একটা সার সত্যি হল, চুক্তি চাষে কৃষকের লাভেরই সম্ভাবনা, গতকাল আলোচনা করেছিলাম (‘অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি’, ২২-২)। প্রসঙ্গত বলি, একটি কর্পোরেট সংস্থার থেকে কলাগাছের চারা নিয়েছিলেন দশঘরার সুনীল সামন্ত। পাঁচ বছর কলা দেওয়ার চু্ক্তি সই করেছিলেন। কিন্তু দিচ্ছেন না। হুগলির কলাচাষিদের নালিশ, ট্রাকের খরচ তাঁদের দিতে হবে, এই শর্ত তাঁরা জানতেন না। তাই চাষিরা কলা বিক্রি করছেন ফড়েকে। সে নিয়ে যায় বাগান থেকে, দর আরও ভাল দেয়। কোম্পানির দামে ক্ষতি হয় না, তবে লাভ কম। কোম্পানি কী বলছে? “বলছে, দরে পোষালে এসো”, বললেন সুনীল।
খোলা বাজার আর বাণিজ্যিক সংস্থার এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চাষির লাভ। ঝুঁকি হল চুক্তির ‘লুকোনো শর্ত’। আবার চুক্তির ফসল চাষি অন্যত্র বিক্রি করে দেন, এটা কোম্পানির ঝুঁকি। দু’তরফেই একটা খেলা চলে। উৎপাদন কম হলে ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ হওয়া চাষিও ফিরে আসে ভেন্ডারের তালিকায়। বেশি হলে চাষি কোম্পানিকে চাপাচাপি করে, নির্দিষ্ট পরিমাণের চাইতেও বেশি কিনতে।
দেখা যাচ্ছে, “চুক্তি চাষ কি ভাল?” প্রশ্নটার মানে হয় না। কেমন কোম্পানি, কী শর্তে চুক্তি, প্রশ্ন সেখানে। বাঁকুড়ার ময়নাপুর, বিষ্ণুপুরের কিছু যুবক এলাকার চাষিদের থেকে আলু নিয়ে কয়েক কোটি টাকার আলু দেন এক কোম্পানিকে। একটি টাকাও দেয়নি সেই কোম্পানি। ২০১৩ সালের মামলা আজও ঝুলছে আদালতে। “আমরা একুশ দিন ধর্না দিয়েছি। এলাকার বিধায়ক, সাংসদদের হাতে-পায়ে ধরেছি। কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছে আমাদের”, ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন দেবাশিস দে, প্রতারিত ভেন্ডার। চাষিদের টাকার তাগাদা থেকে বাঁচতে দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া ছিলেন দেবাশিস। “তার পর আর এক কোম্পানির ভেন্ডার হলাম। একটু একটু করে পায়ের তলার মাটি ফিরে পেয়েছি।”