Advertisement
E-Paper

ভাগ্যের খেলা

সরকার কি জুয়ায় মদত দিতে পারে? পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই প্রশ্নই খাড়া করিয়াছে। প্রশ্নটি অযৌক্তিক নহে।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০

মূলধারার অর্থনীতির তত্ত্ব যে ‘কনসিকোয়েনশিয়ালিজম’ বা পরিণতিবাদের উপর দাঁড়াইয়া আছে, তাহার নিরিখে বিচার করিলে রাজ্য সরকারের লটারির ব্যবসায় আপত্তি করিবার কারণ খুঁজিয়া পাওয়া মুশকিল। পুরস্কার এবং অন্যান্য পরিচালনাজনিত খরচের টাকা বাদ রাখিয়া লটারি হইতে প্রাপ্য রাজস্বের বাকি টাকা খরচ হয় উন্নয়নের খাতে। আজ হইতে নহে, বেশ কয়েক শতাব্দী যাবৎ, গোটা দুনিয়াতেই, এই ব্যবস্থা চালু। শহর কলিকাতারই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও অন্যান্য পরিকাঠামো এই টাকাতেই তৈরি হইয়াছে। তাহার দীর্ঘমেয়াদি সুফলের কথা চিন্তা করিলে পরিণতিবাদ বলিবে, লটারি ভাল। অতএব, ভিনরাজ্য আসিয়া পশ্চিমবঙ্গের বাজারে লটারির ব্যবসা করিয়া কোটি কোটি টাকা লইয়া গেলে যদি রাজ্য সরকার নড়িয়া বসে, প্রতি দিন রাজ্য লটারির খেলা চালু করিতে চাহে, তবে রাজ্যেরই মঙ্গল। অতএব, পরিণতিবাদের দার্শনিক অবস্থান হইতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আপত্তি করিবার কোনও কারণ নাই। জিএসটির জমানায় রাজ্যের রাজস্ব বাড়িলে তো ভালই।

কিন্তু, পরিণতিবাদকেই কি শেষ কথা বলিবার অধিকার দেওয়া চলে? ‘ডিঅন্টলজিকাল’ বা নীতিকেন্দ্রিকতার দর্শন বলিবে, না। পরিণতি অপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা— কোনও সিদ্ধান্তের ফলে কোনও ন্যায্যতা লঙ্ঘিত হইতেছে কি না, তাহাই প্রথম বিবেচ্য। লটারি বস্তুটি জুয়া ভিন্ন কিছু নহে। অপেক্ষাকৃত দুর্বলচিত্ত মানুষ সহজে বড়লোক হইবার অলীক আশায় লটারি খেলিয়া সর্বস্বান্ত হইতেছে, এমন অভিজ্ঞতা বিরল নহে। তাহাতে শুধু যে সেই মানুষটিই বিপাকে পড়ে, তাহা নহে— পরিবার পরিজনও পথে বসে। অতএব প্রশ্ন, যাহার গোড়ায় অনেকের দীর্ঘশ্বাস রহিয়াছে, সেই ফলাফলকে কি শুধু পরিণতির আলোকে দেখিলে যথেষ্ট হইবে? প্রতিযুক্তিও অবশ্য হাজির। লটারিপন্থীরা বলিবেন, যাহার পথে বসিবার, কোনও না কোনও পথ সে নিজেই খুঁজিয়া লইবে। লটারির টিকিট না পাইলে সাট্টা খেলিবে। তাহাতে লাভের কড়িটি জনগণের উপকারে লাগিবে না, ইহাই যাহা ফারাক। সর্বনাশের সব কয়টি পথই কেন বন্ধ করা হইবে না, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এই যুক্তিতে পাওয়া যাইবে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হইল, লটারি যদি থাকেও, তাহা কি সরকারের ব্যবসা হইতে পারে? এই আপত্তির মূল কারণও লটারির অন্তর্নিহিত অনৈতিকতা। সরকার কি জুয়ায় মদত দিতে পারে? পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই প্রশ্নই খাড়া করিয়াছে। প্রশ্নটি অযৌক্তিক নহে। রাষ্ট্রের অবস্থান বাজারের ঊর্ধ্বে। বাজার নৈতিকতা-নিরপেক্ষ হইতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষে তাহা হওয়া সম্ভব নহে। নাগরিকের সার্বিক মঙ্গলসাধন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কাজেই, লটারির ব্যবসাটি সেই দায়িত্বের পরিপন্থী কি না, সেই প্রশ্নটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের দাবি করে। কিন্তু, যদি অন্যান্য রাজ্যগুলি লটারির ব্যবসা করে, এবং দেশের সব রাজ্যের বাজারে তাহাদের প্রবেশ অবাধ হয়, তবে কোনও একটি রাজ্যকে সেই ব্যবসায় নিরস্ত হইতে বলা রাজ্যটির পক্ষে ক্ষতিকারক। কারণ, জুয়ার যাবতীয় কুফল ভুগিতে হইলেও লটারির ব্যবসার সুফল হইতে রাজ্যটি বঞ্চিত হইবে। অতএব, লটারির বিরোধিতা যদি করিতেই হয়, রাজ্যের স্বার্থের কথা মাথায় রাখিয়াই তাহা করা ভাল।

Government Lottery Tax
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy