Advertisement
E-Paper

পুলিশ কি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়েছে? নাকি লালবাজার এখনও দলদাস?

নজির গড়েই চলেছে কলকাতা পুলিশ। বামেদের নবান্ন অভিযানের দিন সাংবাদিক পিটিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন মহানগরের আইন-শৃঙ্খলার রক্ষাকর্তারা। এ বার তাঁরা শিরোনামে এলেন বিরোধী দলকে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ না তোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৭ ০৫:৩৯
জনারণ্য।—ফাইল চিত্র।

জনারণ্য।—ফাইল চিত্র।

নজির গড়েই চলেছে কলকাতা পুলিশ। বামেদের নবান্ন অভিযানের দিন সাংবাদিক পিটিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন মহানগরের আইন-শৃঙ্খলার রক্ষাকর্তারা। এ বার তাঁরা শিরোনামে এলেন বিরোধী দলকে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ না তোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে। কলকাতা পুলিশের এই নতুন কীর্তির উত্সও সেই নবান্ন অভিযানই। সলিল বসু নামে এক সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নবান্ন অভিযানে যোগ দিয়ে মাথায় পুলিশের লাঠির ঘা খেয়েছিলেন সলিল বসু, রক্তক্ষরণ হয়েছিল ভিতরে ভিতরে, কয়েক দিন যুঝে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। সিপিএম-এর দাবি এমনই। এ দাবির সত্যতা কতটা, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। কিন্তু বিতর্কের অবতারণা কার হাত ধরে হবে? নিশ্চয়ই সিপিএম-এর মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাত ধরে। প্রশ্ন কারা তুলবেন? নিশ্চয়ই তৃণমূলের নেতারা সর্বাগ্রে প্রশ্ন তুলবেন। তেমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক ঘটনা ঘটল না। বিরল দৃষ্টান্তের জন্ম দিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে সর্বাগ্রে পাল্টা বিবৃতি দিল কলকাতা পুলিশ। বামেরা অপপ্রচার করছে, মৃত্যু নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করছে, মৃত্যু থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে— এমনই এক রাজনৈতিক বয়ান দিল খাঁকি পোশাকের বাহিনী। তাতেই থামলেন না পুলিশকর্তা। বামেদের বিরুদ্ধে এ বার কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও হুমকি দিলেন।

কলকাতা পুলিশের এই পদক্ষেপকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবতে পারছি না। পুলিশের এই নতুন মুখটা আসলে হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র, এ কথা অনেকেই মনে করছেন। তেমনটা মনে করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে শুধু নয়, প্রশাসনিক ভাবেও যে বিরোধী রাজনীতির মোকাবিলা করা হবে, সে ইঙ্গিত আগেও দেওয়া হয়েছে। এ বার পুলিশ নিজেই সে কথা বুঝিয়ে দিল। পুলিশের উপর শাসকের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রভাব কতখানি নিরঙ্কুশ হয়ে উঠলে, শাসকের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের তোলা অভিযোগের জবাব দিতেও আগ বাড়িয়ে ময়দানে নামে পুলিশ, অনেকেই তা কল্পনা করার চেষ্টা করছেন।

যে নজির কলকাতা পুলিশ তৈরি করল, তা গণতন্ত্রের পক্ষে যে অত্যন্ত বিপজ্জনক, সে নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল যখন বিরোধী আসনে ছিল এবং বর্তমান বিরোধী দল সিপিএম যখন ছিল শাসকের আসনে, পুলিশ-প্রশাসনকে দলতন্ত্রের দাসে পরিণত করার অভিযোগ প্রায় রোজ উঠত। পুলিশকে দলদাসে পরিণত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সে সময় প্রবল ভাবে সরব হয়েছিল গোটা বিরোধী শিবির। ক্ষমতার অলিন্দে তার পর পালাবদল ঘটেছে। কিন্তু লালবাজার দেখিয়ে দিল, পাত্র-পাত্রীগুলো বদলেছে মাত্র, পরিস্থিতি বদলায়নি। পুলিশ এখনও দলদাস হয়েই রয়ে গিয়েছে।

এক রাজনৈতিক কর্মীর মৃত্যু প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতৃত্ব কী মন্তব্য করবেন, পুলিশ আজ তা-ও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দল পুলিশি নির্দেশিকা মেনে রাজনীতি না করলে অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

গণতন্ত্রের পক্ষে এ ছবি কতটা বিপজ্জনক হয়ে ধরা দিল, সে কথা বলাই বাহুল্য। এ রাজ্যে মসনদের হাতবদলের আগে পুলিশের দলদাসত্ব অন্যতম জ্বলন্ত রাজনৈতিক ইস্যু ছিল। তার বিরুদ্ধেই সংগ্রাম ছিল। সে সংগ্রামে ভর করে ক্ষমতার অলিন্দে বদল এসে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সংগ্রামটা কোনও গন্তব্যে পৌঁছয়নি। আজও পুলিশ-প্রশাসনের মেরুদণ্ডে সেই শাসক ভজনারই তাড়না, আজও তাদের শিরায় শিরায় সেই দাসত্বের অনুভূতি। ছবিটা সত্যিই খুবই দুর্ভাগ্যজনক হয়ে ধরা দিল।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay Newsletter indulgence West Bengal Police Lalbazar democracy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy