খেয়াল করলে দেখা যায়, যেখানেই কেচ্ছা, সেখানেই এক জন ভিলেন হাজির। বস্তুত, কেচ্ছার কেন্দ্রে সেই ভিলেন। হুতোম লিখছেন, ‘…কিছু দিনের মধ্যে পদ্মলোচন কলিকাতা সহরের একজন প্রধান হিন্দু হয়ে পড়েন— তিনি হাই তুল্লে হাজার তুড়ি পড়ে— তিনি হাচ্লে জীব! জীব! জীব! শব্দে ঘর কেঁপে ওঠে...। ক্রমে পদ্মলোচন নানা উপায়ে বিলক্ষণ দশ টাকা উপায় কত্তে লাগলেন, অবস্থার উপযুক্ত একটি নতুন বাড়ি কিনলেন, সহরের বড় মানুষ হলে যে সকল জিনিসপত্র ও উপাদানের আবশ্যক, সভাস্থ আত্মীয় ও মোসাহেবরা ক্রমশ সেই সকল জিনিস সংগ্রহ করে ভাণ্ডার ও উদর পুরে ফেল্লেন, বাবু স্বয়ং পছন্দ করে (আপন চক্ষে সুবর্ণ বর্ষে) একটি রাঁড়ও রাখলেন...।’
পদ্মলোচন এখানে সেই ‘ভিলেন’। যে ‘ভিলেন’ সে যুগে যেনতেনপ্রকারেণ প্রচার চেয়েছিলেন। যে কারণেই তাঁর ওই বড় বাড়ি কেনা এবং যৌনকর্মী রাখা।
তলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, রূপঙ্কর এবং রোদ্দূরও একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে। যে (অব) স্থানটির নাম ‘প্রচারের অলিন্দ’। লক্ষ করে দেখুন, কেকে-কে নিয়ে ভিডিয়োটির আগে রূপঙ্করের কোনও ভিডিয়োর এত ‘ভিউ’ হয়নি। কেকের প্রয়াণ এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ জানান দিচ্ছে, রূপঙ্কর জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরেও এত প্রচার পাননি। অন্তত তাঁকে জনপরিসরে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে কোনও প্রশ্ন না-নিয়ে লিখিত বিবৃতি পাঠ করতে হয়নি।
প্রচার বস্তুত, অতি বিষম বস্তু। একটি কেক প্রস্তুতকারক সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল থেকে রূপঙ্করের গান বাদ দেওয়া নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, একটি রেস্তরাঁ সম্প্রতি লিখিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, তারা আর রূপঙ্করের গান বাজাবে না। কেক প্রস্তুতকারী সংস্থাটি তাদের বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল থেকে রূপঙ্করের গান বাদ দেওয়ার চিন্তার কথা সর্বসমক্ষে জানিয়ে কি আসলে প্রচারের আগুনে রুটি সেঁকতে চায়নি? তারা দাবি করবে, না! কিন্তু অন্তর্লীন এক গুঞ্জন কানে-কানে বলে যাবে, এ সবেরই আসল লক্ষ্য কিন্তু প্রচার। যত বার জনপরিসরে এই ঘটনা আসবে, খিল্লিপ্রিয় বাঙালি তত বারই বলবে, ‘‘ঠিক হয়েছে! একেবারে ঠিক করেছে!’’
সেই গুঞ্জনই বলছে, রূপঙ্কর খানিক প্রচার পেতেই হতাশা (এবং নাকি অভিমান) থেকে গায়ক কেকে-কে নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন (এ-ও ঠিক যে, রূপঙ্কর মাঝেমধ্যেই তাঁর ভিডিয়ো ফেসবুকে পোস্ট করে থাকেন)। ঘটনাচক্রে, রূপঙ্করের কেকে-ভিডিয়ো জনসমক্ষে আসার কয়েক ঘণ্টা পরেই প্রয়াত হন কেকে। নাটকীয় ভাবে। কিন্তু সে তো একেবারেই ঘটনাচক্র। নিছক কাকতালীয় কোনও ঘটনাকে এত গুরুত্ব দিতে হবে কেন?
একই কথা কি খাটে না রোদ্দূরের ক্ষেত্রেও? তাঁর নিজস্ব একটা ‘মোক্সাবাদ’ আছে বটে। কিন্তু তিনি কি মূলত প্রচারের জন্যই এ সব করেন না? যাতে বাঙালি কিঞ্চিৎ খিল্লির রসদ পায়? তাঁর সাম্প্রতিক ভিডিয়োর ‘ভিউ’ও তো সে কথাই বলছে। এক সাক্ষাৎকারে রোদ্দূর বলেছিলেন, তিনি অভিনেতা। তিনি একটি লোকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। যে লোকটি চূড়ান্ত বিভ্রান্ত ও হতাশাগ্রস্ত।