Advertisement
E-Paper

ভোটমুখী হোক আপত্তি নেই, অঙ্কটা মিলছে কি?

বাজেটের নির্বাচনোন্মুখতাকে এত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সত্যিই কি কিছু আছে?

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩০
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বাজেট ভোটমুখী হয়েছে, বাজেট ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে হয়েছে— অনেকেই বলছেন এ কথা, বলছেন নেতিবাচক কণ্ঠস্বরেই। কিন্তু বাজেটের নির্বাচনোন্মুখতাকে এত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সত্যিই কি কিছু আছে?

রাষ্ট্র তথা সরকার নাগরিকের উন্নয়নের কথা ভাববে, নাগরিকের জীবনকে ক্রমশ মসৃণ করে তুলবে— লক্ষ্যটা তো এমনই। সরকার সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারল কি না, সরকারের ক্রিয়াকলাপে নাগরিক সন্তুষ্ট কি না, তা পরখ করে নেওয়ার জন্যই তো গণতান্ত্রিক নির্বাচনের বন্দোবস্ত। অতএব, মন্ত্রিসভা যে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই কাজ করবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। প্রশ্নটা অন্যত্র। বাজেট ভাষণে যা কিছু বললেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, জাতীয় জনসংখ্যার বিভিন্ন শ্রেণির উন্নয়নের জন্য যে সব পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করলেন তিনি, তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে তো? প্রশ্নটা ওঠা উচিত সেখানেই। কারণ প্রশংসনীয় সব প্রস্তাব পেশ হল, কিন্তু সে সবের রূপায়ণের সুনির্দিষ্ট কোনও দিশা দেখা গেল না। অনেক রকমের সংখ্যা ঘোরাফেরা করল জেটলির বাজেট ভাষণ জুড়ে। কিন্তু অঙ্কটা মিলছে কি না, স্পষ্ট করে বোঝা গেল না।

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে খুব বড় পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করল সরকার। দেশের প্রতিটি প্রান্তে সুলভে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে অনেক হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার গড়ার কথা ঘোষণা করা হল। ১০ কোটি পরিবারকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনা হবে বলে জানানো হল। পরিবার পিছু বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে বলে ঘোষিত হল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কিন্তু কী ভাবে হবে সে সব? খুব স্পষ্ট উত্তর নেই। দেশের প্রতিটি প্রান্তে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিকাঠামো সম্বলিত হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার গড়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মসূচির রূপরেখা কি তৈরি হয়েছে? কারও জানা নেই। যে ১০ কোটি পরিবারকে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনা হবে, সেই সব পরিবারকে কোন সূচকের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হবে? সর্বোচ্চ কত টাকা খরচ হতে পারে সেই খাতে? সরকার বরাদ্দই বা করছে কত টাকা? স্পষ্ট উত্তর নেই।

আরও পড়ুন: ভোটের দায়ে জয় কিসান

কৃষি ক্ষেত্রের জন্যও উজ্জ্বল দিনের প্রতিশ্রুতি বাজেটে। কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার কথা ফের উচ্চারিত হল। কিন্তু ঠিক কোন পথে হেঁটে সেই লক্ষ্যের দিকে এগোবেন কৃষক? সরকারই বা কোন পথে এগোবে? জানানো হল না সে কথা।

খারিফ ফসল ফলাতে কৃষকের যা খরচ হবে, তার দেড় গুণ অর্থ কৃষককে দেওয়া হবে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে। জানালেন অর্থমন্ত্রী। প্রশ্ন হল, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যটা দেবে কে? সরকার কি সব ফসল কিনে নিতে পারবে? যদি সরকার সব ফসল কিনে নিতে না পারে, তাহলে কেনাবেচার গোটা প্রক্রিয়াটার উপরে সরকারি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরি। সে রকম হলেই একমাত্র ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কৃষকের হাতে সুনিশ্চিত ভাবে পৌঁছনোর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সেই নজরদারি বা সেই নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নিবিড় পরিকাঠামোটা সরকারের আদৌ রয়েছে কি?

আরও পড়ুন: গরিবকে বিমা, কর্পোরেটকে ছাড়, মধ্যবিত্ত কী পেল? দেখে নিন বিশ্লেষণ

কৃষির উন্নয়ণের জন্য কৃষিঋণ খাতে ১১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করার কথা ঘোষিত হয়েছে। বাজেটের মধ্যে থেকেই এই অর্থের সংস্থান হবে? নাকি বাজেট বহির্ভূত কোনও তহবিল থেকে এই অর্থ জোগানো হবে? বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। বাজেট বহির্ভূত কোনও উৎস থেকে যদি এই কৃষিঋণের বন্দোবস্ত করা হয়, তা হলে বাজেট ভাষণে কেন তার উল্লেখ হল? এ প্রশ্নও উঠে আসে সে ক্ষেত্রে।

এ ভাবেই গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ণে বিপুল ব্যয় বরাদ্দের ঘোষণা রয়েছে। কর্মসংস্থান খাতে সরকার বড়সড় তহবিল ঢালতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ণে সুনির্দিষ্ট কোনও রূপরেখা চর্চিত হয়নি বাজেটে। কর্মসংস্থান কোন পথে হবে, তার কোনও আভাস পেতে দেওয়া হয়নি।

প্রশ্নগুলো এই সব প্রসঙ্গেই ওঠা জরুরি। ভোটের কথা ভেবে মোদী-জেটলি কল্পতরু হলেন বলে অনেকেই দাবি করছেন। কিন্তু সত্যিই কি কল্পতরু হতে পারলেন জেটলিরা? এই বাজেটে জনসাধারণের যতখানি সুরাহা হবে বলে সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ততখানি সুরাহা কি আদৌ হওয়া সম্ভব? জনসাধারণের জীবনকে আরও মসৃণ করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে সব ঘোষণা বাজেট ভাষণে শোনালেন অরুণ জেটলি, সেই সব ঘোষণা কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে?

যদি বাস্তবায়িত হয় এই সব প্রতিশ্রুতি, যদি রূপায়িত হয় জেটলির এই বাজেট ঘোষণাপত্র, তা হলে দেশের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ যে উপকৃত হবে, তা নিয়ে সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। কিন্তু সংখ্যার কেরামতি যে ভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে জেটলির বাজেট ভাষণকে, অঙ্কটা ততটা পাকা হাতে কষতে পারেননি সম্ভবত অর্থমন্ত্রী। অঙ্কটা কি শেষ পর্যন্ত মেলাতে পারবে মোদী-জেটলি জুটি? গোটা দেশের নজর আপাতত সে দিকেই থাকবে।

Union budget Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বাজেট ২০১৮ Budget 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy