Advertisement
১১ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। তাঁর স্থান সবার উপরে। বর্তমান সমাজে কতিপয় শিক্ষক শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন।কিন্তু আদর্শ শিক্ষকের চালচলন, আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি বিষয়কে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীই নয়, সাধারণ মানুষও সমীহ করে চলেন এবং অনুকরণের চেষ্টা করেন।

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

রুপোয় সংগীত নয়

অলিম্পিক্স-এ রুপো বা ব্রোঞ্জ জিতলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হলেও জাতীয় সংগীত বাজানো হয় শুধুমাত্র সোনা জয়ী প্রতিযোগীর দেশের (‘জাতীয় সংগীত বিতর্ক: পক্ষে মিলখা, বিপক্ষে চুনী’, ২৫-৮)। সুতরাং সিন্ধু বা সাক্ষী পদক জেতার পর ভারতের পতাকা উড়লেও স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের জাতীয় সংগীত বাজেনি। অভিনব বিন্দ্রা জেতার পর বেজেছিল ২০০৮-এ বেজিঙে।

দেবব্রত ঘোষ কলকাতা-২৮

শিক্ষক দিবস

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। তাঁর স্থান সবার উপরে। বর্তমান সমাজে কতিপয় শিক্ষক শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন। কিন্তু আদর্শ শিক্ষকের চালচলন, আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি বিষয়কে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীই নয়, সাধারণ মানুষও সমীহ করে চলেন এবং অনুকরণের চেষ্টা করেন। আর্থিক দিক থেকে শিক্ষকরা এখন যে অবস্থায়, পূর্বে তার ধারেকাছেও ছিলেন না; তথাপি জ্ঞান বিতরণ ও রাজ্যের সম্মান রক্ষায় কিছুমাত্র কার্পণ্য করেননি।

বুনো রামনাথের কথা অনেকেরই জানা। কারও অনুগ্রহ তিনি লাভ করবেন না; অথচ নিজ কর্তব্য থেকে এক পা-ও বিচ্যুত হবেন না। জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। নগরের প্রান্তে কুঁড়েঘরে বাস; তেঁতুল পাতা সিদ্ধ খেয়ে জীবনধারণ। স্ত্রীও স্বামীর প্রতি সহমতা। চাহিদার আগুনে ঝাঁপ না দিয়ে অল্পেতেই সন্তুষ্টির জীবন। তৎকালীন ভারতবর্ষে রাজাদের মধ্যে প্রায়শই বসত তর্কযুদ্ধের আসর। রাজ্যের মান-সম্মান নির্ভর করত এর উপর। এ রকম এক তর্কযুদ্ধের আহ্বান পেয়ে মহারাজ দুরুদুরু চিত্তে হাজির হলেন রামনাথের কুঁড়েঘরে। রামনাথকে তিনি নিজ উদ্বেগের কথা বলেন। রামনাথ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশ্বাস দিলেন। রামনাথ তর্কসভায় উপস্থিত থেকে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে শুধুমাত্র মহারাজের সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখেননি, উচ্চস্থানে উন্নীত করলেন। আনন্দিত মহারাজ তাঁকে সাতমহলা বাড়ি এবং নিষ্কর জমি দানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি তা বিনীত ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। এঁরাই হলেন আদর্শ শিক্ষক।

ভারতের মহান শিক্ষক সর্বেপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর তিরুত্তানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে তিনি গবেষণাপত্র জমা দিয়ে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১৮ সালে মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে অধ্যাপনায় যোগদান করেন। ১৯৩১ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৩৩ এবং ১৯৩৭, পর পর দু’বার তিনি নোবেল প্রাপক হিসাবে মনোনীত হলেও কোনও এক অজানা কারণে তিনি তা লাভ করতে সমর্থ হননি। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর অবশ্য তিনি ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৫২ সালে তিনি স্বাধীন ভারতের উপরাষ্ট্রপতির পদে আসীন হন এবং ১৯৬২ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ পদ রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। ওই বছরই তাঁর গুণমুগ্ধ কতিপয় ছাত্র তাঁর জন্মদিন পালন করার জন্য অনুমতি চাইলে তৎক্ষণাৎ তিনি তা নামঞ্জুর করেন। তখন তাঁরা আবেদন রাখেন যে, আপনি আমাদের আদর্শ, মহান শিক্ষক। আপনার মতো অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এখনও শিক্ষক সমাজ অবহেলিত। তাঁদের সকলের প্রতি সম্মান জানাতে ৫ সেপ্টেম্বর আমরা ‘শিক্ষক দিবস’ পালনে ব্রতী হয়েছি। দয়া করে অনুমতি দিন। সমগ্র শিক্ষক সমাজের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যই ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস উদ‌্‌যাপনের অনুমতি দেন রাধাকৃষ্ণণ। আজ তিনি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তাঁর মহান আদর্শ ও কর্মের মধ্যে বিরাজ করছেন। সারা ভারতে ৫ সেপ্টেম্বর দিনটি প্রতি বছর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে।

মোহনলাল মণ্ডল (শিক্ষারত্ন) প্রশস্ত, ডোমজুড়, হাওড়া

শিক্ষা সহায়ক

শিক্ষক নন। শিখতে হলে শিক্ষা সহায়ক চাই। শিখে আমরা নিতে পারব। চাই শুধু সহায়তা। ক্লাসে এসে বোর্ডের ওপর খসখস করে নিউটনের গতিসূত্র লিখে, ‘দেখো এ বার অনুশীলনীর চার নম্বর অঙ্কটা কী ভাবে করতে হয়’ বলেই গতিসূত্র শেখানোর কাজটি আর সারা যাবে না। দেখিয়ে দিতে হবে হাতে-কলমে কাকে বলে বাধাহীন বস্তুর গতি। বাধা না পেলে আবহমান কাল বস্তু কী ভাবে গতিশীল থাকে। আমাদের অঙ্ক আমরা তার পর করে নেওয়ার কথা ভাবব। সবুজ আলোয় গাছ সালোকসংশ্লেষ করতে পারে না, এটা কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। কেন পারে না, তা দেখিয়ে দিতে হবে। তবেই বোঝা যাবে গাছের পাতা সবুজ কেন। ফুল কেন লাল, কমলা, হলুদ বা সাদা।

আসলে, নোটবুকে টুকে রাখা প্রশ্নের উত্তর মেজদাকে খুঁচিয়ে জেনে নেওয়াটা কোনও পড়াশোনা নয়। এতে শেখা হয় না। শুধু অন্যের জ্ঞানে ভাগ বসানো হয়। ক্লাসে এক ঘণ্টা ঝাড়া বকবক করে শিক্ষক মহাশয় ‘যাহা পড়াইয়া’ গেলেন, সেটা যতই মনোমুগ্ধকর হোক না কেন, তাতে কাজের কাজ হয় না। এ রকম লেকচার-নির্ভর একটি ক্লাসের পর ছেলেমেয়েদের ছোট্ট কুইজ করে পরের ক্লাসে দেখা গেছে, তারা শতকরা দশ ভাগ প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছে না। মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী পদার্থবিদ কার্ল ওয়াইম্যান। শেখানোর পদ্ধতি নিয়ে তিনি যা বলেছেন, তার নিহিতার্থ, শিক্ষক নন, অ্যাক্টিভিটি-নির্ভর শেখাটাই আসলে কাজের শেখা। সেখানে শিক্ষকের ভূমিকা গৌণ।

কোনও একটি বিষয় পড়ুয়াদের দিয়ে দিতে হবে। হতে পারে সেটা গাছের খাবার বানানোর কৌশল বা মহাকাশে বস্তুসমূহের আকর্ষণের রহস্য। পড়ুয়ারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ভাববে, ব্যাপারটা কী। তাদের বিবেচনাবোধ, ভাবনার ক্ষমতা নিয়ে তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। শিক্ষা সহায়তা যিনি দেবেন, তিনি তাদের প্রতিটি ভাবনার মূল্যায়ন করে, বিজ্ঞানে গৃহীত ভাবনার ধারণাটি দেবেন। মানে তাদের ঠিক পথে নিয়ে আসবেন তখনই, যেখানে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে। আগে থেকে পথের সন্ধান দেওয়া শিক্ষকের কাজ হতে পারে, শিক্ষা সহায়কের নয়।

শিক্ষার মধ্যে দিয়ে আমরা চাই পরনির্ভরতা কাটাতে। নিজেদের শেখার উপযোগী করে তোলাটা স্কুল থেকে শুরু হতে পারে। পড়ুয়া সেখান থেকেই ভাবতে শিখবে সে নিজে শিখতে পারে। শিক্ষাকে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করে বিষয়কেন্দ্রিক করে তোলাটাই স্কুলের প্রধান কাজ। এখানে ভাবনার ক্ষেত্রে একটি আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। শিক্ষক কোনও মডেল নন। তিনি আর পাঁচটা পেশার মানুষের মতোই এক জন পেশাদার। তাঁর দোষ-গুণ, নিজস্ব বিশ্বাস-অবিশ্বাস থাকবে। সমাজ তাঁর দিকে প্রত্যাশা আর বিভ্রান্তির চশমা পড়ে তাকালে তাঁকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে ভ্রান্ত ধারণা। যেগুলো রোজ ভাঙতে থাকবে। বাস্তবে এটাই ঘটছে। আর শিক্ষার ওপর থেকে আমাদের ভরসা চলে যাচ্ছে। এটা শিক্ষকদের ওপরেও বাড়তি চাপ তৈরি করছে। নিজেদের সাফল্য প্রমাণ করতে তাঁরাও উন্মুখ হয়ে থাকছেন। কৃতী ছাত্রছাত্রী তৈরির সংখ্যার নিরিখে বিচার হচ্ছে শিক্ষকের মান। তাঁর পসারও। সেটার প্রভাবও ভাল হচ্ছে কি?

অন্য দিকে আছে পড়ানোর পদ্ধতিগত দিকটি। অ্যাক্টিভিটি-ভিত্তিক পড়াশোনার জন্য সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকের শিক্ষাসামগ্রী প্রয়োজন। বাজার চলতি ‘টিচিং লার্নিং মেটিরিয়াল’ নয়। দু’মলাটে জ্ঞান ভরে দেওয়া বইও নয়। এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে পারলেও পাশ, না পারলেও পাশ। মনোযোগ আর চেষ্টার মাপকাঠিতেই বিচার হবে কে পাশ কে ফেল। এই মূল্যায়ন সহজ হবে না। কঠোর ভাবে বিচার্য হবে পড়ুয়ার অংশগ্রহণ। বাধ্যতামূলক ভাবে তাদের কাজ করতে হবে। পরীক্ষায় নয়, কড়াকড়ি হবে ক্লাসের পড়াশোনায়। সেখানে ফাঁকি দিলে কোনও মাপ নেই। পাশ ফেল নিয়ে এই যে টানাপড়েন, তারও দিশা মিলতে পারে এই ব্যবস্থায়।

অরণ্যজিৎ সামন্ত কলকাতা-৩৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhinav Bindra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE