পদ্মাবতীর সেটে বিধংসী আগুনের পর ছবি
আবার দাঁত-নখ বার করল কট্টরবাদ। দেশের দুই প্রান্তে দুই রূপে দেখা দিল। আক্রমণের লক্ষ্য অবশ্য একই। মহারাষ্ট্রে হোক বা অসমে, আক্রান্ত শিল্প, আক্রান্ত উদারতা।
‘পদ্মাবতী’ ছবির সেটে আগুন ধরিয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। আগেও আক্রান্ত হয়েছিল ‘পদ্মাবতী’। সে বার রাজস্থানে, পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভংসালী শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। এ বার মহারাষ্ট্রে ভংসালী রক্ষা পেলেন কোনওক্রমে, তবে তছনছ হয়ে গেল ছবির সেট।
অসমে আবার গান গাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মুরুব্বিরা। মুসলিম মেয়ে নাহিদ আফরিনের গানের অনুষ্ঠান বাতিল করতে মুসলিম প্রধান উদালিতে শরিয়তের জিগির তোলা শুরু হয়েছে।
রানি পদ্মাবতীকে নিয়ে লোককথা যে রকম, তাতে পদ্মাবতী আর মনুষ্যত্বে নেই, প্রায় দেবত্বে আরোহন করেছেন। অতএব পদ্মাবতী সম্পর্কে সুলতান আলাউদ্দিনের অনুভূতি ঠিক কেমন ছিল, সে সব নিয়ে আর চর্চা চলে না। এ ছবিতে ইতিহাসের বিন্দুমাত্র বিকৃতিও নেই বলে নির্মাতা যতই দাবি করুন, কট্টরবাদীরা আর ‘ঝুঁকি’ নিতেই পারেন না। পদ্মাবতীর আখ্যানে পান থেকে যদি চুনটি খসে যায়, তবে মহাভারত অশুদ্ধ না হোক, ভারতভূমি অবশ্যই অশুদ্ধ হয়ে যাবে। কট্টরবাদী হিন্দু সংগঠনগুলোর ভাব-ভঙ্গি অনেকটা তেমনই। আর অসমে নাকি ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একে তো মুসলিম মেয়ে গান গাইছেন, বে-পর্দা থাকছেন। তার উপরে মুসলিম প্রধান এলাকায় গানের অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। এর চেয়ে বড় অনাচার আর কী-ই বা! অতএব কট্টরবাদীরা রই রই রবে ময়দানে নামলেন, প্রচারপত্র ছড়ালেন, ফতোয়া দিলেন।
লড়াই ছেড়ে পিছু হঠেননি ভংসালী। পিছু হঠেননি আফরিনও। ‘পদ্মাবতী’র নির্মাণ হবে, আফরিনের গানও চলবে। আক্রমণ উপেক্ষা করে এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে। এই দৃঢ়তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু সতর্ক হওয়ার মোড়টাতেও পৌঁছে গিয়েছি আমরা সবাই। রাজনীতির প্রয়োজনে বা অন্যতর কোনও স্বার্থে, ধর্মীয় কট্টরবাদকে সুন্দর মোড়কের আড়ালে লালন করা হয়েছে দীর্ঘ দিন। এখন এই প্রশ্রয় বন্ধ হওয়া জরুরি তো বটেই, সমাজের সব স্তরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠাও খুব জরুরি। না হলে আক্রমণটা দিন দিন বাড়বে, জীবনের স্বাভাবিক গতি বার বার রুদ্ধ হবে, অযাচিত বিষ ছড়ানোর চেষ্টা হবে।
হিন্দু হন বা মুসলিম, খ্রিস্টান হন বা বৌদ্ধ, কট্টরবাদীরা কিন্তু দিনের শেষে সবাই এক। সঙ্কীর্ণতার সাধনায় মেতেছেন তাঁরা। বিভাজনই তাঁদের অভিন্ন লক্ষ্য। যাঁরা চান উদার একটা আকাশ, তাঁদের প্রত্যেককে তাই এক পক্ষে দাঁড়াতে হবে এখন। প্রতিটি কট্টরবাদী জিগিরের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর চড়াতে হবে আরও উচ্চে। সামনে দু’রকম সম্ভাবনা— বিষে নীল শরীর আর অসীম নীল আকাশ। কোনটা ভাগ্যে আমাদের, স্থির করব আমরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy