Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

এ ভাবে নির্বাচন হয় না, গণতন্ত্র কলঙ্কিত হয়

পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষিত হয়েছে মাত্র। ভোটগ্রহণ তো অনেক দূরের কথা, নির্বাচনী প্রচার পর্বও এখনও সে ভাবে শুরু হয়নি। সবে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাতেই যে পরিমাণ হিংসা দেখছে গোটা বাংলা, তা অন্যান্য রাজ্যে তো বটেই, এ রাজ্যেও বেনজির।

মনোনয়ন ঘিরে হিংসার ছবি রাজ্যজুড়ে। নিজস্ব চিত্র

মনোনয়ন ঘিরে হিংসার ছবি রাজ্যজুড়ে। নিজস্ব চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩৬
Share: Save:

এ বার একটা পাঠ নেওয়া দরকার পশ্চিমবঙ্গের। গণতন্ত্র কাকে বলা হয় বা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ঠিক কী রকম, সে সব একটু ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। দীর্ঘ অনভ্যাসে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সংস্কৃতি বোধহয় ভুলতে বসেছে এ রাজ্য। তবে তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। গুজরাতের কাছ থেকে শিখে নিতে পারে বাংলা। শিখে নিতে পারে হরিয়ানা বা তামিলনাড়ুর কাছ থেকে, মহারাষ্ট্র বা ওড়িশার কাছ থেকে। শিখে নেওয়া যেতে পারে এমনকী প্রতিবেশী বিহার-ঝাড়খণ্ডের কাছ থেকে বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কাছ থেকেও। কারণ নির্বাচন ঘিরে এত অনিয়ম, এত হিংসা, এত রক্তপাত ভারতের আর কোনও অঙ্গরাজ্যে এখন দেখা যায় না।

পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষিত হয়েছে মাত্র। ভোটগ্রহণ তো অনেক দূরের কথা, নির্বাচনী প্রচার পর্বও এখনও সে ভাবে শুরু হয়নি। সবে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাতেই যে পরিমাণ হিংসা দেখছে গোটা বাংলা, তা অন্যান্য রাজ্যে তো বটেই, এ রাজ্যেও বেনজির।

নির্বাচন ঘোষিত হলেই পরিবেশ ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে উঠতে থাকে বাংলায়। এ কথা মিথ্যা নয়। এ সত্য খুব নতুনও নয়। বাম জমানা থেকেই মূলত ধারাবাহিক ভাবে স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল বাংলার এই নির্বাচনী চরিত্র। সময় যত গড়িয়েছে, নির্বাচনী হিংসা তত বেড়েছে বাংলায়। কিন্তু ক্ষমতার অলিন্দে মাত্র বছর সাতেক কাটিয়েই যে রকম নির্বাচন বাংলাকে দেখাচ্ছে তৃণমূল তেমনটা বাম জমানাতেও সম্ভবত হয়নি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ঔপনিবেশিক ভারত থেকে গণতান্ত্রিক ভারতে উত্তরণের যে সংগ্রাম, বলাই বাহুল্য সে সংগ্রামে বাংলা নেতৃত্ব দিয়েছিল। অতএব, বাংলায় গণতন্ত্রের সংস্কৃতি কখনও ছিল কি না, বাংলা আদৌ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কি না, এ সব প্রশ্ন তোলার অবকাশই নেই। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যে আজ সাংঘাতিক ভাবে বিপর্যস্ত, তা নিয়েও কোনও সংশয় নেই।

অতএব, বাংলাকে আবার ঝালিয়ে নিতে হবে গণতন্ত্রের পাঠ। অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচন কোন উপায়ে অবাধে, শান্তিতে এবং নির্বিঘ্নে মিটে যায়, বাংলাকে তা বোঝার চেষ্টা করতেই হবে। কারণ যে ভাবে নির্বাচন হচ্ছে বাংলায়, কোনও সভ্য দেশে সে ভাবে নির্বাচন হতে পারে না।

আরও পড়ুন: মারের মুখেও মনোনয়ন, তৃণমূলের ঠিক পরেই বিজেপি

আরও পড়ুন: প্রতিরোধ বিজেপির, আক্রান্তের ঐক্যের ডাক

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে যে হিংসার ছবি তৈরি হচ্ছে, তা বাংলার জন্য কলঙ্কজনক, গণতন্ত্রের জন্যও কলঙ্কজনক। এই কলঙ্কের দায় কার? প্রশ্ন উঠবেই। সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে, দায় বাংলার মানুষের। আরও একটু সুনির্দিষ্ট করে বললে, এই কলঙ্কের দায় বাংলার রাজনৈতিক কর্মীদের। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলেরই দায়বদ্ধতা রয়েছে নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু রাখার। কিন্তু নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাখার দায় সবচেয়ে বেশি করে বর্তায় শাসক দলের উপরে, সরকার তথা প্রশাসনের উপরে, নির্বাচন কমিশনের উপরে। নাগরিক নির্ভয়ে এবং বিনা বাধায় তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন, এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি সুনিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে এবং প্রশাসনকে। রাজ্যের বর্তমান প্রশাসন তেমনটা সুনিশ্চিত করতে চায় কি না, বলা শক্ত। নির্বাচন কমিশন হয়ত চায়। কিন্তু কমিশন এখনও পর্যন্ত ব্যর্থই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE