‘অটোরিকশ চালকের সন্তান’ লেখাটা কি খুব দরকার ছিল! মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক? বিলেতের মাঠে জনৈক সিরাজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে প্রশংসাসূচক লেখার কথা বলতে গিয়ে কিছুদিন আগে সবজান্তা টুইট করেছেন বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটলিখিয়ে।
সিরাজ। মহম্মদ সিরাজ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত এই সিরিজে ১৪টা উইকেট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওভালের কাব্যে প্রায় উপেক্ষিত। সিরিজে ২-১ আগুয়ান ভারতীয় দলের হাডলে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন বিরাট উল্লম্ফনরত কোহলীর একেবারে পাশে, তিনি প্রথম ইনিংসে তা-ও একটা উইকেট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ঝোলা ফাঁকা। কিন্তু সেই তিনিই সবচেয়ে আগে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ম্যাচ-জেতানো সতীর্থ ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরাকে। বস্তুত, এই লেখা বুমরার যশোগান গেয়েই লেখা হতে পারত। সম্ভবত উচিতও ছিল। হাজার হোক, বুমরার পারফরম্যান্স ঢেকে দিয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিতর্ককে। এই লেখা হতে পারত বিলেতের মাঠে ইংরেজদের বার্মি আর্মিকে লক্ষ্য করে হাতের মুদ্রায় অবজ্ঞার ট্রাম্পেট-ফোঁকা বিরাট কোহলীকে নিয়েও। অথবা ম্যান অব দ্য ম্যাচ রোহিত শর্মা। যিনি ধ্রুপদী আলস্যে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরিটা করে ভারতীয় বোলারদের কাজটা তুলনায় সহজতর করে দিয়ে গেলেন। কিন্তু তাঁরা আপাতত মহাকালের কুলুঙ্গিতে আপামর দেশবাসীর দ্বারা ফুলচন্দন পেয়ে পূজিত হতে থাকুন। এই সাপ্তাহিক কলাম বরং লেখা হোক জনৈক সিরাজকে নিয়ে। যিনি নিজামের শহর হায়দরাবাদের এক অখ্যাত অটোরিকশ চালকের সন্তান। এবং যিনি ওভালের কাব্যে খানিকটা উপেক্ষিত।
সিরাজ। মহম্মদ সিরাজ। যাঁর জন্ম এক ‘আনলাকি থার্টিন’-এ (১৩ মার্চ)। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের মহাকাশে উত্থান এক আশ্চর্য রূপকথার মতো। ২০১৫ সালে যাঁর সত্যিকারের ক্রিকেট বলে বল করা শুরু (তার আগে ইস্কুলের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে টেনিসবল ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন। ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন ক্লাস সেভেনে)। হায়দরাবাদের হয়ে রনজি ট্রফিতে দ্বিতীয় মরসুমেই ৯ ম্যাচে ৪১ উইকেট। তার পর অবশিষ্ট ভারত দলে। অতঃপর ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। ২০১৭ সালেই আইপিএলে আড়াই কোটিরও বেশি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া। তার কয়েকমাস পরেই দেশের জার্সি পরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেক। আপাতদৃষ্টিতে যাঁর রান-আপ দেখে মনে হয় বাঁ-হাতি বোলার। কিন্তু আসলে ডানহাতে গোলার মতো ডেলিভারি করেন। আইপিএলে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর পরিচিত সাংবাদিককে বলেন, ‘‘এবার অন্তত আব্বা-আম্মিকে একটা ভাল বাড়িতে রাখতে পারব।’’