Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Editorial News

মুখোশটা খসে পড়ে বার বার

যুদ্ধের জিগিরের চেয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের বার্তা সব সময়ই বেশি গ্রহণযোগ্য। তাই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণটাকে আশাপ্রদই মনে হচ্ছিল প্রথমে।কিন্তু ইমরান খান শেষ পর্যন্ত নিরাশই করলেন। ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার নাটক করলেন তিনি। চালাকি করলেন।

ইমরান খান। ফাইল চিত্র।

ইমরান খান। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

যুদ্ধের জিগিরের চেয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের বার্তা সব সময়ই বেশি গ্রহণযোগ্য। তাই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণটাকে আশাপ্রদই মনে হচ্ছিল প্রথমে। কিন্তু ইমরান খান শেষ পর্যন্ত নিরাশই করলেন। ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার নাটক করলেন তিনি। চালাকি করলেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বার্তা রয়েছে। যুদ্ধ শুরু করা রাষ্ট্রের হাতে, কিন্তু শেষ করাটা কারও হাতে নেই, ফলাফলটাও কারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না— ইমরান খানের বার্তা এই। ভারত যদি আঘাত হানে, তা হলে পাল্টা আঘাত হানা ছাড়া আর কোনও উপায় পাকিস্তানের হাতে থাকবে না— এমনও বলেছেন ইমরান খান। সেই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা করতেও পাকিস্তান প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান পদক্ষেপ করবে বলে ইমরান খান আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার নেপথ্যে পাকিস্তানের কোনও যোগ রয়েছে, তার প্রমাণ ভারতকে দিতে হবে— এমনটাও ইমরান খান জানিয়েছেন।

অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ভারতে সন্ত্রাসের নেপথ্যে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে কি না, তার প্রমাণ আর কত বার দিতে হবে ভারতকে? এক দশকেরও বেশি আগে মুম্বইয়ে জঙ্গিহানা হয়েছিল। সে জঙ্গিহানার ষড়যন্ত্র যে পাকিস্তানের মাটিতে বসেই তৈরি হয়েছিল, পাকিস্তান থেকেই যে জঙ্গিরা ভারতে ঢুকেছিল, সে সব কথা গোটা বিশ্বের জানা এখন। শুধু পাকিস্তান মানতে চায় না। অকাট্য প্রমাণকেও প্রমাণ হিসাবে গণ্য করতে চায় না। পুলওয়ামায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গিহানার নেপথ্যে পাক যোগের প্রমাণকে পাকিস্তান মান্যতা দেবে, সে নিশ্চয়তা কোথায়?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশ্ন আরও রয়েছে। জইশ-ই-মহম্মদ বড়াই করার ঢঙে জানিয়েছে যে, পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হানা তাদেরই কাজ। এর পরেও কোন প্রমাণ চান ইমরান খান? জইশ-ই-মহম্মদ যে পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকেই পরিচালিত হচ্ছে, ইমরান খান কি এ বার তার প্রমাণ চাইবেন? জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহার যে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের কোনও হাসপাতালে রয়েছেন, ইমরান খান কি এ বার তার প্রমাণ চাইছেন? জইশ-ই-মহম্মদ যে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং মৌলানা মাসুদ আজহার যে কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ইমরান খান কি এখন তার প্রমাণ চাইছেন?

আরও পড়ুন: পুলওয়ামার দায় অস্বীকার করে আলোচনার আহ্বান ইমরানের, সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনাতেও রাজি পাকিস্তান

এতেই কিন্তু শেষ নয়, আরও বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ইমরান খানের ভাষণ। দীর্ঘ ভাষণ দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধের কুফল বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আলোচনার প্রস্তাব দিলেন, সন্ত্রাসের প্রমাণ চাইলেন। কিন্তু পুলওয়ামায় যে জঘন্য হত্যালীলা চালানো হল, এক বারের জন্যও তার নিন্দা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করলেন না। পুলওয়ামায় ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হানাটার জেরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার ভাষণ দিতে হল ইমরান খানকে। অথচ, সেই সন্ত্রাসবাদী হানাটার নিন্দা করার কথাই ইমরান ভুলে গেলেন? ভুলে যে যাননি, ইচ্ছাকৃতই যে এড়িয়ে গিয়েছেন, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। তা হলে আলোচনার অবকাশ তৈরি হবে কী ভাবে? সৌজন্যের খাতিরেও এত বড় জঙ্গিহানার নিন্দা করতে পারেন না যে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, সেই রাষ্ট্রের তরফ থেকে আসা আলোচনার প্রস্তাব যে আসলে কুম্ভীরাশ্রু, তা বুঝতে আর কার অসুবিধা হয়?

যুদ্ধ কোনও কাঙ্খিত পরিস্থিতি নয়। যুদ্ধ কখনও সুসময় নিয়ে আসে না। এ কথা ভারতবাসীর অজানা, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। তা সত্ত্বেও ফুঁসছে গোটা ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জিগির উঠছে গোটা দেশে। সহ্যের সীমা কতটা সাংঘাতিক ভাবে অতিক্রান্ত হলে এতটা আক্রোশ তৈরি হতে পারে সুবৃহৎ একটা দেশে, তা বুঝে নেওয়া শক্ত নয়। ইমরান খানের মুখোশধারী ভাষণ সে আক্রোশে ইতি টানতে পারবে? এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।

তবু, দিনের শেষে মানতেই হয় যে, যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই সর্বাগ্রে কাম্য এবং আলোচনার দরজাটা খোলা রাখাই শ্রেয়। ইমরান খানের তরফ থেকে আলোচনার যে প্রস্তাব এল, তাতে আন্তরিকতা কতটুকু, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু যে বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, তাতে আলোচনার দরজাটা খুলে দেওয়া এই মুহূর্তে খুব জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE