আমরা কতটা তৈরি?
ভবিষ্যতের এই ইন্টারনেটের জন্য আমরা কতটা তৈরি? তার থেকেও বড় প্রশ্ন, আমরা আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য কী রেখে যেতে চলেছি?
বড়রা ইন্টারনেট বিচার বিবেচনা করে ব্যবহার করবেন, এটা আশা করা যায়। তাঁরা ইন্টারনেটের অপার সুযোগ নিয়ে কতটা নিজের দক্ষতা বাড়াবেন, তাকে কতটা পড়াশোনার কাজে লাগাবেন, না কি পর্নোগ্রাফি দেখে সময় কাটাবেন, সেটা তাঁদের উপর ছেড়ে দেওয়াই ভাল। কিন্তু বাচ্চারা? ৮ থেকে ১২ বছরের বাচ্চারা? চিন্তাটা তাদের নিয়ে। দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে কম করে ৪০ কোটি বাচ্চা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে। এই আসন্ন বিপদকে চিহ্নিত করা হচ্ছে সাইবার মহামারি হিসাবে।
জরুরি প্রশ্ন থাকছে বেশ কয়েকটি।
মনুষ্যচালিত সরকার কি বাজারচালিত বড় কোম্পানিগুলির এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারবেন ও টেকনোলজিকে শুধুমাত্র মানুষের ভালর কাজে লাগাতে পারবেন? না কি, তাঁরা এই সুযোগে সাধারণ মানুষের উপর আরও নজরদারি কায়েম করবেন?
আমেরিকায় একা স্নোডেন নন, একের পর এক প্রাক্তন এফবিআই (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ও এনএসএ (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি)-র কর্মী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন মার্কিন সরকারের গোপন নজরদারির বিরুদ্ধে। উইলিয়াম বিনি এমনই একজন, দীর্ঘ দিন এনএসএর সঙ্গে কাজ করার পর যিনি জানিয়েছেন, কী ভাবে আমেরিকার এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলিই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছে, স্রেফ টেকনোলজিকে অন্যায় ভাবে ব্যবহার করার সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে।
ভবিষ্যতের ইন্টারনেট ও তার আসক্তি নিয়ে তাই একের পর এক প্রশ্নের পাহাড় জমছে।
ভবিষ্যতে টেকনোলজি, ইন্টারনেট কি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চলেছে? কৃত্রিম বুদ্ধির মতো, এই ডিজিটাল-আসক্তিও কি কৃত্রিম ভাবেই, পরিকল্পিত ভাবেই তৈরি করা হচ্ছে? এটি কি আগের সব নেশার দ্রব্যকে হার মানাতে চলেছে? লোভের তাড়নায় আমরা কি এ বার একটু ডেটার জন্য শুকিয়ে মরব? আগের শিল্প বিপ্লবগুলি থেকে গরিবের খুব দ্রুত উপকার হয়েছে, প্রাকৃতিক সম্পত্তির ভাগ দরিদ্ররাও সমান ভাবে পেয়েছেন, এমন নিদর্শন নেই। বড়লোকদের পকেটই বেশি ভরেছে।
এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এত তাড়াহুড়ো কি সে জন্যই? এর পেছনে কি সেই উচ্চ ক্ষমাতাবানদেরই কারচুপি রয়েছে? না কি সত্যিই নতুন কিছু দিশা দিতে চলেছে এই আসন্ন বিপুল পরিবর্তন? দেখা যাক।
আর বছর দশেকের মধ্যেই এর উত্তর পাওয়া যাবে।
(লেখক ২০১১ সালে মাইক্রোসফটের কমিউনিটি কন্ট্রিবিউটর অ্যাওয়ার্ড জয়ী। তিনি সাইবার সিকিওরিটি, এথিক্যাল হ্যাকিং এবং সমাজে টেকনোলজির প্রভাব নিয়ে লিখে থাকেন)
অলঙ্করণ এবং গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন— ফিরে দেখা এই দিন।)