Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

দেবতার ঘট উলটে যাওয়া, ফোটো পড়ে ভাঙা, সিঁদুর পড়ে যাওয়ার মতো হাজার কুসংস্কারের উৎসমুখ আর নিত্যনতুন অত্যাচার-অবিচার খুঁজে সেগুলোর প্রয়োগ দেখানোর মাধ্যম সিরিয়ালগুলো। অবিলম্বে আইন করে ওগুলো বন্ধ করা দরকার।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০০:১৪

ধারাবাহিক কুসংস্কার

পারিবারিক হিংসা, বিষ প্রয়োগ, কিডন্যাপিং, খুন লেগেই আছে কিছু চ্যানেলের সিরিয়ালে। হাজার অত্যাচারের মধ্যে কাঁসর-ঘণ্টা-শাঁখ বাজিয়ে দেবীমূর্তি হয়ে সে সবের প্রতিবিধান করেন নায়িকা। প্রধান অস্ত্র সামাজিক সংগ্রাম নয়, ৪৯৮এ নয়, শুধুমাত্র সিঁদুর ম্যানিয়া। দেবতার ঘট উলটে যাওয়া, ফোটো পড়ে ভাঙা, সিঁদুর পড়ে যাওয়ার মতো হাজার কুসংস্কারের উৎসমুখ আর নিত্যনতুন অত্যাচার-অবিচার খুঁজে সেগুলোর প্রয়োগ দেখানোর মাধ্যম সিরিয়ালগুলো। অবিলম্বে আইন করে ওগুলো বন্ধ করা দরকার। সিঁদুর ম্যানিয়া ছড়ানোর সময় মনে রাখতে হবে কোটি কোটি মানুষ ওটি ব্যবহার করেন না।

অনিল কিশোর ভট্টাচার্য, চুঁচুড়া, হুগলি

ভুল ভাষা

পারিজাত ঘোষের প্রতিবেদন (‘জলয়োজন, ফল‌্সপ্রবণ...’, ২৮-৭) এবং সুকান্ত চৌধুরীর প্রবন্ধের (‘আমরা মেনে নিই বলেই...’, ১-৮) পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠির অবতারণা। প্রথম প্রতিবেদনে যে সংবাদটির উল্লেখ করা হয়েছে, এক জন অনলাইন অনুবাদক হিসাবে নিশ্চিত ভাবে জানাতে চাই, সে অনুবাদ মানুষের নয়, যন্ত্রের। আরও অনুমান করা যায়, সেটি কোনও বাংলাভাষী অনুবাদকের কাজ নয়। এ ছাড়াও কোনও প্রুফরিডারকে অনুবাদ-পরবর্তী সংশোধনের ভার দেওয়া হয়নি (যা এ ক্ষেত্রে অবশ্যকর্তব্য)। হলে এ ঘটনা ঘটত না। যেহেতু আউটসোর্সিং-এর বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে, এবং অনুবাদের নিম্নমানের দিকটি (নিম্নমান না বলে প্রলাপ বলাই ভাল) তুলে ধরা হয়েছে, তাই এই বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই। বিশ্বায়নের যুগে তথ্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই তথ্য (সে চিকিৎসাগত বিষয়ে বিভিন্ন ওষুধের উপর গবেষণাসংক্রান্ত নথিপত্র হোক বা আইনি ঘটনার বিবরণ অথবা অন্য যে কোনও বিষয়) আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ করার এক বিপুল কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে বেশ অনেক বছর ধরেই এবং এটি সম্পূর্ণ ভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলির মাধ্যমে (সে সংস্থা দেশীয় বা বিদেশি হতে পারে) প্রকৃত গ্রাহক বা ক্লায়েন্টের থেকে অনুবাদকদের কাছে আসে, অনুবাদক তা অনুবাদ করেন এবং প্রুফরিডার সেই অনুবাদ সংশোধন (যদি প্রয়োজন হয়) করেন অথবা পরীক্ষা করে দেখে নেন। এটাই দস্তুর। পরিতাপের বিষয়, কোনও কোনও সংস্থা অনুবাদকদের পারিশ্রমিকের সঙ্গে রফা করেন এবং কম পারিশ্রমিকে নিম্নমানের বা অনভিজ্ঞ অনুবাদকের সঙ্গে চুক্তি করেন। কখনও কখনও সেই অনুবাদকের মাতৃভাষা এবং অনূদিত ভাষা এক কি না অথবা অনুবাদক সেই ভাষায় পারদর্শী কি না, সে খবরও নেন না। এবং সেই ভাষাটি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাবিহীন অনুবাদক যান্ত্রিক সাহায্য নিয়ে (প্রসঙ্গত চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষেত্রে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তিও, এসেছে অনেক রকমের সফটওয়্যার, অনুবাদকদের জন্যই) অনুবাদ করেন। বা বলা ভাল অনুবাদ করেন না, বরং কপি-পেস্ট করেন। অনুমান, এ ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে।

