Advertisement
১৭ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

উন্নয়ন আমরাও চাই। দশের, দেশের। আমি স্কুল শিক্ষক। কলকাতার একটি সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তর উত্তীর্ণ হয়ে একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছি বছর আটেক হল।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০০:২১
Share: Save:

শিক্ষকদের সম্মানটুকু অন্তত দিন

উন্নয়ন আমরাও চাই। দশের, দেশের। আমি স্কুল শিক্ষক। কলকাতার একটি সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর স্তর উত্তীর্ণ হয়ে একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছি বছর আটেক হল। আমার বাবা চাকরি করতেন গ্রন্থাগারে। মাইনে পেতেন সামান্য। বেশ কয়েক যুগ আগে দাদু ছিলেন একটি স্কুলের করণিক। মাইনে প্রায় পেতেন না বললেই চলে। আমি যখন চাকরি পাই তখন বেতন খুব একটা বেশি ছিল না। বেড়েছে ২০০৯ সাল থেকে। পে কমিশনজনিত কারণে।

যদি মহার্ঘ ভাতা না দিয়ে রাজ্যের উন্নতি হয়, তা হলে তো ভাল। কিন্তু অভিরূপবাবু যে ভাবে স্কুল শিক্ষকদের বেতনের বোঝার কথা বললেন তাতে খুব দুঃখ পেলাম। স্কুল শিক্ষকরা কি সত্যিই রাজ্যের বোঝা? আমরা যারা কোনও দিন রাজনৈতিক মিটিং মিছিল করিনি কিন্তু প্রতিবাদী মুখ সামনে দেখে প্রতিবাদ করেছিলাম, নাটক গান বেঁধেছিলাম, তারা যখন পরিশ্রম করে আদর্শকে সামনে রেখে চাকরি করতে ঢুকলাম, কোনও সংগঠন করলাম না, ছাত্রদের কথা ভেবে গেলাম, বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়াকে স্বাগত জানালাম। ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দানকে স্বাগত জানালাম, তাদের কারও কথা কি তাঁর মনে হল না? আমি তো মুখের উপরেই বলেছিলাম, কোনও রাজনৈতিক সংগঠন করতে আমি আসিনি। এ রকম তো অনেকেই আছেন। মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার দরকার নেই মনে করলে দিতে হবে না। কিন্তু প্রাপ্য সম্মানটুকু বোধহয় পরিশ্রমী শিক্ষক সমাজ দাবি করতেই পারে।

তা ছাড়া স্কুলগুলোতেও রাজনীতি প্রবেশ করতে না দিয়ে, মাস্টারমশাইদের রাজনৈতিক চাপ না দিয়ে, স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতিসাধন করে তাঁদের সুষ্ঠু ভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিন। ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদেরও তো পাশে পেতে চাই। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। কলকাতার কলেজে পড়েছি ঠিকই, কিন্তু খুব সাধারণ জীবনযাপন করেছি, লেখাপড়ার জন্য নির্ভর করেছি কলেজশিক্ষকদের উপর। স্কুলে দেখেছি পরিশ্রমী ও প্রণম্য শিক্ষকদের, কলেজেও। তাঁরা কোন রাজনৈতিক দল করেন, সে প্রশ্ন কোনও দিনই মনের মধ্যে আসেনি। অলস শিক্ষকদেরও দেখেছি, কিন্তু সেই সব শিক্ষকের আদর্শই নিয়েছি, যাঁরা পড়িয়েছেন পরিশ্রম করে। পাশে দাঁড়িয়েছেন সব সময়।

আমিও দু’হাত তুলে বলছি, ভাল থাকুন সাধারণ মানুষ। তাঁরা ভাল থাকলেই আমরা পড়ানোর পরিবেশ পাব। স্কুল-ছুটেরা বিদ্যালয়ে আসবে। দোহাই, সাধারণ মানুষকে উন্নয়নের পথে শামিল করে ভোট চাইবেন না। ভাল রাখাটা আপনাদের দায়িত্ব।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ছবিটা আমাদের বাড়িতে দেখেছিলাম ১৯৯৫ সালে। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। বাবা বলেছিলেন, ‘প্রতিবাদের মুখ। এঁকে প্রণাম করো’। এ ভাবেই সম্মান করতে শিখেছি সবাইকে। কিন্তু বাম জমানায় মিছিলে হাঁটা শিক্ষকদের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেই হত বোধহয়।

অমৃতাভ দে। কৃষ্ণনগর, নদিয়া

‘বনাম’ কেন

অভিরূপ সরকারের লেখা (‘মহার্ঘ ভাতা বনাম উন্নয়নের খরচ’, ২১-৪) নিয়ে কিছু প্রশ্ন। প্রথমত, ‘মহার্ঘ ভাতা বনাম উন্নয়নের খরচ’ কেন? বিষয় দুটি কি একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী? মহার্ঘ ভাতা তো দেওয়া হয় কর্মচারীদের প্রকৃত আয় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে যাতে কমে না যায়। প্রকৃত আয় কমে গেলে বাজারে চাহিদা কমে। তার ফলে অবিক্রীত দ্রব্য ও পরিষেবার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। উৎপাদকের (সমষ্টিগত) মুনাফার পরিমাণ কমে, বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পায়, যা উন্নয়নের গতিকে মন্দীভূত করে। সুতরাং, মহার্ঘ ভাতা উন্নয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সহায়ক।

দ্বিতীয়ত, তিনি লিখেছেন, এক কিস্তি মহার্ঘ ভাতা দিতে সরকারের বাড়তি খরচ মাসে মোটামুটি পঁচিশ কোটি অর্থাৎ বছরে তিনশো কোটি টাকা। তা হলে পাটিগণিতের সরল হিসেবে কেন্দ্রের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার সমতা আনতে গেলে আরও পনেরো হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এখন, বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের এই ব্যবধান তো এক বছরে হয়ে যায়নি। দীর্ঘ চার পাঁচ বছরের হিসাব।

কিন্তু লেখক এই মোট খরচের সঙ্গে ক্লাব অনুষ্ঠান উৎসবের খরচ করা টাকার হিসেবের তুলনা যখন করছেন, তখন বলছেন, ‘এরা (ক্লাবগুলি) প্রত্যেকে দু’লক্ষ করে পেলে মোট অনুদান দাঁড়ায় সাড়ে পাঁচ হাজার গুণিতক ২ লক্ষ টাকা। মোট একশো দশ কোটি টাকা।’ প্রশ্ন হল, এই টাকার হিসেব কি সাড়ে চার বছরের দেয় অনুদানের মোট টাকা? না কি প্রতি বছরের?

তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রীড়া দফতরের প্রাপ্য তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, শুধু ২০১৪ ও ২০১৫ সালেই ক্লাবকে দেওয়া অর্থের মোট অঙ্ক ২২৩ কোটি। মেলা, উৎসবের খরচ তো না হয় বাদই দেওয়া গেল।

চতুর্থত, ‘অসংখ্য সরকারি কর্মচারী... বাম আমলে রাজনৈতিক কারণ চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁদের মূল কাজ ছিল মিটিং মিছিল করা, তাঁরা এখনও সরকারের কোনও কাজে লাগেন না।’ তা হলে তো তাঁদের কর্মচ্যুত করলে উৎপাদনে কোনও ব্যাঘাত ঘটে না। উন্নয়নের স্বার্থেই এঁদের বিষয়ে সরকারের একটি নির্দিষ্ট নীতি থাকা জরুরি। ওই কর্মচারীরা কি এখনও মিটিং মিছিলে ব্যস্ত থাকেন? যদি থাকেন, এক্ষুনি বহিষ্কারের মতো কঠোর অথচ উন্নয়নের স্বার্থে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্ততপক্ষে তা হলে সৎ ও দক্ষ কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দেওয়া যেত।

ষষ্ঠত, ‘অদক্ষতার একটা উদাহরণ হল স্কুল শিক্ষা।’ এমন অতিসরলীকৃত মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। পশ্চিমবঙ্গে বহু বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষকশিক্ষিকার পদও অনেক স্কুলেই শূন্য, আংশিক সময়ের শিক্ষক ও প্যারাটিচার দিয়ে কোনও ক্রমে চলছে। টিআইসি-রা (টিচার ইন চার্জ) কোনও মতে ঠেকা দিয়ে প্রাণপাত করে প্রথম প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। এঁরা একাধারে শিক্ষক, কেরানি, পিয়ন, মিড ডে মিলের তত্ত্বাবধায়ক, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যের পিছনে সরকারের অন্যতম কারিগর। উচ্চমাধ্যমিক বা মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্ব সুষ্ঠু ভাবে সমাপ্ত করতে খাতা দেখার কাজ থেকে ভোটের কাজ, সব কিছুতে এঁদের ব্যবহার করা হয়। এঁরা অবশ্যই ‘অদক্ষ’! স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য ১০০ ভাগ দায়ী।

হীরক সেনগুপ্ত। কলকাতা-৫৫

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

letter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE