাইবে, নিশ্চিত নহে। যেই দিন এই ধরনের ছবি ব্যবসায়িক ভাবে মার খাইবে, সেই লগ্নেই প্রযোজকদের সচেতনতা বাষ্পীভূত হইয়া যাইবার প্রখর সম্ভাবনা। তদুপরি, ভারতীয় নারীদের মধ্যে এই বিজয়িনীদের সংখ্যা আদৌ তাৎপর্যপূর্ণ কি না, তাহাও বিবেচ্য। অধিকাংশ নারী যদি মার খাইতে থাকে, তবে কতিপয় আদর্শবতীর মুক্তি লইয়া জনমনোরঞ্জক ইন্ডাস্ট্রি ভাবিত হইবে না।

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

ইদের দিন ইরাকে গাড়িবোমা ফেটে প্রাণ হারালেন শতাধিক মানুষ। উৎসবের দিনগুলোকে জঙ্গিরা টার্গেট করে, কারণ জমায়েত বেশি হয়। ভিড় যত বেশি, মৃত্যু তত বেশি, উগ্রপন্থীদের মজাও সেই অনুপাতে লাফায়। হয়তো এই পৃথিবীতে সরকারের উচিত ঝাড়েবংশে সব উৎসব তুলে দেওয়া। আনন্দময় সব ভিড়কে নিরাপদ রাখা তো কোনও প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। অবশ্য এই নিয়ম চালু করলে ভারতে প্রথমেই আইপিএল বন্ধ করে দিতে হয়, কারণ সে-ই ‘ইন্ডিয়ার উৎসব’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE