Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

সম্প্রতি কলকাতা ট্রাফিক থেকে একটা এসএমএস পাই যে, আমার গাড়ি স্টপ লাইন অমান্য করেছে এবং অনলাইন ফাইন জমা দিতে হবে। ফাইন জমা দিতে গিয়ে দেখলাম ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আরও কয়েকটা ‘ভায়োলেশন কেস’ আমার গাড়িতে রয়েছে। এর ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

নদীর নীচে বিস্ময়

গঙ্গার তলদেশ দিয়ে মেট্রোর সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে বহু জিনিস উদ্ধার হয়েছে (‘গঙ্গার নীচে প্রস্তুত সুড়ঙ্গ’, ২৪-৬)। কামানের গোলা এবং ডুবে যাওয়া জাহাজের খোলের অংশ— এই দুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে সংবাদে। উদ্ধার করা বাকি জিনিসগুলি সম্পর্কে জানতে চাই। সত্যি বলতে কী, সেগুলি দেখার আগ্রহ প্রবল হয়ে উঠছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজ করে তার অতীত বিবরণ-সহ দ্রব্যগুলি যদি গঙ্গাতীরের কোনও নির্মীয়মাণ মেট্রো স্টেশনে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে প্রদর্শনের ব্যবস্থা হয়, তা হলে তা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

ফাইন-ঝামেলা

সম্প্রতি কলকাতা ট্রাফিক থেকে একটা এসএমএস পাই যে, আমার গাড়ি স্টপ লাইন অমান্য করেছে এবং অনলাইন ফাইন জমা দিতে হবে। ফাইন জমা দিতে গিয়ে দেখলাম ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত আরও কয়েকটা ‘ভায়োলেশন কেস’ আমার গাড়িতে রয়েছে। এর ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। ফাইন জমা দিতে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা কেস কোর্ট থেকে সেটল করতে হবে। অনলাইন ফাইন দেওয়া যাবে না।

আমার প্রশ্ন, ২০১০-এ যদি ‘ট্রাফিক ভায়োলেশন কেস’ হয়ে থাকে এবং যদি আমি না জেনে থাকি তা হলে দায়টা কি শুধু আমার? এত দিন পরে কী করে মনে পড়বে যে, ওই দিন সত্যিই কোনও ট্রাফিক ভায়োলেশন হয়েছিল কি না। যদি সত্যিই তা হয়ে থাকে, ফাইন নিশ্চয়ই দেব। কিন্তু সময়ে তথ্যটা পেলে অন্তত নিজে বুঝতে পারতাম যে সত্যিই এমন কিছু হয়েছে কি না। ফাইনের টাকা অনলাইন নিলেই ভাল হয়। কোর্টে গিয়ে মীমাংসা করতে হলে বিড়ম্বনা অনেক বেড়ে যায়। প্রবীণ নাগরিকদের তো আরও অসুবিধা। তাই অনুরোধ, জরিমানার পরিমাণ কিছু বাড়িয়ে অন্তত আদালতে দৌড়নোটা বন্ধ করুন।

সমীরবরণ সাহা, কলকাতা-৮১

মধ্যবিত্ত বাঙালি

ইতিহাসে দেখা গেছে, কী সমাজসংস্কারে, কী রাষ্ট্রবিপ্লবে, মধ্যবিত্তের একটা বিশিষ্ট ভূমিকা থাকে। মধ্যবিত্ত হল সেই সামাজিক বর্গ, যারা পরিবর্তনের রথের রশিতে হাত লাগায় অগ্রণী উৎসাহে। কথাটি ফরাসি বিপ্লবে বুর্জোয়াদের ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, তেমনই সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানদের ভূমিকার ক্ষেত্রেও। উভয় ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি অনেকটাই মাঠে মারা গিয়েছিল ঠিকই। কেন না ফোকটে দই মারার জন্য নেপোরা চিরকালই ওত পেতে থাকে। কিন্তু তবুও যেটুকু সামাজিক ফসল তোলা গিয়েছিল দু’টি ক্ষেত্রে, তাতে মানসিক পুষ্টির অবশেষ কম ছিল না। বেশ কিছু সামাজিক মূলধন এবং সাংস্কৃতিক অর্জন নতুন অভিধায় চিহ্নিত হয়েছিল। মানুষের যাপিত জীবনে অনেক কিছু অভিনব অভিজ্ঞান যুক্ত হয়েছিল।

কথাগুলি মনে এল সাম্প্রতিক বাঙালি মধ্যবিত্ত-জীবনের নিরুত্তাপ যাপন পদ্ধতি দেখে। বঙ্গে মধ্যবিত্ত এখন স্তরে স্তরে বিস্তর। বিত্তের দিক থেকে দেখলে এঁরা প্রায় ব্রহ্মের মতো এক এবং অদ্বিতীয়। কিন্তু চিত্তের দিক এঁরা বহু এবং বিবিধ। গড়পড়তা মধ্যবিত্ত বাঙালি এখন অনেক বেশি, হয়তো বা ভয়ানক, সাবধানী। আর যে বাঙালি সরকারি-চাকুরে, বিশেষত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন, তিনি দেওয়ালকে সাক্ষী রেখেও কোনও কথা বলেন না। এঁদের কাছে রাষ্ট্র এবং সরকার মা-কালীর মতো ভয়-দেখানো ভয়ংকর এবং মান্যবর। সরকার যা করেন, ভালর জন্য করেন এবং যা করেন না, তা-ও তাঁর ভালর জন্যই বলে এঁরা মনে করেন, তা সে তাঁকে তৃণমূলেই ফেলে রাখা হোক কিংবা মগডালেই তুলে ধরা হোক!

এ বঙ্গে মধ্যবিত্তের আর একটি খণ্ডিত অংশ বসবাস করছেন অনেকটা ট্যুরিস্টদের স্টাইলে। এঁরা দয়া করে ধরাধামে এসেছেন ক’দিনের জন্য ফুর্তিটুর্তি করতে! ক’টা দিন একটু শপিং মলে ঘুরেটুরে কাটান, আইনক্স-পিভিআরে ফিল্ম দেখার ফোকরে পপকর্ন খান, বছরে এক বার অন্তত ট্যুরে যান, সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারেন।

এ ছাড়া আছে চিন্তিত মধ্যবিত্ত বাঙালি। দুটো অত্যন্ত জরুরি ইন্টেলেকচুয়াল কাজ এঁদের নার্ভাস সিস্টেমে সেঁটে গেছে: এক, খুঁত ধরা আর দুই, প্রতিবাদ করা। এঁদের সব কিছুতেই গোসা করা স্বভাব। ইহলোকে কোনও কিছুই এঁদের মনপসন্দ নয়। সরকারি কোনও কাজেই এঁরা দরকারি কিছু দেখেন না। এক কথায়, এঁরা চোখে-আঙুল দাদা। যেমন ধরুন, ক্রিকেট খেলাটা শুধু এঁরাই বোঝেন। যদি মাঠে নামতেন, ধোনি-কোহালিদের হেঁশেলে হাঁড়ি চড়ত না। তাই দয়া করে খেলাটা এঁরা ওঁদের ছেড়ে দিয়েছেন। ক্রিকেট বিষয়ে এমন সব বক্তব্য রাখেন আর মন্তব্য করেন যেন তেন্ডুলকরের জেঠামশায় কথা বলছেন। কলেজের চৌকাঠ মাড়াননি কোনও কালে, কিন্তু শিক্ষা নিয়ে এমন মারাত্মক বক্তব্য রাখেন যে অমর্ত্য সেনও ম্রিয়মাণ হয়ে যাবেন।

এঁদের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রতিবাদ করা। এঁরা হেব্বি আন্তর্জাতিক। নিজের দেশের সমস্যা নিয়ে আদিখ্যেতা করার এঁদের সময় কোথায়! সোশ্যাল মিডিয়া এঁদের প্রায় পৈতৃক চারণভূমি। মধ্যবিত্তের হরেক কিসিমের ক্রোধ এবং প্রতিবাদে ফেসবুক উপচে পড়ে। কিন্তু ফেসবুকের বাইরেও যে একটা আস্ত পৃথিবী পড়ে আছে লড়াই করার ক্ষেত্র হিসেবে, সে-কথা এঁদের মনে থাকে না।

আবার এর ঠিক উলটোটাও আছে। মধ্যবিত্তের এই ঘরানাকে বিনয়চন্দ্র পাপোশ অভিধায় আপনি অভিষিক্ত করতে পারেন। ঈশ্বর এঁদের ঘাড়ের উপর মাথাটা এমন করে ফিট করেছেন যে বস্তুটি শুধু বাঁ দিকেই কাত হয়। তা বলে এঁরা বামপন্থী— ভাববেন না। স্রেফ বৈষ্ণবীয় বিনয়ের বায়বীয় চাপেই এমনটা হয়েছে! এঁরা সব কিছুই মনে না-নিলেও মেনে নিতে অভ্যস্ত। এক ধরনের হীনম্মন্যতা এঁদের মজ্জাগত। এঁরা নিজস্ব পরিবারকেন্দ্রিক জীবন-সমস্যা নিয়েই জেরবার। এঁদের জীবনদর্শনে চারটি অবশ্য-আচরণীয় পদ আছে: আপদ, বিপদ, সম্পদ আর গোষ্পদ। আপদ মানে এঁরা কোনও উটকো ঝামেলার ধারে-কাছে থাকে না। এঁরা সদাসর্বদা এক ঘোরতর কল্পিত বিপদের আশংকায় আতঙ্কিত। সম্পদ সঞ্চয়ে এঁদের অনন্যমনস্ক আগ্রহ রীতিমত ঈর্ষণীয়। গো-মাংস উৎসারিত কোনও পদ এঁদের খাদ্য-তালিকায় ব্রাত্য। সে দিক থেকে এঁরা সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী।

সবশেষে, সবচেয়ে সরেস হল সেয়ানা মধ্যবিত্ত। এঁরা দ্বিস্তরভোজী। গাছেরও খান, তলারও কুড়োন। এঁরা দেশের সব রকমের সুযোগসুবিধে আষ্টেপৃষ্ঠে ভোগ করেন। পাবলিকের ট্যাক্সের টাকায় এঁদের পুত্র-কন্যারা শিক্ষার শুরুটা করে দেশের সবচেয়ে নামী প্রতিষ্ঠানে। তার পর উচ্চশিক্ষার আহ্বানে এরা সাড়ম্বরে দেশত্যাগ করে, শিক্ষা শেষে ইয়োরোপ কিংবা মার্কিন দেশে একটা চাকরি পেলে এদের জীবনে মোক্ষলাভ ঘটে। সেকেন্ড কিংবা থার্ড ক্লাস সিটিজেন হয়ে কায়ক্লেশে ও দেশে এদের দিন কাটে। আর এ দেশে তাদের পিতামাতারা সুগম্ভীর গর্বের ঢেঁকুর তোলেন পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে।

পরিশেষে, জনান্তিকে একটা গোপন কথা কবুল করে ফেলি! কাঁঠালের যেমন আমসত্ত্ব হয় না, সোনার যেমন পাথরবাটি হয় না, তেমনি বাঙালি মধ্যবিত্ত, কিংবা মধ্যবিত্ত বাঙালি বলে কোনও বস্তু হয় না। কিছু বুঝলেন? হেঁ হেঁ।

অরবিন্দ সামন্ত, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়

গঙ্গাস্নান

আমাদের গঙ্গাস্নান করতে হলে ফুলিয়া যেতে হয়। কিন্তু কয়েক দিন হল ফুলিয়া গিয়ে গঙ্গাস্নানকে প্রহসন বলে মনে হল। গঙ্গায় নামার কোনও সিঁড়ি নেই। পাহাড়ের মতো উঁচু মালার মধ্য দিয়ে আমাদের মতো বয়স্কদের হামাগুড়ি দিয়ে নেমে স্নান করতে হল। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি, যদি সিঁড়ি দিয়ে নামার ব্যবস্থা করে দেন, তা হলে খুব ভাল হয়।

অনিতা পালচৌধুরী, রানাঘাট

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE