ভ র্তুকি দিতে সরকারের জুড়ি নাই। সেই সহজ পদ্ধতি এই বার সরকার শিক্ষাতেও লাগাইতেছে। নম্বরে ভর্তুকি দিয়া মহিলাদের আইআইটিতে ভর্তি করিবে মানবসম্পদ মন্ত্রক। তাহার ফল কী হইবে, আদৌ তাহাতে ছাত্রীদের তথা দেশের তরুণীদের উপকার হইবে কি না, সে প্রশ্ন কেহ করে নাই। করিলেও উত্তর মিলিবে না। অথচ তফশিলি জাতি, জনজাতির পড়ুয়াদের জন্য আসন সংরক্ষণ করিবার অভিজ্ঞতা হইতে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত ছিল। শিক্ষাটি এই রূপ: নম্বরে ভর্তুকি দিলে সরকারের কাজটি সহজ হয়, পড়ুয়াদের হয় না। যে ছাত্রীরা প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় আইআইটি-তে পড়িবার অধিকার অর্জন করিতে পারিবে না, তাহাদের জন্য খিড়কির দরজা খুলিয়া নারীর ক্ষমতায়নের পথে দুই কদমও হাঁটা হইবে না। তফশিলি জাতি, জনজাতি এবং অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা হইতে এই কথাটি এত দিনে দ্ব্যর্থহীন ভাবে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। প্রশ্নটি মেধার নহে। উচ্চবর্ণের বিত্তবান পরিবারগুলি সন্তানের শিক্ষাখাতে যে বিপুল খরচ করে, প্রায় কোনও নিম্নবর্গের পরিবারেই তাহা সম্ভব নহে। আবার, পুত্রসন্তানের শিক্ষায় কোনও পরিবার যত খরচ করে, পিতৃতন্ত্রের নিয়ম নিশ্চিত করিয়া দেয় যে মেয়েদের জন্য খরচ তাহার তুলনায় ঢের কম হইবে। বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদির অসাম্যের প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীর উপর। তাহাদের গোড়ায় গলদ থাকিয়া যায়। উচ্চশিক্ষার খিড়কির দরজা খুলিয়াও লাভ হয় না।
প্রবেশের শর্ত সহজ করা হইলেও পরীক্ষা পাশ করিবার শর্ত হইতে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নহে। বিশেষত আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানে। সকলের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়া, পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করিয়াই মেয়েদের পাশ করিতে হইবে। অতএব তাহাদের গাছে তুলিয়া মই কাড়িবার অর্থ কী? সকল রাজ্যে, সকল জেলায় সরকারি স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান-সহ সকল মৌলিক বিষয়গুলির পাঠদান উন্নত করা প্রয়োজন। তাহার ভিত্তিতেই মেধাবী পড়ুয়ারা যে কোনও প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবে। যাহা সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তেমন সহায়তা দিক সরকার। প্রয়োজনে মেয়েদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হউক। তাহাদের যোগ্য করিয়া তুলিতে যথাকর্তব্য সরকার করুক। সকলের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে আপন স্থানটি অর্জন করিতে পারে, সে-ই অর্জিত স্থানটির সদ্ব্যবহার করিতে পারিবে।
ইহার সত্যতা সরকারি কর্তাদের অজানা নহে, কিন্তু সে কাজটি কঠিন। সরকার সহজে কিস্তিমাত করিতে চাহে। সাম্যবাদী ভাবমূর্তিটি তুলিয়া ধরিবার সহজ উপায় উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে দলিত-আদিবাসী ও মহিলাদের অনুপাতে বৃদ্ধি। তাহার জন্য আসন সংরক্ষণের বিধান, এবং যেখানে তাহা সম্ভব নহে তখন বাড়তি আসনের পত্তন, ইহাই সরকারের কৌশল। আইআইটি-তে আসন বাড়াইয়া তাহা মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট করিতেছে সরকার, যে হেতু লিঙ্গের ভিত্তিতে সংরক্ষণ সম্ভব নহে। আগামী তিন বৎসরে আইআইটিতে ছাত্রীভর্তির নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখিয়াছে সরকার। কী উদ্দেশে এই লক্ষ্য নির্ধারিত হইল, ইহার সহিত ছাত্রীদের দক্ষতা-পারদর্শিতা নিশ্চিত করিবার সম্পর্ক কী, কেহ জানে না। বহু প্রজন্মের বৈষম্য তিন বৎসরে দূর করিবে কেন্দ্রের সরকার। ইহাই নাকি সমাজ-সংস্কারের সহজপাঠ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy