দিল কি আওয়াজ...
বছর ছয়েক আগে নন্দন-২-তে ফিল্ম ডিভিশনের তথ্যচিত্র ‘মহম্মদ রফি’ দেখতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। প্রথমত, ছোট প্রেক্ষাগৃহে লোকে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে একটা সাদা-কালো ডকুমেন্টারি দেখছে, কারণ সিট সব ভর্তি। দ্বিতীয়ত, পরদায় রফি যখনই গান শুরু করছেন, তখনই লাইভ জলসার মতো দর্শক-শ্রোতারা প্রবল হর্ষধ্বনি করে উঠছেন, অবিকল যেমন অতীতে নেতাজি ইন্ডোর, ব্যারাকপুর বা আসানসোলের জলসায় হত। তৃতীয়ত, ছবি শেষ হওয়ার পর বাইরে এসে মানুষের ক্লান্ত অথচ উজ্জ্বল মুখে জোরালো আলোচনা ও গানের কলি। যেন জলসা-ফেরত মানুষের উল্লাস। মনে হচ্ছিল, সেই ষাট-সত্তরের দশকে ফিরে গিয়েছি।
রফির গানগুলো কিছুতেই বুড়ো হচ্ছে না। এ কি শুধুই সংগীত প্রতিভা? কালজয়ী সুর? না কি এ সবের অতীত কোনও আত্মিক-আধ্যাত্মিক রহস্য? রফির জনপ্রিয়তা নিয়ে অজস্র আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁর আধ্যাত্মিকতা নিয়ে বেশি আলোচনা শোনা যায়নি।
প্রামাণ্য সূত্র-নির্ভর গোটাকয়েক গল্প। স্নেহভাজন মহেন্দ্র কপূরকে রাত বারোটার আকাশ দেখিয়ে মহম্মদ রফি বলেছিলেন, ‘এই যে দেখছ আকাশ, চাঁদ, তারা? এগুলো যে বানিয়েছে, গান সে-ই দিয়েছে। সে না চাইলে গান কেন, গলা দিয়ে থুতুও বেরোবে না।’
লতা মঙ্গেশকর বলেছিলেন, ‘আমার দাবি ছিল যারা গান গায়, তাদের গানের রয়ালটি দিতে হবে। কিন্তু রফিসাহেবের সঙ্গে মনান্তর হল। উনি বললেন গান করে এক বার পয়সা নিয়েছি, আবার কী! মুঝে অউর প্যায়সা নহি চাহিয়ে।’
ও পি নইয়ারের সুরে রফির বিখ্যাত ‘দিল কি আওয়াজ ভি সুন’ গান ছাড়া ‘হামসায়া’ ছবিটা কেউ মনে রাখেনি। সুপার-ফ্লপ। প্রযোজক-পরিচালক-নায়ক জয় মুখোপাধ্যায়ের বাজারে অনেক ধার। এমতাবস্থায় জয়ের বাড়িতে এক সন্ধেবেলা মহম্মদ রফির আগমন। ‘হামসায়া’ ছবির পারিশ্রমিক তিনি ফেরত দিতে এসেছেন, যদি জয়ের একটু সুরাহা হয়। জয় স্তম্ভিত, কিন্তু টাকা ফেরত কোনও মতেই তিনি নেবেন না। রফি চুপ করে থাকলেন কিছু ক্ষণ। তার পর সেই বিখ্যাত মৃদু হাসি হেসে জয়ের হাতে টাকার খামটা দিতে দিতে বললেন, ‘দিল কি আওয়াজ ভি সুন!’ নায়ক নিরুত্তর।
রফির বাক্সংযম? সুলতান মেহমুদের সঙ্গে জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার। সুলতান অনুযোগ করেছিলেন, রফিসাব আপনি এত কম কথা বলেন যে, ইন্টারভিউ নিতে বড় অসুবিধে হয়। রফির উত্তর ছিল, ‘কী করব, আমার গলার আওয়াজটা তো ভাল নয়, তাই কথা কম বলি। এই গলা নিয়ে আমি কখনওই রেডিয়ো-তে ঘোষকের চাকরি পেতাম না।’ যে কণ্ঠস্বরকে পরিচালক মনমোহন দেশাই বলেছিলেন ‘খুদা কি আওয়াজ।’
মাত্র ৫৫ বছর বয়সে শ্রাবণের আকুল বিষণ্ণ সন্ধ্যায় চলে গেলেন, লতার ভাষায় এই ‘ভগওয়ান কে আদমি।’ সত্যিই তো। নইলে ‘ইভনিং ইন প্যারিস’ বা ‘বহারোঁ ফুল বরসাও’ গেয়েছেন যিনি, তাঁর পক্ষে কী করে গাওয়া সম্ভব হল ‘তেরে ভরোসে নন্দলালা’-র মতো ভজন? ক’জন পারেন?
সুরঞ্জন চৌধুরী
কলকাতা-৯৭
সরকারি স্কুল
সরকার পোষিত ও অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ভর্তি কমছে। রাজ্যের অধিকাংশ সরকারি স্কুলে গত বছরের তুলনায় এই বছর ছাত্রছাত্রী কম ভর্তি হয়েছে। অবশ্য তারা পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে অথবা স্কুলছুট হয়ে যাচ্ছে— ব্যাপারটা তেমন নয়। আসলে সরকারি স্কুলের বদলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রবণতা উচ্চ হারে বাড়ছে। একটু আর্থিক সংগতি থাকলেই অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন। উচ্চ প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরে বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ার খরচ সামান্য বেশি। সে জন্য প্রাথমিকের তুলনায় মাধ্যমিকে বেসরকারিতে ছাত্র ভর্তির হার অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু হারটা যে বাড়ছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
একটু পিছন ফিরে দেখলে দেখা যাবে বেশ কিছু দিন থেকেই প্রাথমিক স্তরের সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনার পরিস্থিতি খুব খারাপ। শিক্ষকরা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক আর সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের অফিস থেকে প্রাপ্ত নির্দেশ পালন করতেই ব্যস্ত। কিন্তু এই ফরমানগুলোর অধিকাংশই পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের সঙ্গে সম্পর্কহীন। ছাত্র পড়ানোর চেয়ে শিক্ষা-বহির্ভূত কাজই প্রাথমিক শিক্ষকদের বেশি করতে হয়। তাঁরা যত্ন সহকারে কাজগুলো করেও থাকেন। কারণ না করলে অফিসে কথা শুনতে হবে। কিন্তু স্কুলের মধ্যে পড়ুয়াদের ঠিকমত না পড়ালে শিক্ষকদের কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না।
এর পরিণাম, কচিকাঁচারা প্রায় প্রতি দিন স্কুল আসে, মিড ডে মিল খায়। কিন্তু পড়াশোনা কিছু শেখে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার-পাঁচটি বছর কাটিয়েও বাংলা, ইংরেজি, অংক কোনও বিষয়েই পাতে নেওয়ার মতো বিদ্যে অর্জিত হয় না। বিদ্যালয় পরিদর্শকরাও প্রাথমিক স্তরের বুনিয়াদি শিক্ষা নিয়ে মাথা ঘামান না। তাঁদের অনেক কাজের চাপ। এক জন পরিদর্শককে দুটো-তিনটে চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হয়।
গত কয়েক বছরে উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার পরিবেশ অনেকখানি নষ্ট হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ মুখ্য হয়ে উঠেছে। প্রধান শিক্ষকরা ওই সব প্রকল্পের তদারকিতেই ব্যস্ত থাকেন। শিক্ষার্থীরা কেমন পড়ছে আর শিক্ষকরা কেমন পড়াচ্ছেন, তা দেখার অবকাশ তাঁদের হয় না। প্রধান শিক্ষকের এই ব্যস্ততার সুযোগে অনেক শিক্ষক গা-ছাড়া ভাব দেখান। অধিকাংশই কোনও পাঠ-পরিকল্পনা করেন না। কোনও ক্রমে শুধু সিলেবাস শেষ করার চেষ্টা হয়। শিক্ষণ-সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয় না। কারণে অকারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্কুল ছুটির প্রবণতা বেড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ অনুশাসন মেনে চলেন না। সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষের মধ্যেও শিক্ষকরা মোবাইল নাড়াচাড়া করছেন। ছাত্রছাত্রীরাও স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসছে। এই ভাবে শিক্ষার পরিবেশ বিদায় নিচ্ছে। অভিভাবকরা ঝুঁকছেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে।
কিন্তু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। অন্তত সর্বজনীন শিক্ষাকে বেসরকারি হাতে সঁপে দেওয়া উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট সকলের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার। কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজ সাথী, সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপ প্রভৃতি প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট ভাবে দু’এক মাসের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে। শিক্ষকদের দায়বদ্ধতা বাড়াতে হবে। তাঁদের কাজের মূল্যায়ন হওয়া দরকার। ছাত্রছাত্রীর বিশৃঙ্খল আচরণ বন্ধে শিক্ষকদের কঠোর হওয়ার ক্ষমতা দিতে হবে। শিক্ষা-বহির্ভূত সরকারি কাজে শিক্ষকদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি বন্ধের যে আইন আছে, তা প্রয়োগ করতে হবে।
মজিবুর রহমান
সাগরদীঘি, মুর্শিদাবাদ
খিদেটা পেটেরও
পড়ার সঙ্গে খাদ্যেরও প্রয়োজন। যে পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেখানে বিলাসিতা চলে না (‘বয়সটা কিন্তু পড়ার’, সম্পাদক সমীপেষু, ২৫-৭)। সঙ্গীতা, নন্দিতারা এমনই পরিবারের মেয়ে, যাদের দু’বেলা ঠিক খাবার জোটে না। পড়ার ফাঁকে পরিবারকে একটু সাহায্য করলে দোষ কোথায়? পড়াশুনা ভবিষ্যতে ভাত জোগাড়ের জন্য, শুধু মনের খিদে মেটানোর জন্য নয়। যেখানে দারিদ্র সীমার নীচে দেশের পঁচিশ শতাংশ লোক, সেখানে এ সব কথা শোভা পায় না।
অর্চনা ভট্টাচার্য
চুঁচুড়া, হুগলি
জঞ্জালে আগুন!
ইদানীং প্রতি দিন পাড়ায় জঞ্জালে আগুন লাগানো হচ্ছে। দূষণের জেরে আবাসিকদের প্রাণান্তকর অবস্থা।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৩১
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy