থেরেসা মে
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলাত-সফর করিবেন, আর তাহা নাটকীয় হইবে না, এমন কথা কেহ সুস্বপ্নেও ভাবে নাই। তবে কিনা, পদে পদে এমন চমকপ্রদ নাটকও হয়তো বিশ্বদুনিয়া আশা করে নাই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে অতিথি প্রেসিডেন্টকে লাল কার্পেট অভ্যর্থনা দিবার আগেই শোনা গেল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সংবাদপত্র-সাক্ষাৎকারে বলিয়াছেন, প্রধানমন্ত্রী মে ব্রেক্সিট বিষয়ে ট্রাম্পের পরামর্শ অগ্রাহ্য করিয়া ভুল করিতেছেন, মে-র প্রস্তাবিত ব্রেক্সিটের ফলে মার্কিন দেশের সহিত ব্রিটেনের সম্পর্ক বিনষ্ট হইতে বাধ্য। দুই শীর্ষনেতা বৈঠকে বসিবার আগেই এমন একটি মন্তব্য প্রকাশ্য হইয়া পড়িলে বৈঠক বিষয়ে নানা আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু তাহা বাতাসে ভাসাইয়া কথোপকথন সুষ্ঠু ভাবেই ঘটিল। ট্রাম্প দাবি করিলেন, সাক্ষাৎকার মিথ্যা, বৈঠকই সত্য। তিনি নাকি মে-র ব্রেক্সিট সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করেন। এবং তিনি নাকি ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের বন্ধুতার জন্য মুখাইয়া আছেন। এই চমৎকার আস্থা-বিতরণের পরতে পরতে মিশিয়া রহিল উদগ্র আত্মশ্লাঘা। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রেসিডেন্ট বলিলেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী কালে ব্রিটেন-ইউরোপের সম্পর্ক যেমনই দাঁড়াক, তিনি কিছুই ‘মনে করিবেন না’।
‘মনে না করিবার’ এই ঘোষণা দৃষ্টিকটু হইতে পারে, তবে ইউরোপের সহিত ব্রিটেনের নূতন সম্পর্ক-নির্মাণের ক্ষেত্রে আমেরিকার ভয়ঙ্কর প্রাসঙ্গিকতা অগ্রাহ্য করা মুশকিল। ভয়ঙ্কর, কেননা ট্রাম্প-মিত্র মে-ও আন্তরিক ভাবে অবগত যে ব্রেক্সিট যতই শক্তপোক্ত হইবে, ব্রিটেন ততই ‘একা’ হইবে, ট্রাম্পের আমেরিকার পক্ষে ব্রিটেনকে কব্জা করা ততই সহজ হইবে। সে দিক হইতে, ইউরোপের সহিত বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সম্পর্ক রাখিয়া ‘নরম ব্রেক্সিট’-এই হয়তো স্বার্থরক্ষার সম্ভাবনা অধিক। কেবল মার্কিন বা বহির্বিশ্ব যোগের ক্ষেত্রে নহে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক যুক্তিতেও ক্রমে নরম ব্রেক্সিটের দিকেই ঝুঁকিতেছেন মে। তাঁহার এই পরিবর্তিত ব্রেক্সিট নীতির দামটিও দিতে হইতেছে চড়া। সম্প্রতি তাঁহার ক্যাবিনেটের দুই শীর্ষ সদস্য, বিদেশমন্ত্রী বরিস জনসন ও ব্রেক্সিট সচিব ডেভিড ডেভিস পদত্যাগ করিয়াছেন। দুই জনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহিত সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করিতে বলিয়াছিলেন। কিন্তু মে সেই প্রস্তাব না মানিয়া অভিবাসন এবং অর্থনৈতিক আদানপ্রদান, দুই ক্ষেত্রেই মধ্যমপন্থা লইতে চাহেন।
টোরি সরকারের এই দ্বিভাজন শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়াইবে? ডেভিস ও জনসনের সমর্থনে পার্টির কট্টরপন্থী সদস্যরা সরব হইলেও বিদ্রোহের পথে হাঁটেন নাই। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নূতন ভারপ্রাপ্ত সচিব জাভিদ এবং ব্রেক্সিট সচিব হিসাবে দমিনিক রাবের নিয়োগ লইয়া বিরাগের মেঘ ঘনাইয়া উঠিতেছে। ভুলিলে চলিবে না যে, যদিও অনেক আঘাত-সংঘাতের পর ক্রমনমনীয় মে ব্রিটেনে ইউরোপীয় অভিবাসীদের ‘গুরুত্ব’ মানিয়াছেন, ইউরোপীয় ও আফ্রো-এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে একটি স্তরগত পার্থক্যও তিনি স্পষ্ট করিয়াছেন। এই নব-জাতিবিদ্বেষী সরকার ‘নরম ব্রেক্সিট’ করিলে হয়তো দুই কুলই হারাইবে। লিবারালদেরও কাছে টানিতে পারিবে না। কনজ়ারভেটিভদেরও দূরে ঠেলিবে। সঙ্কট হইতে সঙ্কটে ভাসমান ব্রিটেনের রাজনীতির ভেলাটি কোথায় গিয়া ঠেকে, দেখা যাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy