Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

এক হেঁশেলে

জনতা ‘পরিবার’ পুনরায় একান্নবর্তী হওয়ার সংবাদে কোনও চমক নাই, কেবল ভোটজয়ের সমীকরণ রহিয়াছে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হিসাবেও ইহা এক খণ্ডিত পুনরাবর্তনের আখ্যান। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার যখন জনতা পরিবার গঠিত হয়, তখন তাহার অন্যতম প্রধান শরিক ছিল বর্তমান বিজেপির পূর্বপুরুষ ভারতীয় জনসংঘ। আর এ বার হিন্দি বলয়ের হৃদয়পুরে সেই বিজেপিকে ঠেকাইতেই জনতা পরিবারের বিভিন্ন শরিক একজোট হইল।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

জনতা ‘পরিবার’ পুনরায় একান্নবর্তী হওয়ার সংবাদে কোনও চমক নাই, কেবল ভোটজয়ের সমীকরণ রহিয়াছে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হিসাবেও ইহা এক খণ্ডিত পুনরাবর্তনের আখ্যান। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার যখন জনতা পরিবার গঠিত হয়, তখন তাহার অন্যতম প্রধান শরিক ছিল বর্তমান বিজেপির পূর্বপুরুষ ভারতীয় জনসংঘ। আর এ বার হিন্দি বলয়ের হৃদয়পুরে সেই বিজেপিকে ঠেকাইতেই জনতা পরিবারের বিভিন্ন শরিক একজোট হইল। সাবেক সমাজতন্ত্রী অর্থাৎ লোহিয়াপন্থী এবং জয়প্রকাশ অনুগামীদের লইয়া পুনর্গঠিত এই জনতা পরিবারেও অন্তত দুই শরিক যোগ দেয় নাই: চৌধুরী চরণ সিংহের পুত্র অজিত সিংহের লোকদল এবং বিজু পট্টনায়কের পুত্র নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল, এই দুই প্রাক্তন জনতা-শরিক আমন্ত্রিতই হয় নাই। যে ছয়টি শরিককে লইয়া নূতন করিয়া যৌথ পরিবারটি গঠিত হইল, তাহাদের মধ্যে অবশ্য সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং সংযুক্ত জনতা দলই প্রধান। গত লোকসভা নিবার্চনে বিজেপির কাছে এই তিন দলই নিজেদের দুর্গেই পর্যুদস্ত হয় এবং তদবধি বিজেপি-বিরোধী যুক্ত মোর্চার অন্বেষণ করিতেছিল।

জাতপাত ও প্রাদেশিকতার ভিত্তিতে তৈরি হওয়া বিভিন্ন সংগঠনের এ ভাবে একান্নবর্তী হওয়ার মধ্যে সূচনা হইতেই সমস্যা লাগিয়া থাকে। এ ক্ষেত্রেও নূতন দলের নির্বাচনী প্রতীক কী হইবে, নিশান কী হইবে, তাহা লইয়া কাজিয়া শুরু হইয়াছে। এই কাজিয়া চরম আকার ধারণ করিবে, যখন রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই লইয়া দর কষাকষি শুরু হইবে। হিসাব কষিয়া মুলায়ম সিংহ যাদব, লালুপ্রসাদ যাদব, নীতীশকুমার-শরদ যাদবরা দেখিয়াছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন মাত্র জনতা প্রার্থী দাঁড় করাইতে পারিলে গো-বলয়েও তাঁহাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। সেটাই জনতা শরিকদের কাছাকাছি আসার রাজনৈতিক তাগিদ। তাগিদটি যেহেতু নীতিগত নয়, রণকৌশলগত এবং ক্ষণস্থায়ী, তাই তাগিদ ফুরাইলেই ভাঙনের লক্ষণগুলি স্পষ্ট হইয়া উঠিবে। এমনিতেই বারো রাজপুতের এই তেরো হাঁড়ি বেশি দিন একান্নবর্তী থাকা দুরূহ। তদুপরি যে কারণে জনতা পরিবার একদা ভাঙিয়াছিল, নেতাদের অহমিকা ও ব্যক্তিত্বের সেই সংঘাত আজও সমান বলীয়ান।

বিহারে বিধানসভার নির্বাচন আসিতেছে। তাহার পর উত্তরপ্রদেশেও ভোট আসিবে। জনতা পরিবার যদি কংগ্রেস ও বামেদের সহিত বোঝাপড়া করিয়া একটি আসনে একজন জনতা প্রার্থীকেই মনোনীত করিতে পারে, তবে জাতপাতের সমীকরণ ঠিক রাখিয়া সেই সব নির্বাচনে তাহার পক্ষে জয়লাভ তত্ত্বগত ভাবে সম্ভব। অন্তত আগের ভোটগুলির পািটগণিত তেমনই আভাস দেয়। সেই হিসাবেই বিহারে মহাদলিত-কুর্মি-যাদব-মুসলিম ভোটের সমর্থন বাহিয়া নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হইতে চলিয়াছে। অনেকেই ইহাকে আর্যাবর্তের রাজনীতিতে দ্বিতীয় দফার মণ্ডলায়নের ফলিত প্রয়োগ রূপে বর্ণনা করিতেছেন। তবে লোকসভার গত নির্বাচনে বিজেপি বিহার ও উত্তরপ্রদেশ উভয় রাজ্যেই দলিত ও অনগ্রসর ভোটে যে ভাবে থাবা বসাইয়াছে, তাহাতে কমণ্ডলুর শক্তি এ বারও মণ্ডল মহারথীদের ব্যূহ ভেদ করিতে সক্ষম হইতে পারে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি তখন মার্ক্স-কথিত প্রহসন রূপেই হয়তো দেখা দিবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE