Advertisement
E-Paper

বানভাসি

২০১১ সালের জনশুমারির পরিসংখ্যান আঁতকাইয়া উঠিবার মতো। দেশে প্রতি পাঁচ জন বঙ্গভাষীর মধ্যে এক জন ভিন্ন রাজ্যে কর্মরত।

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ভারতের যে প্রান্তেই বিপর্যয় ঘটুক, মারা পড়ে গরিব বাঙালি। কেরলের বন্যা আরও এক বার কথাটি প্রমাণ করিয়া দিল। হিসাব বলিতেছে, প্রায় কুড়ি লক্ষ বঙ্গসন্তান সে রাজ্যে কাজ করিতেন। অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক, কেহ কেহ আধা-দক্ষ। ইহার পূর্বে নোট-বাতিলের সময়েও দেখা গিয়াছিল, দেশের কার্যত প্রতিটি প্রান্ত হইতেই কর্মচ্যুত বাঙালি ঘরে ফিরিতেছেন। কেরল হইতে যাঁহারা ফিরিলেন তাঁহাদের মুখে প্রত্যাবর্তনের আনন্দ নাই, বরং ভবিষ্যতের উদ্বেগ রহিয়াছে। কাজ না থাকিলে সংসার চলিবে কী উপায়ে? কেরলে কর্মরত কুড়ি লক্ষ বাঙালির হিসাবটি যদি অবিশ্বাস্য ঠেকে, তবে ২০১১ সালের জনশুমারির পরিসংখ্যান আঁতকাইয়া উঠিবার মতো। দেশে প্রতি পাঁচ জন বঙ্গভাষীর মধ্যে এক জন ভিন্ন রাজ্যে কর্মরত। বেঙ্গালুরু-গুরুগ্রামের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিসর তাঁহাদের ঠিকানা নহে, তাঁহাদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। ভিন রাজ্যে অদক্ষ শ্রমিকের কাজ করিতে যাওয়ার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশে অগ্রগণ্য। রাজ্যের নাম পাল্টাইবার পূর্বেই অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে ঠাঁই পাইয়াছে বাংলা। মাটি কাটা হইতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ, হোটেল-রেস্তরাঁয় চাকুরি হইতে জরির কাজ, কৃষি— রাজ্যে রাজ্যে বাঙালি শ্রমিক খাটিতেছেন। কংগ্রেস, বামপন্থী দলগুলি এবং বিজেপি যে প্রশ্ন তুলিয়াছে, তাহার উত্তর না দিয়া মুখ্যমন্ত্রীর উপায় নাই— রাজ্যে যদি এতই উন্নয়ন হয়, তবে প্রায় দুই কোটি মানুষকে কেন রাজ্যছাড়া হইতে হইল?

এক রাজ্য হইতে অন্য রাজ্যে কাজ খুঁজিয়া লইতে বাধা নাই। যে রাজ্যে কাজের সুযোগ বেশি, মজুরির হার ভাল, শ্রমিকরা সেই রাজ্যেই যাইবেন। বস্তুত, ভিনরাজ্যগামী শ্রমিকের পরিসংখ্যান হইতেই পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবনতির আখ্যান নির্মাণ সম্ভব। একদা কলিকাতার পরিচিতি ছিল ‘ভারতের শহর’ হিসাবে— প্রজন্ম হইতে প্রজন্মান্তরে অন্য রাজ্যের শ্রমিকরা কলিকাতায় কাজ খুঁজিতে আসিতেন। ব্যবসা করিয়া ভাগ্য ফিরাইবার উদ্দেশ্যেও বহু মানুষ কলিকাতার উদ্দেশে পাড়ি জমাইতেন। আর এখন যে কোনও দিন যে কোনও সময় হাওড়া স্টেশনে গেলে অসংরক্ষিত কামরায় উঠিবার জন্য বাঙালি যুবকদের বিপুল লাইন চোখে পড়িবে। তাঁহারা কেরলে যাইতেছেন, রাজস্থানে, দিল্লিতে, মহারাষ্ট্রে— বেশি নহে, মাসে হাজার পনেরো টাকা রোজগার করিবার আশায়। অর্থাৎ, পাহাড় হইতে জঙ্গলমহল অবধি অট্টহাস্য করিয়া উঠা রাজ্য তাহার যুবশক্তিকে এই সামান্য কাজের সুযোগটুকুও করিয়া দিতে পারে নাই। পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের ছবিটি ঠিক কী রকম, ওই হাওড়া স্টেশনের লাইন দেখিলে তাহা লইয়া আর সংশয় থাকে না।

রাজ্য হইতে মেধাবীরা কাজের সন্ধানে দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদে চলিয়া যাইতেছেন, তাহা লইয়া যদিও বা খানিক হইচই হয়, অদক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকের অভিবাসী হওয়া লইয়া সাধারণত কাহারও তেমন মাথাব্যথা নাই— অন্তত, সেই শ্রমিকরা বন্যার জলে ভাসিয়া হাওড়া স্টেশনে ফিরিয়া না আসিলে। ইহার পিছনে রাজ্যের নাগরিক সমাজের এলিটিজ়মের ভূমিকা কতটা, সে প্রসঙ্গ থাকুক। প্রশ্ন হইল, রাজ্য সরকার তবে করিল কী? এক শত দিনের কাজের মজুরির অধিক আয় করিবার স্বপ্ন থাকিলেই রাজ্যছাড়া হইতে হইবে, এমন অবস্থা হইল কী ভাবে? বড় শিল্প হইলে কর্মসংস্থানও হইত। কিন্তু, মাঝারি বা ছোট শিল্প, এমনকি তেলেভাজা শিল্পও যদি ঠিক ভাবে দাঁড়াইত, তাহা হইলেও কি এক-পঞ্চমাংশ বাঙালিকে অভিবাসী হইতে হইত? বামফ্রন্ট আমল হইতে শুরু করিয়া এই জমানা— বাংলার অর্থনীতি ক্রমাগত অতলে তলাইয়া গিয়াছে। এখন বিহার-উত্তরপ্রদেশের সহিত একাসনে বসাই বাংলার নিয়তি।

কেরল Kerala Flood Kerala Flood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy