‘শিরে হইলে সর্পাঘাত তাগা বাঁধি কোথা’— প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পথে নেমে উদ্যোক্তা সহ সকলেরই প্রায় এ রকম দিশেহারা অবস্থা। অতি সম্প্রতি আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় স্তরে সরকারি ভাবে পরিবেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করার একটা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে যে তাকে সরানোর চেষ্টা যথেষ্টই বেদনাদায়ক।
খুব বেশি দিন নয়, বছর কুড়ি আগেও চলতে-ফিরতে হাটে বাজারে কথায় কথায় এত প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ছিল না। পিকনিক, বিয়েবাড়ি বা খাবারের দোকানে এত থার্মোকলের থালা-বাটির ব্যবহার ছিল না। এখন ক্যারিব্যাগ ছাড়া আনাজ বাজার, মাছের বাজার প্রায় অচল। অথচ, এই প্লাস্টিকের মারাত্মক ক্ষতির ব্যাপারগুলি বোঝার জন্য পরিবেশ কর্মী বা খুব জ্ঞানীগুণী হওয়ার দরকার পড়ে না। এক জন সাধারণ শিক্ষিত মানুষও জানে যে মাঠ-ঘাট, নালা-নর্দমা, প্লাস্টিক বোতল আর ক্যারিব্যাগে কী ধরনের দূষিত হয়ে চলেছে। মাছ-মাংস খাবারের মাধ্যমে ছোট ছোট প্লাস্টিক কণা কী ভাবে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ছে, হার্ট-কিডনি-ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। কিন্তু সেই একই কথা, সবাই তো ব্যবহার করছে। আমি একা মানুষ কী আর করতে পারি?
অনেক দিন থেকেই সচেতন মানুষ জন প্লাস্টিক দূষণের কমানোর কথা ভাবছেন, বলছেন। স্বেচ্ছাসেবী মানুষেরা নানা রকম প্রচার ও উদ্যোগ নিচ্ছেন। টিভি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে ভাসমান প্লাস্টিক কী ভাবে নদী সমুদ্রে দূষণ ঘটাচ্ছে। সামুদ্রিক প্রাণি তো বটেই, আমাদের আশেপাশের গবাদিপশুও ঘাসপাতার সঙ্গে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে, অসুস্থ হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। অন্য শহরের মতোই কৃষ্ণনগর শহরেও বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু মানুষ সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত বছর এ রকমই কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমমনস্ক মানুষ জন মিলে ‘কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু’ নামে একটি প্লাস্টিক বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ গড়ে তোলেন। গণ আবেদনের মাধ্যমে পৌরসভা-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ‘'ক্যারিব্যাগ দেব না, ক্যারিব্যাগ নেব না’— এই স্লোগান সামনে রেখে প্রতিটি বাজারে যৌথ ভাবে সচেতনতা অভিযান চালানো হয়। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অনুরোধ জানানো হয় ক্যারিব্যাগ না নিতে, না দিতে। লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার নিয়ে শহরে পদযাত্রা এবং দোকানে দোকানে প্রচার অভিযান চালানো হয়। অধিকাংশ মানুষ স্বাগত জানালেও কিছু মানুষ জন বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, তর্ক করেছেন—‘সরকার যদি এতটাই আগ্রহী হয় তা হলে কারখানাগুলি বন্ধ হচ্ছে না কেন? ব্যবসায়ীদের বিক্রি কেন বন্ধ হচ্ছে না? সাপ্লাই বন্ধ হচ্ছে না কেন?’