Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে আজও যেখানে লক্ষ লক্ষ কন্যাভ্রূণ নষ্ট করা হচ্ছে, কম বয়সে বিবাহ ও গর্ভবতী হওয়া, নারী পাচার, ধর্ষণ ও বঞ্চনার শিকার মেয়েরা, নারীবাদ অল্প জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সেখানে এই ‘গ্রেস শাবাশ’-এ গেল গেল করার মতো কিছু সম্মানহানি হয়নি (‘গ্রেস দিয়ে শাবাশ বলবেন না’, ২৫-৭)।

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:০১
Share: Save:

সম্মানহানি কোথায়?

ভারতের প্রত্যেক নারী মানুষ হিসেবে তাঁর প্রাপ্য শ্রদ্ধা আগামী কতশো বছরে পাবেন, জানা নেই। কিন্তু এই প্রথম অধিকাংশ ভারতবাসী টিভির সামনে বসলেন মহিলাদের ক্রিকেট দেখতে। জঘন্য হারের পরও অনুকম্পায় হৃদয় ভরে গেছে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই। তবে স্বভাববশত যদি তাঁরা মহিলাদের গালিগালাজ করতেন, তা হলে ভারতের অগণিত নারী এই খেলা নিয়ে দ্বিতীয় বার ভাবতেন না‌। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে আজও যেখানে লক্ষ লক্ষ কন্যাভ্রূণ নষ্ট করা হচ্ছে, কম বয়সে বিবাহ ও গর্ভবতী হওয়া, নারী পাচার, ধর্ষণ ও বঞ্চনার শিকার মেয়েরা, নারীবাদ অল্প জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সেখানে এই ‘গ্রেস শাবাশ’-এ গেল গেল করার মতো কিছু সম্মানহানি হয়নি (‘গ্রেস দিয়ে শাবাশ বলবেন না’, ২৫-৭)। বরং পুরুষদের সমান যদি মেয়ে ক্রিকেটারদের রোজগার ও ট্রেনিং হত, তা হলে এ খেলার মান বাড়ত। অনেক মেয়ে ক্রিকেট খেলাকে পেশা হিসেবে নিতেন। পঞ্চাশ বছর পর না-হয় এ রকম খেললে, ঘুঁটের মালা পরিয়ে ঝাল মেটাবেন।

সরস্বতী দত্তবোধক

হাওড়া

তুলনা কেন

মেয়েদের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় ক্রিকেট দল, ৪৪ বলে ৩৮ করতে হবে আর হাতে সাত উইকেট আছে এই অবস্থা থেকে ২৮ রানে ধড়াধ্ধড় সব উইকেট হারিয়ে ৯ রানে ম্যাচ হেরে বসল। এই হার দেখার পরও মহিলা ক্রিকেটারদের প্রতি ছ্যারছেরিয়ে খিস্তি, কুশপুতুল পোড়ানো; অমুকের মুন্ডু লাও, নির্ঘাত টাকা খেয়েছে বলে অভিযোগ বা বাড়িতে ইট-পাটকেল না পড়াকে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বলে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য মত প্রকাশ করেছেন। কারণ, পুরুষ ক্রিকেটার হলে তাঁদের প্রতি এমন আচরণই করা হত। অথচ এই হার দেখার পর সব্বাই করুণা-ছলছল পোজে বলতে লাগলেন, আহা গো, তাতে কী হয়েছে, এত দূর যে গিয়েছিল, এটাই কি যথেষ্ট নয়?

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রতি সকলের এই গালাগাল না দেওয়া অ্যাপ্রোচ শুধুমাত্র নারীকে (ও নারীবাদকে) অপমান করার জন্যই— এই ভাবনাটা বোধ হয় ভুল। আসলে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল নিয়ে সারা দেশে যতটা উন্মাদনা আছে, ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল এখনও সে জায়গায় এসে পৌঁছতে পারেনি। এ দেশের যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী এক নিঃশ্বাসে এক ডজন পুরুষ ক্রিকেটারের নাম বলে দিতে পারবেন। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে এ দেশের কত জন ক্রিকেটপ্রেমী এক ডজন মহিলা ক্রিকেটারের নাম জানতেন! পুরুষ ক্রিকেটারদের প্রতি অভাবনীয় উন্মাদনার কারণেই তাঁরা একটি ম্যাচ ভাল খেললেই দেবতার আসনে বসিয়ে দিচ্ছি আর পরের ম্যাচটি খারাপ খেললেই খেপে আকুল হয়ে যাচ্ছি, অকথ্য গালাগালে তাঁদের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিচ্ছি। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট এখনও আমাদের কাছে সেই উন্মাদনার জায়গায় এসে পৌঁছয়নি। সে কারণেই তাঁরা একটি ম্যাচ হেরে গেলে, তাঁদের প্রতি উন্মাদনাময় আবেগ বা জঘন্য অসভ্যতামির বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। আর ঘটে না বলেই সকলের মধ্যে ‘ছেলেরা যা পারে মেয়েরা তা পারে না’ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে নিবন্ধলেখক যে যুক্তি সাজিয়েছেন, তা কিন্তু সমাজের অসভ্যতামিকেই উসকানি দেয়, নারীর সম্মান বৃদ্ধি করে না।

দ্বিতীয়ত, ছেলেদের ক্রিকেটে ছেলেরা জিতবে, মেয়েদের ক্রিকেটে মেয়েরা জিতবে— দুইয়ের মধ্যে তুলনা আসছে কোথা থেকে? কিন্তু মিতালি, ঝুলন, হরমনপ্রীতরা যে মাইল-ফলক অবধি পৌঁছেছিলেন, সেটাও গোটা ভারতের জন্যই কম গর্বানুভূতির বিষয় নয়। সাইনা নেহওয়াল বা সানিয়া মির্জা বা মেরি কম বা পি ভি সিন্ধুদের নিয়ে মাতামাতিকে নিবন্ধলেখক কী বলবেন? নারীকে শ্রদ্ধা, অনুকম্পা না কি বৈষম্যমূলক আচরণ? তবে মিতালি রাজরা যে ভাবে প্রথম বারের জন্য মহিলা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন সমগ্র ভারতবাসীকে দেখিয়েছিলেন, তাকে সেলাম জানানো, কোনও ভাবেই মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নিদর্শন হয়ে উঠতে পারে না বলেই আমার বিশ্বাস। ঠিক যেমন আমাদের দেশে ছেলেদের ফুটবল দল বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৩০ থেকে ১২০-তে উঠে এলেই অনুকম্পায় ভরিয়ে দিই। তাঁরা কেন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মতো খেলতে পারছে না, তার জন্য ক্ষোভ উগরে দিই না।

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে টানা কয়েক দিন যে পরীক্ষা দিল, তা কিন্তু মোটেই ‘আরে, অংকে তো আর একটু হলেই পাশ করে গেছিলি রে!’ গোছের নয়। বরং ‘আরে, পরীক্ষায় (বিশ্বকাপ ক্রিকেটে) তো আর একটু হলেই ফার্স্ট হয়ে গেছিলি রে! বিরিয়ানি আন!’ গোছের উক্তি। এই উক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা প্রস্তুতির পরিশ্রমকেই কুর্নিশ জানানো হয়। পরীক্ষায় ফার্স্ট না হওয়াকে চূড়ান্ত ঘা কষায় না।

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল কয়েক দিন ধরে যে ভাবে সারা দেশের মনযোগের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, তা কিন্তু গ্রেস দিয়ে নয়, সত্যিকারের শাবাশি পাওয়ার যোগ্য।

সৈকত রায় গ্রন্থাগারিক,

সেকেন্দারপুর রায় কে পি পাল বাহাদুর হাই (উঃ মাঃ) স্কুল

দয়াই দেখান না!

মিতালি বা ঝুলনদের কৃতিত্ব এখানেই যে তাঁদের পরাজয় নিয়ে হলেও একটা আলোচনা হচ্ছে। মেয়েরা একটা ম্যাচ খেলতে গেলে পুরো দল যা অর্থ পেত, তার তিন গুণের বেশি অর্থ এক-এক জন মেয়ে পাবেন একটা ম্যাচ হেরে গিয়ে, এটাই এখন চর্চার বিষয় হলেও এর পিছনের লড়াইটা চর্চাকারীরা জানেন না। জেনে নিয়ে বরং ‘বিশ্বকাপে হারলে ছেলেদের বাড়ি জ্বালানো হলে মেয়েদের ক্ষেত্রেও তা হবে বা হবে না’— এই জাতীয় বিতর্ক উসকে দেবেন। ভিড় বাসে লেডিজ সিটে মহিলাদের বসতে দেখে যে সব পুরুষ নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রচেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন, তাঁদের যা বলি, এখানেও তা-ই বলছি, মেয়েদের একটু দয়াই অন্তত দেখান, তা হলে তাদের লড়াই একটু সহজ হতে পারে।

শম্পা ঘোষ হরিপাল,

হুগলি

গল্প মনে হয়

সালটা ১৮৭৫। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের অন্যতম নেতা বিপিনচন্দ্র পাল তখন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। এক বার এক ছাত্রের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কিছু একটা অভিযোগ এল। পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের পরোয়ানা নিয়ে কলেজে এল ছেলেটিকে শনাক্ত করবে বলে। কলেজের অধ্যক্ষ সাটক্লিফ সাহেবের কাছে এ খবর পৌঁছনোমাত্র তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে পুলিশের লোককে কলেজের বাইরে যেতে বলেন। ম্যাজিস্ট্রেটের পরোয়ানার দোহাইও মানেননি। অধ্যক্ষ বলেন, “আমার কলেজের কর্তা আমি, আমার ছেলেরা যতক্ষণ কলেজে থাকে ততক্ষণ তারা আমার এলাকার অধীন, এখানে ম্যাজিস্ট্রেট তো ছোটকথা, লাটসাহেবেরও কোন হুকুম চালাইবার এক্তিয়ার নাই। বিলাতের অক্সফোর্ড কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহাই নিয়ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভিতরে বাহিরের কোন ম্যাজিস্ট্রেটের কিছু করিবার অধিকার নাই।” কথাগুলো বিপিনচন্দ্র পাল লিখেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে। এমন ছাত্রবৎসল, প্রশাসনিক কর্তব্যে অটল এবং প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কলেজ-অধ্যক্ষের কথা আজকের দিনে গল্প বলেই মনে হয়।

শিবাশিস দত্ত

কলকাতা-৮৪

দুটি ভুল

‘রাজনীতি’ কলামে (২-৮) প্রকাশিত হয়েছে, ১৯৭৯ সালে মোরারজি সরকার তৈরি হয়। এটি ভুল। হবে ১৯৭৭ সাল। ১৯৭৯’তে চরণ সিংহ প্রধানমন্ত্রী হন। সিপিএম অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে, অর্থাৎ মোরারজি সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। আর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর ওই আসনে জয়ী হয় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি। সিপিএমের জন্ম ১৯৬৪ সালে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE