Advertisement
E-Paper

উত্তম প্রতিবেশী

কূ টনীতির নূতন অধ্যায় রচিত হইল মহাকাশে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-নির্মিত ‌‘দক্ষিণ এশিয়া উপগ্রহ’ শুক্রবার সফল ভাবে উৎক্ষিপ্ত হইল।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০১:০৬

কূ টনীতির নূতন অধ্যায় রচিত হইল মহাকাশে। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-নির্মিত ‌‘দক্ষিণ এশিয়া উপগ্রহ’ শুক্রবার সফল ভাবে উৎক্ষিপ্ত হইল। ইহা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের উপহার। কারণ, কোনও ব্যয় বা বিনিয়োগ না করিয়াই এই উপগ্রহ হইতে নানা সংযোগ-সুবিধা পাইবে রাষ্ট্রগুলি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি উপগ্রহ নির্মাণের বাসনা ঘোষণা করিয়াছিলেন। অপর দেশগুলিও তাহাতে উৎসাহ দেখাইয়া ‘সার্ক’ অঞ্চলের উপগ্রহের প্রকল্পে যোগ দিয়াছিল। পরে পাকিস্তান সরিয়া দাঁড়াইলেও কার্যক্রম বহাল থাকে। তাহাই সম্পূর্ণতা পাইল যখন শ্রীহরিকোটা হইতে জিস্যাট-৯ মহাকাশযাত্রা করিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ, এবং তৎসহ সড়ক পরিবহণ-সহ যোগাযোগের নানা পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রতি ভারত বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিয়াছে। কিন্তু মৌলবাদী সন্ত্রাস হানার ধারাটি শুরু হইবার পর হইতে সীমান্তকে দুরতিক্রম্য করিবার দিকেই অধিক জোর দিয়াছে রাষ্ট্রগুলি। তাহার সুযোগ লইয়া চিন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভাব বাড়াইতেছে। ভারত ব্যতীত নিজস্ব উপগ্রহ রহিয়াছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের। দুই দেশই চিনের সহায়তা লইয়া উপগ্রহ পাঠাইয়াছে। ইহা ভারতের কূটনীতির নিকট মাথাব্যথার কারণ হইয়া উঠিয়াছিল, সন্দেহ নাই।

বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মলদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা তথ্যসংযোগের জন্য এই উপগ্রহ হইতে সুবিধা পাইবে। তাহার দ্বারা ব্যাঙ্ক-সংযোগ, টেলিসংযোগের দ্বারা চিকিৎসা, শিক্ষা এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন হইবে। দেশগুলি একে অপরের সহিত সংযোগও রাখিতে পারিবে। বিশেষজ্ঞদের আন্দাজ, আগামী এক দশকে এক একটি দেশ এই উপগ্রহ হইতে অন্তত দশ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পরিষেবা পাইবে। অবশ্য প্রতিটি দেশকে এই সুবিধা কাজে লাগাইবার জন্য ভূমিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়িতে হইবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রণী ভারত এই সৌহার্দ্য ও সহায়তার হাত বাড়াইয়া আঞ্চলিক কূটনীতিতে একটি ইতিবাচক মাত্রা যোগ করিল। বিশেষত ইহা শুধু রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে বিনিময় নহে, এই উপমহাদেশের সকল মানুষ উপকৃত হইবেন। উপগ্রহ কূটনীতি নাগরিক সমাজের দৃষ্টিতেও মূল্যবান।

পরিচিত কাঁটাটি অবশ্য ফুটিয়াই রহিল। তাহার নাম পাকিস্তান। গোড়ায় ‘সার্ক’ উপগ্রহের প্রতি উৎসাহ দেখাইয়াও পাকিস্তান ক্রমে নানা শর্ত আরোপ করিতে থাকে। তাহাদের মূল অভিযোগ, ভারত এই উপগ্রহের নির্মাণে প্রযুক্তি ও ব্যয়ের অংশ লইতে দেয় নাই। ভারতের যুক্তি, যাহা ‘উপহার’ বলিয়া পূর্বেই ঘোষিত, তাহার অংশীদারত্ব কী প্রকারে সম্ভব? কোন পক্ষের যুক্তি অধিক গ্রহণীয়, সে মীমাংসা সম্ভব নহে, তাহার প্রয়োজনও নাই। লক্ষণীয়, অপর কোনও দেশের নিকট পাকিস্তানের আপত্তিগুলি গ্রহণযোগ্য হয় নাই। গত বছর ইসলামাবাদে সার্কের সম্মেলনে ভারতের যোগ না দিবার সিদ্ধান্তকেও সমর্থন করিয়াছিল বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ভুটান। কাশ্মীর-সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের উপর উপর্যুপরি আক্রমণ ভারত-পাক সম্পর্ককে বিষাইয়াছে। ইতিমধ্যে নিজেকে সুযোগ্য প্রতিবেশী প্রমাণ করিতে ভারত তাহার কূটনীতিকে একটি উচ্চতায় পৌঁছাইল।

importance neighbour countries India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy