Advertisement
E-Paper

স্বস্তিতে থাকলে শুরুতেই সেরা অস্ত্রটা প্রয়োগ করতে হত না

গুজরাতের রণাঙ্গনে বিজেপিকে এ বার বেশ কঠিন সংগ্রামের মুখে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। এমন কথা অনেক বিশ্লেষকই বলছেন। অনেকে ঠিক উল্টোটাও বলছেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

এই প্রথম বার নয়। নিজের ‘চা-বিক্রেতা’ অতীতকে নির্বাচনী রণাঙ্গণে হাতিয়ার করেছিলেন আগেও নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সাল। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির তরফে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। চা-বিক্রেতা পরিচয়ের অবতারণা সেই প্রথম। দরিদ্র ভারতের প্রান্তিক নাগরিকও দেশের শীর্ষ প্রশাসক হতে পারেন— এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে এমন স্বপ্নই দেখাতে চেয়েছিলেন মোদী। সফলও হয়েছিলেন। তার পরেও একাধিক বার নির্বাচন এসেছে-গিয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। কিন্তু প্রান্তিক পরিচয়টা আর তুলে ধরার দরকার পড়েনি। গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন আসতেই আবার দরকার পড়ল। অন্দরমহলের কোনও এক নিস্পৃহ কুলুঙ্গি থেকে যেন আবার পেড়ে আনতে হল চা-বিক্রেতা অতীতটাকে। ‘গুজরাতি’ প্রধানমন্ত্রীর প্রান্তিক পরিচয়টার উপর আবার খুব জোরদার আলোকপাত শুরু হল গুজরাতে।

কেন এর প্রয়োজন পড়ছে? যে ভাবমূর্তি বছর তিনেক আগেই সুনির্মিত, নতুন করে তার নির্মাণ জরুরি নয় নিশ্চয়ই। মোদীর নিজের গড় গুজরাতে তো আরওই নয়। তা সত্ত্বেও গত কয়েক দিনে নরেন্দ্র মোদীর চা বিক্রেতা পরিচয়কে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে বার বার। চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘মনের কথা’ শোনার এবং শোনানোর আয়োজন হয়েছে গোটা গুজরাতে। অমিত শাহ, অরুণ জেটলি, নির্মলা সীতারামন, পীযূষ গয়াল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, স্মৃতি ইরানি, বিজয় রূপাণী— কে নেই সেই তালিকায়! তবে কি ধুলো জমল মোদীর চেনা ছবিতে? ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মোদী’, দীনবন্ধু মোদী’, ‘সাধারণ মানুষ মোদী’— এ হেন ভাবমূর্তি কি তিন-সাড়ে তিন বছরেই মলিন হয়ে গেল? না হলে ছবিটার এতখানি ঝাড়পোঁছ জরুরি হয়ে পড়ল কেন এই নির্বাচনে?

গুজরাতের রণাঙ্গনে বিজেপিকে এ বার বেশ কঠিন সংগ্রামের মুখে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। এমন কথা অনেক বিশ্লেষকই বলছেন। অনেকে ঠিক উল্টোটাও বলছেন। এ বারের নির্বাচনে বিজেপি এত বড় জয় পেতে চলেছে গুজরাতে, যা আগে কখনও হয়নি, বিশ্বাস ওই অংশের। নির্বাচনী ফলাফলের পূর্বাভাস সংক্রান্ত এই বিতর্কে খুব বেশি কথা খরচ করা অপ্রয়োজনীয় আপাতত। মোদীর ‘চা বিক্রেতা’ ভাবমূর্তি কেন নতুন করে তৈরি করতে হচ্ছে বিজেপিকে তার কারণ খোঁজা বেশি প্রয়োজনীয়। তবে কারণ খুঁজতে গিয়েই এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে এ বারের নির্বাচনে কিছুটা চাপ অনুভব করছে বিজেপি। যে ভাবে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গুজরাতে লড়তে নেমেছে বিজেপি, তা দেখেই এমনটা মনে হচ্ছে। তূণীর থেকে বাইরে আনা হয়েছে প্রায় সব রকমের বাণ। বাইরে আনা হয়েছে বিজেপির ব্রহ্মাস্ত্র— ব্র্যান্ড নরেন্দ্র মোদী। যে রূপে ব্র্যান্ড মোদী এ যাবত্ সবচেয়ে বড় নির্বাচনটা জিতেছে, গুজরাতের নির্বাচনী প্রচারেও ব্র্যান্ড মোদীর সেই রূপকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নিঃসন্দেহে এখনও পর্যন্ত মোদীর নামে লড়া বৃহত্তম নির্বাচন। সেই নির্বাচনে মোদীর যে ভাবমূর্তিকে কাজে লাগানো হয়েছিল, সাড়ে তিন বছর পরের একটি নির্বাচনে ফের মোদীর সেই ভাবমূর্তির অবতারণা বুঝিয়ে দিচ্ছে, গুজরাতের এই নির্বাচনকে গত কয়েক বছরে হওয়া বিভিন্ন নির্বাচনের চেয়ে আলাদা চোখেই দেখছে বিজেপি।

আরও পড়ুন: ‘হ্যাঁ আমি চা বিক্রি করতাম, কিন্তু দেশ বিক্রি করিনি’

প্রথমে নোটবন্দির ধাক্কা, পরে জিএসটি— মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে পর পর বিড়ম্বনার মুখে পড়েছে গোটা দেশের বণিকমহল। খুব বড় ধাক্কা খেয়েছেন মোদীর নিজের রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও। এই ধাক্কা কিন্তু ‘বানিয়া গুজরাত’কে বেশ কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে মোদী ও তাঁর দলের কাছ থেকে। দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে আসা গুজরাতি বণিক সমাজের কাছে মোদী এখনও আগের মতোই ‘কাছের মানুষ’ কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগে গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করতেন যে মোদী, তিনি যতটা কাছের মানুষ ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ততটা কাছের নন, বেশ খানিকটা দূরের মানুষ বরং— এমন এক ধারণা নীরবেই সম্ভবত চারিয়ে গিয়েছে। সেই ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করতে চাইছে বিজেপি। ‘কাছের মানুষ’ মোদী এবং ‘গুজরাতি প্রধানমন্ত্রী’ মোদী— এই দুই পরিচয়ে সেই কারণেই সবচেয়ে বেশি আলোকপাত করা হচ্ছে।

বিজেপির এই প্রচারকৌশল আরও একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিচ্ছে— গুজরাতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী সবচেয়ে বড় এবং প্রায় একমাত্র অবলম্বন দলের কাছে। দীর্ঘ দিন রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে উন্নয়নের সুযোগ পাওয়া, দেশজুড়ে একের পর এক নির্বাচনে বিজেপির জয়ের সুবাদে গুজরাতেও আত্মবিশ্বাসী থাকা, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের শাসক দলের সভাপতি, দু’টি পদেই দুই গুজরাতির আসীন থাকার সুবাদে গুজরাত বিজেপির বাড়তি মনোবলের অবকাশ তৈরি হওয়া— এতগুলি ইতিবাচক বিষয় বিজেপির পক্ষে রয়েছে এ বারে। কিন্তু সেই সব কিছু ছেড়ে শুধুমাত্র মোদীর প্রান্তিক অতীতের উপরে আলোকপাত করা শুরু হয়েছে যে ভাবে, তাতে স্পষ্ট, এ বারের লড়াইয়ে খুব স্বস্তিদায়ক অবস্থানে দাঁড়িয়ে নেই বিজেপি।

Newsletter Narendra Modi Gujarat Assembly Election 2017 BJP Election Campaign Congress অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay Rahul Gandhi Gujarat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy