Advertisement
E-Paper

অযাচিত

আম্পায়ারের কর্তব্য খেলা নিয়ন্ত্রণ। আত্মনিয়ন্ত্রণেরই অভাব ঘটিলে, তাঁহার আম্পায়ারের কাজ করা শোভা পায় না। যে কোনও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রককে নিরাবেগ ও যুক্তিসর্বস্ব হইয়া থাকিতে হয়। দণ্ডিতের সহিত দণ্ডদাতা যদি সত্যই হাউহাউ করিয়া হাত-পা ছড়াইয়া কাঁদিতে বসেন, তাহা হইলে বিচার কমেডিতে পর্যবসিত হইবে।

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০৩
ছবি রয়টার্স।

ছবি রয়টার্স।

ইউএস ওপেন টেনিস প্রতিযোগিতা বিশ্বের সেরা চারটি স্ল্যামের অন্যতম, এই টুর্নামেন্টে জিতিবার জন্য সেরা টেনিস খেলোয়াড়েরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করিয়া থাকেন। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখা যাইল, এক খেলোয়াড়কে উৎসাহ দিবার জন্য চেয়ার হইতে নামিয়া আসিলেন আম্পায়ার। খেলোয়াড়টি হইলেন অস্ট্রেলিয়ার নিক কিরিয়স, যাঁহার বহু অ-খেলোয়া়ড়োচিত আচরণের দুর্নাম রহিয়াছে, তাহার সহিত রহিয়াছে উদ্ভট স্বঘোষিত বিবৃতি: তিনি টেনিস খেলাটি পছন্দই করেন না। কোর্টে তাঁহার দুর্ব্যবহার ও প্রায় ইচ্ছা করিয়া গা ছাড়িয়া দিয়া ম্যাচ হারিয়া যাওয়া দেখিয়া ম্যাকেনরো তাঁহাকে পেশাদার টেনিস ছাড়িবার পরামর্শ দিয়াছেন কড়া স্বরে। জরিমানাও হইয়াছে। এমন খেলোয়াড়ের উদ্দীপনার প্রয়োজন হইতেই পারে, কিন্তু তিনি হারিতেছেন দেখিয়া স্বয়ং আম্পায়ার যদি সেই প্রেরণা জোগান দিবার কাজে স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া অগ্রসর হন, বহু ভ্রু কুঞ্চিত হইবেই। ম্যাচটি কিরিয়স জিতিয়াছেন। তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, ঘটনার যথাযথ তদন্ত চাহেন। কর্তৃপক্ষ জানাইয়াছেন, আম্পায়ার কোনও অন্যায় করেন নাই। আর কিরিয়স বলিয়াছেন, খেলা হারিবার সময় কেহ যদি আসিয়া বলেন, আমি এমন ভাবে হারিবার খেলোয়াড় নহি, অনেক ভাল খেলোয়াড়, তাহা হইলে নূতন কী বলিলেন? রজার ফেডেরার বলিয়াছেন, আম্পায়ারের আচরণ সমর্থনযোগ্য নহে, তিনি কিরিয়সকে সাহায্য করিয়াছেন। জকোভিচ অবশ্য আম্পায়ারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁহার মতে, এই আম্পায়ার অত্যন্ত স্বতন্ত্র, সর্বদা ইতিবাচক ও হাস্যমুখ, উনি হয়তো কিরিয়সকে সম্ভাব্য জরিমানা হইতে রক্ষা করিতেছিলেন।

খেলায় আম্পায়ারের কাজ কিন্তু খেলোয়াড়ের ভাল করা নহে। তাঁহার দায়িত্ব, খেলার শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং অত্যন্ত নিবিষ্ট ভাবে নজর করা, কেহ যাহাতে অন্যায়ের শিকার না হয়। কেহ যদি অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে, তাহা তাহার প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি অন্যায়। আম্পায়ার নিজেই যদি নামিয়া গিয়া কাহারও খেলার মান উন্নয়নে উদ্গ্রীব হন, তাহা স্পষ্টতই সেই খেলোয়াড়ের প্রতি তাঁহার পক্ষপাত প্রদর্শন করে, যাহা তাঁহার দায়িত্বের পরিপন্থী। আর্জেন্টিনা হারিতেছে বলিয়া রেফারি তো মেসির পৃষ্ঠে হাত রাখিয়া বহু ক্ষণ ধরিয়া তাঁহাকে ‘মোটিভেট’ করিতে পারেন না! আম্পায়ারের আবেগ অবশ্যই থাকিতে পারে, কিন্তু তাহা প্রদর্শন করিবার ক্ষেত্র তাঁহার নিজের পরিচালিত ম্যাচ কখনওই নহে। টেনিস খেলায় দুইটি খেলোয়াড়ের প্রতি সমদর্শী হইতে হইলে, হয় আম্পায়ারকে নিজ চেয়ারে বসিয়া কেবল লক্ষ রাখিতে হইবে, খেলাটি ঠিক ভাবে চলিতেছে কি না। অথবা, যদি কেহ এই নীরস যন্ত্রবৎ পেশায় মানবিকতা সঞ্চার করিবেন বলিয়া মনস্থ করেন, তখন দুই খেলোয়াড়ের যখনই যে পয়েন্ট হারাইল, তাহাকেই সান্ত্বনা দিতে ছুটিয়া যাইতে হইবে। কিন্তু তাহা হইলে আম্পায়ার আর নিজ দায়িত্ব পালনের ফুরসত পাইবেন না, সারা সময়টিই দৌড়াইয়া কথা বলিয়া হাততালি দিয়া পিঠ চাপড়াইয়া প্রণোদনা নির্মাণ করিতে চলিয়া যাইবে। কিরিয়সের সহিত আম্পায়ার কথা বলিবার পর, কিরিয়সের খেলায় নব উদ্যম লক্ষ করা যায় ও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী হারবার্টকে পর পর তিনটি সেটে হারাইয়া ম্যাচ জিতিয়া লন। তাহা হইলে সেই সেটগুলির সময় আম্পায়ার চেয়ার হইতে নামিয়া হারবার্টের নিকট যাইয়া তাঁহার সহিত কথা বলিয়া তাঁহাকে অনুপ্রাণিত করেন নাই কেন?

আম্পায়ারের কর্তব্য খেলা নিয়ন্ত্রণ। আত্মনিয়ন্ত্রণেরই অভাব ঘটিলে, তাঁহার আম্পায়ারের কাজ করা শোভা পায় না। যে কোনও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রককে নিরাবেগ ও যুক্তিসর্বস্ব হইয়া থাকিতে হয়। দণ্ডিতের সহিত দণ্ডদাতা যদি সত্যই হাউহাউ করিয়া হাত-পা ছড়াইয়া কাঁদিতে বসেন, তাহা হইলে বিচার কমেডিতে পর্যবসিত হইবে। উদ্ধৃতি হিসাবে যাহা ভাল লাগে, চলচ্চিত্রে বা সাহিত্যে যে নিয়মভাঙা দরদের উদাহরণ মানুষকে উতরোল করিয়া তুলে, সর্বদা বাস্তব জীবনে তাহা উপকারী হয় না। তাহা ব্যতীত, জগতে এক প্রবল আপদ: গায়ে পড়িয়া অন্যের ভাল করিতে যাওয়া। সাধারণত ইহাতে যাঁহার ভাল করা হইতেছে তাঁহার আখেরে সর্বনাশের পথ সূচিত হয়। যদি তাহা না-ও ঘটে, অন্য কাহারও খারাপ হইয়া বসে। স্বার্থহীন হিতৈষীর উপকার জগতেরে সর্বাধিক বিক্ষত করিয়াছে কি না, তর্কের বিষয়। কিন্তু টেনিসে অকস্মাৎ নিঃস্বার্থ উপকারের হিড়িক পড়িলে, খেলাটির সমধিক অপকার সাধিত হইবে, সন্দেহ নাই।

এক দিকে দেবী চৌধুরানি, অন্য দিকে সানি লিয়ন। এক দিকে সিরিয়াল, অন্য দিকে ওয়েব-সিরিজ়। টিভির নিয়ম মেনে টিভি দেখতে বসেন মা-মাসিমা, বাঁকা হেসে নিজের ইচ্ছেমতো বিনোদনকে মোবাইলে ল্যাপটপে হাজির করেন যুবক-যুবতী। সিরিয়ালে সবার দুটো বিয়ে, ওয়েব-সিরিজ়ে সেন্সরহীনতার সুযোগ নিয়ে যখন-তখন নগ্নতা। দুই পৃথিবীর কিছুই কি ‘কমন’ নেই? আছে। দু’দলই হল-এ গিয়ে ছবি দেখেন না, আর বই পড়ার নাম করলেই সিধে মুচ্ছো!

Nick Kyrgios Tennis US Open
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy