একটি জরুরি ঘোষণা শোনা গেল ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের মুখে। বলিয়াছেন, তাঁহার দল বিজেডি আসন্ন নির্বাচনে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করিবে। অর্থাৎ, প্রতি ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে এক জন মহিলা। তবে, ভুলিয়া যাওয়া যাইবে না, ষোড়শ লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদদের প্রায় ৩৫ শতাংশই ছিলেন মহিলা। তৃণমূলের সাম্প্রতিক প্রার্থী তালিকায় মহিলার সংখ্যা তো নবীনের ঘোষিত ৩৩ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই আগাইয়া। ওড়িশার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা নবীন পট্টনায়কের পিতা বিজু পট্টনায়ক ত্রি-স্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের পথে হাঁটিয়াছিলেন। তবে, ইহাও সত্য, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটিতে আরও বেশি সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা যে ভাবে নানা সময়ে শোনা গিয়াছে, সেই অনুপাতে প্রয়োজনটি কার্যে পরিণত হয় নাই। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার মতো রাজ্য ব্যতিক্রম মাত্র। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে লোকসভা ও বিধানসভাগুলিতে ৩৩ শতাংশ আসন নারীর জন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিলটি এখনও পাশ হয় নাই।
নবীন পট্টনায়কের কৃতিত্ব এইখানে যে, নারীদিবস উপলক্ষে সারশূন্য ঢক্কানিনাদের বদলে তিনি অন্তত নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গটি তুলিলেন। এমনও বলিলেন যে, ভারত যদি দুনিয়াতে নেতৃস্থানীয় হইতে চায়, আমেরিকা ও চিনের মতো উন্নত হইয়া উঠিতে চায়, তবে নারীর ক্ষমতায়নই একমাত্র পথ। অন্তর্নিহিত অর্থটি স্পষ্ট: দেশ চালাইবার কর্মকাণ্ডে নারীর যোগদান নিশ্চিত করিতে না পারিলে ক্ষমতায়নের বুলি আওড়ানো অর্থহীন।
প্রশ্ন উঠিতে পারে এবং উঠিতেছেও— মহিলাদের সংরক্ষণ কেন? যে অর্থে সামাজিক সুবিধা হইতে বঞ্চিত অনগ্রসর শ্রেণি এবং সংখ্যালঘুর সংরক্ষণ প্রয়োজন, মহিলারা তো সেই শ্রেণিতে পড়েন না। সেই অর্থে তাঁহারা সংখ্যালঘু নহেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁহাদের কার্যত পুরুষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়া দেওয়া কৃতিত্ব প্রমাণ করে, তাঁহারা অনগ্রসরও নহেন। তাহা হইলে সংরক্ষণ করিয়া ক্ষমতায়নের প্রয়োজন কী? প্রতিযোগিতা হউক। পুরুষদের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতিয়া সেই ক্ষমতা অর্জন করুন নারীরা। ইহার প্রতিযুক্তি হইতে পারে, প্রতিযোগিতাটিই যেখানে অসমান, সেখানে দুর্বলকে কিছু বাড়তি সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন আছে। উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, নারীরা মনুষ্যোচিত মর্যাদাটুকুও পান না। সংরক্ষণের গুরুত্ব এইখানেই। ক্ষমতায়ন তো অনেক ভারী এবং দূরের কথা। নারীর ন্যূনতম অধিকারগুলি বুঝাইয়া দিতে, এবং সমাজে তাঁহাকে স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করিতেও সংরক্ষণ প্রয়োজন। যে সমাজে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যাধিক্য, সেখানে তাঁহাদের বঞ্চনা, দাবিদাওয়াগুলি সাধারণত অধিক গুরুত্ব পায়। রাজনৈতিক দলগুলিকে বুঝিতে হইবে যে, তাহারা যদি নিজস্ব সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, তাহাই অধিক বাঞ্ছনীয়। অধিক সম্মানেরও। নবীন পট্টনায়ক অন্য দলগুলিকেও একই পথে হাঁটিবার ডাক দিয়াছেন। এখন প্রশ্ন হইল, নারীর তথা দেশের সার্বিক উন্নয়নকে পাখির চক্ষু ধরিয়া সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া উচিত, না কি বিষয়টিকে নিছকই বিজেডির ‘নির্বাচনী ভড়ং’ বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া উচিত, তাহা অন্য রাজনৈতিক দলগুলিই বিবেচনা করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy