ভারতের ইতিহাস যে সময় থেকে শুরু, পুরাণের শুরু তার বহু আগে থেকেই। পুরাণ তাই জড়িয়ে আছে এ দেশের ভৌগোলিক বিশেষত্বে, যেন তার স্পর্শ রেখে গিয়েছে। ভারতের ভূপ্রকৃতি কেমন? উত্তরে বিশাল হিমালয় পর্বতমালা, দক্ষিণে তিন দিকে সমুদ্র, দেশ জুড়ে অজস্র নদীনালা, অনেক মালভূমি এবং বিরাট সমভূমি অঞ্চল। আছে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী। আছে মানুষ, তার হরেক জীবিকা নিয়ে। সুবিপুল এই দেশে ধর্ম, ভাষা, জাতির বিবিধ বৈচিত্র থাকলেও শেষাবধি তৈরি হয়েছে একতা। পরস্পরের প্রতি নির্ভরতার সূত্রে। উত্তরের পাহাড় আর দক্ষিণের সমুদ্রের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে নদী, মাটি।
কিন্তু, এই সমন্বয়ের উপরেও আঘাত আসেই। কখনও বহিঃশত্রুর থেকে, কখনও অন্তঃকলহ। যা যা আমাদের গর্বের, তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অর্থনৈতিক লাভের চিন্তা, সাধারণ মানুষের অজানতেই। মাঠের সবুজ আর নদীর জল মানুষকে পূর্ণতা দেয়। অথচ, মানুষের নিজের কতখানি প্রয়োজন আর কোথা থেকে শুরু বাহুল্য, সেই সীমারেখার বিচার না করেই চলে নগরায়ণ ও আধুনিকীকরণ। অতএব, প্রকৃতির উপর নেমে আসে প্রবল আঘাত।
এক সময় বহিঃশত্রু এবং হিমেল হাওয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে এসেছে হিমালয়। আবার, তার দুর্গম অঞ্চলে দেশের নানা জায়গা থেকে পৌঁছেছেন পুণ্যার্থীরা। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বহু কষ্ট স্বীকার করে হিমালয়ে চড়েছেন দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুরা। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় কেদারনাথ আর বদ্রিনাথের কথা। পাহাড়ি নদীর উৎসস্থলে এই দুই মন্দির স্থাপিত হয়েছিল প্রায় তিন হাজার বছর আগে। তখনও বহু দূর থেকে মানুষ যেতেন সেখানে— সে যুগের সর্বোচ্চ তীর্থস্থান। ভক্তি-ভালবাসার টানেই মানুষ উঠে যেতেন ১২,০০০ থেকে ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায়। এর পর নানা ধরনের যানবাহনের বন্দোবস্ত হল। তবে পুরোটা নয়, খানিক পথ সে ভাবে গিয়ে বাকি দুর্গম অংশটুকু পায়ে হেঁটে। তীর্থযাত্রী এবং পর্যটক, দুইয়ের সংখ্যাই ক্রমশ বাড়ল। তাঁদের সুবিধার্থে, তাঁদের কষ্ট লাঘব করতে রাস্তা চওড়া হল। কাটা পড়ল গাছ। দিন দিন আরও বাড়ল যানবাহনের সংখ্যা। সে সবের যাতায়াতের সুবিধা করে দিতে তৈরি হতে লাগল আরও আরও টানেল, ব্রিজ। এ সব তৈরি হল পাহাড় কেটে। এক দিন সোজা গাড়ি করে তীর্থস্থানের দোরগোড়া অবধি পৌঁছে যাওয়াও আর অসম্ভব রইল না। কিন্তু, এ বার প্রকৃতি আপত্তি জানাল। মতামত জানান দিল ভূমিকম্প আর ভূমিধসের মাধ্যমে।