Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
Anjan Bandyopadhyay

ইমরানের স্পর্ধা এবং ‘মেধা’ দেখে বিস্মিত হতে হয়

মেধার বিচারটা ইমরান খান করলেন কিসের ভিত্তিতে? কে উচ্চ মেধার, কে নিম্ন মেধার, ইমরান খান তা বিচার করেন কোন মাপকাঠিতে?

ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫
Share: Save:

অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর নিজের দাবি অন্তত সেরকমই। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হয়ে যাওয়াই পাক প্রধানমন্ত্রীর এই হতাশা তথা শিরপীড়ার কারণ। টুইট প্রতিক্রিয়ায় অন্তত সেরকমই বোঝাতে চেয়েছেন ইমরান। কিন্তু শান্তির লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রধান এবং প্রাথমিক শর্ত যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, তা ইমরান খানের সম্ভবত জানা নেই। আর যদি জানা থাকে, তা হলে বলতে হয়, পাক প্রধানমন্ত্রী আসলে শান্তি চাইছেন না।

উপরোক্ত তত্ত্বের অবতারণা কেন করতে হল? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন এক বিচারে কেন উপনীত হতে হল? হতে হল পাক প্রধানমন্ত্রীর তির্যক এবং কুরুচিকর মন্তব্যের কারণে। টুইটারে পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হওয়ায় তিনি আশাহত। ভারতের আচরণকে তিনি ‘উদ্ধত ও নেতিবাচক’ আখ্যা দিয়েছেন। তার পরে আরও লিখেছেন যে, তিনি গোটা জীবনে উঁচু পদে বসে থাকা অনেক নিম্নমেধার লোক দেখেছেন, বৃহত্তর চিত্রটি উপলব্ধি করার মতো দূরদর্শিতা যাঁদের নেই।

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারও নাম উল্লেখ করেননি ঠিকই। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকেই, সে কথা বোঝার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডিও পেরনোর প্রয়োজন পড়ে না।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ইমরান খানের এহেন মন্তব্যের পরে প্রথম এবং প্রধান যে প্রশ্ন উঠে আসে, তা হল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করার মতো স্পর্ধা এবং দুঃসাহস তাঁর হল কী করে? বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করছেন তিনি— সে কথা কি ভুলে গিয়েছিলেন ইমরান খান? এর পরে যে প্রশ্ন আসে, তা হল, মেধার বিচারটা ইমরান খান করলেন কিসের ভিত্তিতে? কে উচ্চ মেধার, কে নিম্ন মেধার, ইমরান খান তা বিচার করেন কোন মাপকাঠিতে? ভারতের মতো একটি সুবিশাল দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক যাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে নিম্নমেধাসম্পন্ন আখ্যা দিয়ে ইমরান খান আসলে তো গোটা ভারতেরই অমর্যাদা করলেন।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই মহত্ কাজ। দু’দেশের মানুষই শান্তি চান। পারস্পরিক বিদ্বেষ বা ঘৃণা কেউ পুষে রাখতে চান না বলেই খেলার মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটারকে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের জুতোর ফিতে বেঁধে দিতে দেখা যায়। বৈরিতার শেষ দেখতে চান বলেই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শকাসনে পাকিস্তানের সমর্থককে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায়। নাগরিকদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শান্তির প্রতি এই আবেগ থাকা সত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব কেন শান্তিতে পৌঁছতে পারছে না, সে এক ভিন্ন বিতর্ক। কেন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলেই কোথাও বিস্ফোরণ হয়, কোথাও নাশকতা হয়, কোথাও জঙ্গিহানা হয় বা কোথাও সীমান্তরক্ষায় রত জওয়ানের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়— সে কথা হয়তো আমাদেরই অনেকেরই জানা। কোন শিবির শান্তি চায় না, কারা হিংসা জিইয়ে রাখতে চায়, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। তাই এখানে নতুন করে সে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। এখানে প্রশ্ন হল, ইমরান খান নিজে দ্বিপাক্ষিক শান্তিতে কতটা আগ্রহী?

আরও পড়ুন: ‘নিম্ন মেধা’, নাম না করে মোদীকে খোঁচা ইমরানের

যে কোনও কূটনৈতিক পদক্ষেপই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। বুদ্ধিমত্তা, সংবেদনশীলতা, ভারসাম্যের বোধ ইত্যাদির সমন্বয়ে পদক্ষেপ করতে হয়। ইতিবাচক ফলের লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপকে সৌজন্যের মোড়কে পেশ করতে হয়। পরিণাম সব সময়ে আশানুরূপ হয় না। কিন্তু তার জন্য হতাশাও ব্যক্ত করতে হয় অত্যন্ত সংযত শব্দে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উল্টোটা করলেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে হতাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বেলাগাম প্রতিক্রিয়া দিলেন। এতে ইমরান খানের মেধার কী রকম পরিচয় পাওয়া গেল, সে প্রশ্নে আমরা যাচ্ছি না। কিন্তু ভারত-পাক কূটনীতির রাস্তাকে ইমরানের এই অসৌজন্যমূলক এবং কুরুচিকর মন্তব্য যে আরও কণ্টকাকীর্ণ করে তুলল, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE