Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Editorial

এই দোষারোপ কাম্য নয়

এই অস্বস্তি ভারতের প্রাপ্য নয়। ভারত জাতিবিদ্বেষী, ভারত বর্ণবিদ্বেষী, বিদেশ থেকে আসা মানুষ ভারতে বিদ্বেষের শিকার হন— এমন অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে আগে কখনও ওঠেনি। কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলি সমবেত ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করায় এবং ভারতের প্রশাসনিক সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দেশের গায়ে এ বার সেই কালিমাও লাগল।

হামলার প্রতিবাদ।

হামলার প্রতিবাদ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:০৫
Share: Save:

এই অস্বস্তি ভারতের প্রাপ্য নয়। ভারত জাতিবিদ্বেষী, ভারত বর্ণবিদ্বেষী, বিদেশ থেকে আসা মানুষ ভারতে বিদ্বেষের শিকার হন— এমন অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে আগে কখনও ওঠেনি। কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলি সমবেত ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করায় এবং ভারতের প্রশাসনিক সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দেশের গায়ে এ বার সেই কালিমাও লাগল।

এ দেশে অসহিষ্ণুতা রয়েছে, অসহিষ্ণুতার তীব্র বিরোধও রয়েছে। সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে, নিখাদ-নিষ্কলঙ্ক ধর্মনিরপেক্ষ মনও রয়েছে। কট্টরবাদী রক্ষণশীলতা রয়েছে, উন্মুক্ত আকাশের সমান উদারতাও রয়েছে। এই সব কিছুকে আত্মস্থ করতে পারাই ভারতের ঐতিহাসিক চরিত্র। আর সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বলীয়ান বলেই ভারতের দেহে লীন হতে পেরেছে আর্য, অনার্য, শক, হুন, পাঠান, মোঘল এবং আরও অনেকে। অন্তর্লীন সঙ্ঘাত, অভ্যন্তরীন স্রোত-প্রতিস্রোত-চোরাস্রোতের সাক্ষী নিয়তই হয়তো হতে হয় এই দেশকে। কিন্তু অতিথিকে দেবতা ভাবার পরম্পরায় তাতে ছেদ পড়ে না, গাত্রচর্মের বর্ণ কখনও এ দেশে মনুষ্যত্বের মাপকাঠি হয়ে ওঠে না। তবু আফ্রিকা মহাদেশ থেকে তেমনই একটা অভিযোগের আঙুল উঠল আজ ভারতভূমির দিকে। অতএব আত্মনিরীক্ষার সময় এসে গিয়েছে। কোথায় কাটছে তালটা, তলিয়ে দেখা দরকার এখনই।

আফ্রিকার দেশগুলির রাষ্ট্রদূতরা সমবেত ভাবে ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কখনও দিল্লিতে, কখনও বেঙ্গালুরুতে, কখনও দেশের অন্য কোনও প্রান্তে আক্রান্ত হচ্ছিলেন আফ্রিকা থেকে আসা মানুষজন। সম্প্রতি পর পর ঘটেছে আক্রমণের ঘটনা, দিল্লি সংলগ্ন গ্রেটার নয়ডায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে আফ্রিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে। আফ্রিকা মহাদেশের অভিযোগ, এই আক্রমণ রোখার জন্য প্রয়োজন যে দাঢ্য, ভারতের প্রশাসনিক আচরণে তা অনুপস্থিত। আফ্রিকা মহাদেশের অনুযোগ, ভারত সরকার কঠোর শব্দে নিন্দাটুকুও করেনি এই আক্রমণগুলির।

আবার বলছি, এই অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার মতো কাজ কিন্তু ভারত করেনি। ভারত সরকার আফ্রিকান সম্প্রদায়ের উপর পর পর আক্রমণের ঘটনায় যারপরনাই লজ্জিত। বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না করে ঘটনার সবিস্তার রিপোর্ট তলব করেছেন। সংসদে বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। সরকার এবং বিরোধী সমবেত স্বরে এই জঘন্য ঘটনাবলীর নিন্দা করেছে। কিন্তু কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে গিয়েছে, যার জেরে আফ্রিকা আজ বর্ণবিদ্বেষে অভিযুক্ত করল ভারতকে।

দুর্বৃত্ত বা পথভ্রষ্টদের ক্রিয়াকলাপ কখনও জাতীয় চরিত্রের সমার্থক হতে পারে না। ভারতবাসী এবং ভারতের সরকার দ্ব্যর্থহীন ভাবে আক্রমণকারীদের দুর্বৃত্তই মনে করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও গৃহীত হয়েছে। কিন্তু আফ্রিকানদের উপর আক্রমণের দুঃসংবাদ আন্তর্জাতিক মহলে যতটা প্রাবল্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছিল, উদ্বেগ নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপগুলির কথা ততটা প্রাবল্য নিয়ে চারিয়ে দেওয়া হয়নি। আত্মনিরীক্ষা সেই প্রশ্নেই জরুরি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপটা হয়তো আমরা করেছি। কিন্তু সমগ্র জাতির সে দৃঢ় অবস্থানের কথা স্পষ্ট উচ্চারণে গোটা বিশ্বকে জানানোও জরুরি হয়ে পড়েছে আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Racism Anjan Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE