অ সুস্থ লেনিন যখন ট্রটস্কির মধ্যে ভবিষ্যতের নেতাকে দেখছেন, তখন স্বয়ং ট্রটস্কির উপলব্ধি— ইহুদিকে নেতা করলে সোভিয়েট রাষ্ট্র ভেঙে পড়তে এক মাসও লাগবে না। অধস্তন কমরেডও যে বলেন: “ইহুদি হলেও— কী চমৎকার মানুষ!”
স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতেও কখনও কোনও মুসলমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ভাবতে পারেননি। ‘ডিবেটিং মুসলিম পলিটিক্যাল রিপ্রেজ়েন্টেশন’ প্রবন্ধে হিলাল আহমেদ ১৯৫২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত লোকসভা ভোট ধরে ধরে দেখিয়েছেন, জনসংখ্যার হিসেবে সংসদে কত জন মুসলমান প্রতিনিধি থাকা উচিত, এবং বাস্তবে কত জন থেকেছেন; তার হিসেবে অঙ্ক কষে বঞ্চনা বা ‘ডেপ্রিভেশন’-এর শতাংশ। প্রথম ভোটে তা ৫৭.১৪ শতাংশ! যে দেশ ধর্মের ভিত্তিতে ত্রিধাবিভক্ত হওয়ার পরেও সাড়ে তিন কোটি মুসলমানের স্বভূমি, যে দেশ হিন্দুপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও সরকারি ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ, সেই দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ততখানি জায়গা করে নেওয়াই সম্ভব হল না। বঞ্চনার ভাগ কমতে কমতে ১৯৮০-তে এসে দাঁড়াল ১৬.৯৫ শতাংশে। সে বার সর্বোচ্চ ৪৯ জন মুসলমান সাংসদ দেখেছিল লোকসভা। তার পর প্রগতির চাকা আবার উল্টো দিকে। ২০১৪ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়া বিজেপি-তে এক জনও মুসলমান সাংসদ রইলেন না। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম।
সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির হিসেবটা রাজনীতির— সমাজেরও— পরিবর্তনশীল চরিত্রের নিক্তিতে মাপা যায়। সত্তরের দশকে প্রচুর ছোট ছোট দল তৈরি হতে থাকে, ভোটের কারণে মুসলমানদের কাছে পৌঁছোনোর তাগিদ বাড়ে। ভোট লড়ার সুযোগ বাড়ে তাদের। মূলত কংগ্রেসের কারণেই বাড়ে প্রতিনিধি সংখ্যা। ১৯৮০-তে ৪৯-এর মধ্যে ৩০ জনই ইন্দিরা গাঁধীর। কংগ্রেস ও দুই কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া আর কোনও জাতীয় দলেই টানা বহু দিন একাধিক মুসলমান সাংসদ দেখা যায়নি। ১৯৮০-র পরে বিজেপির উত্থান। ধর্মনিরপেক্ষতা ছাপিয়ে হিন্দুর রক্ষণশীলতা। ১৯৯২-এ ভাঙা পড়ে বাবরি মসজিদ, ২০০২-এ গুজরাতে দাঙ্গা। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে কমে মুসলমান প্রতিনিধি। ২০১৪-য় ২০ শতাংশ মুসলমানের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু সাংসদ সংখ্যা ১৮ থেকে কমে শূন্য।