কিন্তু এই পরিণতি থেকে বাঁচার একটি উপায় ছিল— প্রুফরিডারকে দিয়ে তা দেখিয়ে নেওয়া। এই কাজের সঙ্গে যাঁরা পূর্ণ সময়ের জন্য যুক্ত এবং যাঁদের এটি প্রধান জীবিকা, তাঁরাই জানেন কাজটি কতখানি শ্রমসাধ্য এবং এতে কতখানি একাগ্রতা প্রয়োজন। কাজেই যে পেশাগত ত্রুটির সমালোচনা সুকান্তবাবু করেছেন, তা মেনেও জানাতে চাই যে, পেশাগত ত্রুটি কম-বেশি সব পেশাতেই আছে। কিন্তু সবাইকে এক দোষে দুষ্ট করা যায় না। যে সফটওয়্যারটির উদ্ভব হয়েছে শুধু মাত্র শব্দের অর্থ খোঁজার জন্য, তাকে যদি সম্পূর্ণ একটি অনুচ্ছেদ বা বাক্য অনুবাদের ভার দেওয়া হয়, সেখানে ভুল হবেই। এবং এ ভুল প্রতারণার নামান্তর এবং একই সঙ্গে যে ক্লায়েন্ট বা গ্রাহক এই কাজটি দিয়েছেন, তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে অনুবাদের পরে প্রুফরিডিং কেন করানো হয়নি? ব্যয়সংকোচ, না কি সরকারি কর্তাদের উদাসীনতা?

সুকান্তবাবুর ‘বঙ্গভাষা ক্লেশ নিবারণ প্রস্তাবের’ সঙ্গে একমত হয়ে বলি, আমরা এ পার বাংলার বাঙালিরা কি ভাষার বিষয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগি? অকারণে বাংলা বাক্যের মধ্যে ইংরেজি শব্দের অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধারাবাহিকে অথবা সংবাদ চ্যানেলগুলির পরিবেশিত খবরে অহরহ ভুল বাংলা বা অজস্র ইংরেজি শব্দের/ বাক্যের অহেতুক ব্যবহার হয়ে চলেছে, যা আমরা অবচেতনে অনুকরণ করছি।

পরিশেষে বলি, এ হয়তো বেনোজল, অন্তত সে আশাই রাখি। বাংলাভাষা আবার নিজের গরিমা ফিরে পাবে। কিন্তু বেনোজলে মহীরূহের শিকড়ও পচে যায়। তাই ভয় হয় পচনের। ভয় হয় বাংলা ভাষার প্রতি এই উদাসীনতা-হীনম্মন্যতার স্রোতপ্রবাহে হয়তো হারিয়ে ফেলব বাংলা মাটির থেকে উদ্ভূত অনেক-অনেক সুমিষ্ট, সরস বাংলা শব্দ।

সুস্মিতা ভট্টাচার্য, কলকাতা

স্কুলেই শিখুক

ভিন্‌রাজ্যে কাজে গিয়ে এ রাজ্যের উঠতি বয়সের কিশোরদের নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যতিক্রমী কোনও ঘটনা নয়। এই কিশোরদের গরম লোহার রড বা বিড়ি-সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ বার বার উঠে আসছে। কিছু দিন আগে পূর্ব বর্ধমানের এক অনাথ কিশোরকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসতে হয় গুজরাত থেকে (বর্ধমান জেলার পৃষ্ঠা, ১০-৮)। জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জামালপুর, গলসি, পূর্বস্থলী, মেমারি, কাটোয়া, আউশগ্রাম প্রভৃতি জেলার অল্প বয়সি কিশোরদের ভিন্‌রাজ্যে গিয়ে কাজ করার প্রবণতা বেশি।

জামালপুর ব্লক অঞ্চলের এক জন শিক্ষক হিসাবে এ ব্যাপারে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যখন এই অঞ্চলের এক হাই মাদ্রাসায় প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই, সে বছর দেখলাম আমাদের মাদ্রাসায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা মোটামুটি থাকলেও ছাত্র মোটে দুটি! খোঁজ নিয়ে জানলাম, পঞ্চম শ্রেণিতে এই ক্লাসে অনেকগুলি ছাত্র ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে সব ছাত্র পড়া ছেড়ে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, গুজরাত-সহ বিভিন্ন রাজ্যে সোনা-রুপোর কাজে চলে গেছে। পরে নিচু ক্লাসের ছাত্রদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে গিয়ে দেখলাম, ওদের অনেকেরই স্বপ্ন একটু বড় হয়ে এ ভাবেই বাইরের রাজ্যে কাজে যাওয়া। এক দিন এক ছাত্র তো সরাসরি বলে ফেলল, ‘স্যর বড় হয়ে কিছু তো করতে হবে, আমাদের গ্রামে গিয়ে দেখবেন কত জন বাইরে গিয়ে পাকা বাড়ি করেছে, গাড়ি কিনেছে, দামি দামি মোবাইল ব্যবহার করছে।’ একেবারে বাস্তব। যদিও এ প্রবণতা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। কিন্তু এই ছাত্রগুলি পড়াশুনায় মধ্য বা নিম্ন মেধার। অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। অত্যন্ত দরিদ্র, অভাবী বা ক্ষুদ্র চাষি, শ্রমিক পরিবারের সন্তান এরা। পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটা যেন এদের কাছে সময়ের অপচয়।

আর সত্যি তো, উচ্চশিক্ষিত হয়ে এ দেশে চাকরির তো কোনও নিশ্চয়তা নেই। ইংরেজিতে এম এ, বি এড করেও বেসরকারি সংস্থায় ঘর মোছার চাকরি, সেই আত্মগ্লানি থেকে আত্মঘাতী (‘ঘর মোছার চাকরি, আত্মঘাতী’, ১০-৮)।

এমতাবস্থায় প্রয়োজন বৃত্তিমূলক শিক্ষার। বিভিন্ন হাতের কাজের মাধ্যমে ছাত্রদের দক্ষ করে তুলতে হবে, তা সে কাঠের কাজ, সেলাইয়ের কাজ, বিভিন্ন ধরনের মিস্ত্রির কাজ— যা-ই হোক না কেন। যাতে ছাত্রটি বিদ্যালয়ের মধ্যে থেকে ভবিষ্যৎ জীবনের নিশ্চয়তা পায়। আমাদের মাদ্রাসায় দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ছাত্র পড়াশোনার মাঝপথেই সোনা-রুপোর কাজে চলে যাচ্ছে। আমাদের মাদ্রাসাতেই যদি বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সোনা-রুপোর ডিজাইন-সহ বিভিন্ন কাজের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে ওই ছাত্ররা অন্তত স্কুলছুট হবে না। সে এখানে কাজ শিখে সরাসরি পরিণত বয়সে কাজে যোগ দিতে পারবে।

ফিরোজ আলী কাঞ্চন, টেরাপুর পল্লিমঙ্গল হাই মাদ্রাসা, বর্ধমান

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Letters To Editor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy