Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

কাতার অবরোধ

কয়েক দশকের মধ্যে পশ্চিম এশিয়ায় অন্যতম বৃহৎ সংকট কাতারকে কেন্দ্র করিয়া দেখা দিল। একে একে নয়টি দেশ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করিল।

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০০:১৫
Share: Save:

কয়েক দশকের মধ্যে পশ্চিম এশিয়ায় অন্যতম বৃহৎ সংকট কাতারকে কেন্দ্র করিয়া দেখা দিল। একে একে নয়টি দেশ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করিল। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাহরিন, মিশরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশ দ্বারা আপাতত স্থলপথ, জলপথ, আকাশপথ, সব দিক দিয়া কাতার অবরুদ্ধ। দেশগুলি হইতে কাতারি নাগরিকদের পত্রপাঠ চলিয়া আসিতে বলা হইয়াছে। দেড় সপ্তাহের মধ্যেই ছোট ধনী উপদ্বীপ দেশটি, যাহা জনপ্রতি সম্পদের নিরিখে এ যাবৎ বিশ্বে প্রথম স্থানাধিকারী, সেখানে খাদ্য-সংকট দেখা দিতেছে। ঠিকই, সৌদি আরব অনেক কাল ধরিয়া কাতারের উপর বিদ্বিষ্ট। তবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পশ্চিম এশিয়া সফরের সহিত এই সংকটের সংযোগ সংশয়াতীত রকম ঘনিষ্ঠ। ট্রাম্প গিয়াই প্রতিবেশী দেশগুলিকে কিছু বিতর্কিত তথ্যের ভিত্তিতে কাতারের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করিয়াছেন। কাতারের সহিত এশীয় ও আফ্রিকান জঙ্গি সংগঠনর যোগাযোগ বিষয়ে ‘অভ্রান্ত’ তথ্যপ্রমাণ আলোচনা করিয়া উত্তেজনা বাড়াইয়াছেন। শোনা যাইতেছে জঙ্গি ইসলামি গোষ্ঠীগুলিকে কাতারের অর্থসাহায্য ও ইরানের সহিত কাতারের ঘনিষ্ঠতা মর্মে যে সংবাদগুলি কাতার নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে প্রচারিত হইয়াছে, সেগুলি নাকি নকল। এই নকল সংবাদ নাকি তথ্যদুনিয়ায় পরিবেশিত করিয়াছে স্বয়ং রাশিয়া, যাহাতে কাতারের সহিত মার্কিন ও সৌদি দ্রুত বিচ্ছেদ ঘটিতে পারে।

‘সত্য-উত্তর’ (পোস্ট-ট্রুথ) দুনিয়ায় কোন অভিযোগটি ঠিক, কোনটি নয়, এই সিদ্ধান্তে আসা অতি দুরূহ। এখনও অবধি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত নহে। কিন্তু যে তৎপরতায় রাশিয়া ঘোলা জলে আখের গুছাইতেছে, তাহাতে সন্দেহ মুছিয়া যায় না। মুসলিম ব্রাদারহুড হইতে শুরু করিয়া হামাস ইত্যাদি সংগঠনের সহিত কাতার অনেক দিনই যোগাযোগ রাখিয়া আসিয়াছে, সিরিয়াতেও প্রেসিডেন্ট আসাদের বিদ্রোহীদের প্রাথমিক সমর্থন জুগাইয়াছে। সম্প্রতি ইরানের সহিত সম্পর্ক উন্নততর করিতেও মন দিয়াছে। তবু কাতারের সহিত এত দিন উপসাগরীয় দেশগুলি মৈত্রী বজায় রাখিয়া আসিতেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাহার সর্ববৃহৎ বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটিটি এই দেশেই রাখিয়াছিল। এই আকস্মিক খাঁড়ার ঘায়ের কারণ তবে কী?

একটি বিষয়ে জল্পনা অনাবশ্যক। তাহা প্রাকৃতিক গ্যাস। এই বিশেষ সম্পদটির দিক দিয়া কাতার বিশ্বের সম্পন্নতম দেশ। এবং ইহা আহরণের জন্য তাহার প্রয়োজন ইরানের সহিত ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক। দুইটি কারণেই শিয়া-নিয়ন্ত্রিত ইরানের জন্মশত্রু সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব কাতারের উপর বিলক্ষণ চটিয়া। ঘটনাক্রমে, এই মুহূর্তে চটিয়া রহিয়াছে রাশিয়াও। দীর্ঘ পাইপলাইন সহযোগে প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপে পাঠাইবার পরিকল্পনা রাশিয়াকে প্রীত করে নাই, রুশ-মিত্র সিরিয়ার মাধ্যমে তাহা পাঠাইবার প্রস্তাবনা আরও আপত্তিকর ঠেকিয়াছিল। সুতরাং কাতারকে ঠেকাইবার প্রয়োজন রাশিয়ার ছিলই। অনেকের মতে, রুশ চক্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পা দিয়াছে ট্রাম্পের উদ্ভ্রান্ত বৈদেশিক নীতির দৌলতে। অনবদ্য সারল্যে যিনি বলিয়া দিতেছেন, কাতারকে ঠেকাইয়াই নাকি পশ্চিম এশিয়ার সামগ্রিক সংকটের সমাধানের শুরু!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Qatar biggest crisis Isolation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE