আর্থিক দুর্নীতির দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত শশিকলা নটরাজন। ছবি: সংগৃহীত।
খুব চেনা-জানা কিছু অপরাধ। কিন্তু চোখের সামনে ঘটে না। তাই তাদের অস্তিত্ব আমাদের খেয়ালে নিরন্তর আনাগোনাও করে না। বাস্তবটা হঠাৎ বেআব্রু হয়ে দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট অস্তিত্ব নিয়ে আচমকা সামনে হাজির হয় যখন, তখন কিন্তু চেনা সত্যটাও বেশ খানিকটা অচেনা ঠেকে, অবচেতনের কাছাকাছি অবস্থান করা অপ্রিয় সত্যটা হঠাৎ খুব অসহনীয় অস্তিত্ব নিয়ে ধরা দেয়।
শশিকলা নটরাজন অপরাধী, সে জানাই ছিল। সংশোধনাগারের অন্তরালে কী কী অপরাধ চলে, সে-ও অজানা ছিল না। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া শশিকলার নাম যখন কারান্তরালে ঘটতে থাকা অপরাধের সঙ্গেও জুড়ে গেল, তখন পরিস্থিতিটা বেশ অসহনীয় ঠেকতে শুরু করল। শশিকলা নটরাজন একবার জেলে ঢুকলেই সাধুত্বের পথে পা বাড়াবেন, জনমনে এমন প্রত্যাশা যে ছিল, তা নয়। বিপ্রতীপ ধারণাই ছিল সম্ভবত। কিন্তু সে অপ্রিয় বাস্তব পরিচিত হলেও চোখের আড়ালে ছিল। আচমকা তা চোখের সামনে আসতেই তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে, শুধু শশিকলার বিরুদ্ধে নয়, কর্নাটকের কারা প্রশাসনের কর্তাদের বিরুদ্ধেও।
বিপুল অঙ্কের ঘুষের লেনদেনের কথা শোনা যাচ্ছে। তার বিনিময়ে শশিকলাকে সংশোধনাগারের মধ্যে যথেচ্ছ আনুকূল্য পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর আসছে।
ঘুষের লেনদেনে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। অত্যন্ত অনৈতিক, কিন্তু আমাদের পারিপার্শ্বিকতায় তা আজ বেশ খানিকটা অভ্যাসগতও বটে। তবে প্রেক্ষিতটা এ ক্ষেত্রে অনেক গুরুতর, অপরাধটাও তাই গভীরতর। দুর্নীতিগ্রস্তকে বা অপরাধীকে সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে কোনও এক ঘেরাটোপের অন্দরে। সেখানেও ফের অপরাধের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন তাঁরাই, যাঁরা প্রত্যেক আবাসিকের মন থেকে অপরাধের শিকড়টাকে উপড়ে ফেলতে দায়বদ্ধ। অপরাধীর সম্ভবত আত্মোপলব্ধি নেই, সুতরাং সংশোধিত হওয়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু সংশোধনের দায়িত্ব যাঁদের উপরে ছেড়েছে রাষ্ট্র, তাঁদের চরিত্রেই সংশোধন জরুরি বলে যখন প্রতীত হয়, তখন একটা পরিহাসের বোধ তৈরি হয়।
সীমান্তে প্রহরারত জওয়ানের বীরত্বের মধ্যেই শুধু রাষ্ট্রের গরিমা নিহিত, তা কিন্তু নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী বৈদেশিক শক্তিকে যোগ্য জবাব দেওয়ার মধ্যে শুধু রাষ্ট্রের মহানতা, তাও নয়। দেশের অন্দরমহলে প্রচলিত প্রশাসনিক এবং সামাজিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ধরে রাখাও রাষ্ট্রের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাহীন, ধনবান বা ধনহীন, যশস্বী বা যশহীন— আইনের চোখে যে সবাই সমান, সে কথাকে শুধু সংবিধানের দুই মলাটের মধ্যে বন্দি করে রাখলে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকের মনে সংশয়ের অবকাশ তৈরি হয়। রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস, আস্থা, ভরসার প্রবাহে টান পড়ে। তাতে রাষ্ট্রের গরিমা অবশ্যই ম্লান হয়। প্রশাসনিক পদে আসীন যাঁরা, এই উপলব্ধি তাঁদের আর কবে হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy